চুয়াডাঙ্গায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে চাঁদাবাজি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার ছয়জনকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে আদালত। গত সোমবার রাতে তাঁদেরকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত থেকে তাঁদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের কেদারগঞ্জ নতুন বাজারপাড়ার মৃত গোলাম হোসেনের ছেল জুবায়ের হোসেন জিম (১৮), একই এলাকার মনোর ছেলে মারুপ হাসান আপন (১৭), জীবননগর বাসস্ট্যান্ডপাড়ার মৃত আবু শেকের ছেলে শিমরান হোসেন (১৭), মুন্সিপাড়ার কিতাব হোসেনের ছেলে মেহেদি হাসান রাকীব (১৮), পলাশপাড়ার আনোয়ার হোসেনের ছেলে রাইহান উদ্দীন (১৭) ও মহিলা কলেজপাড়ার আশরাফুল ইসলামের ছেলে ইমরান খান (১৭)।
জানা যায, চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের ৮ম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে কৌশলে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে সোনার গহনাসহ নগদ টাকা হাতিয়ে নেয় কয়েকজন যুবক। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পিতা বাদী হয়ে গত সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করে। ওই রাতেই সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত। এদিকে ওই ছয়জনকে গ্রেপ্তারের খবর কেদারগঞ্জ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ন্যাক্কারজনক এই কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন সাধারণ মানুষ।
নাম প্রাকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানান, গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনসহ ১০-১৫ জনের ওদের একটি গ্রুপ আছে। যারা স্কুলের গণ্ডি না পেরোলেও এলাকার মধ্যে বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ায়। পাড়া-মহল্লার মধ্যে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, মাদক সেবনসহ অধিক রাত অবদি বাড়ির বাইরেই থাকে এই গ্রুপের সদস্যরা। তাছাড়া মহিলা কলেজ, কেদারগঞ্জ বাজার, আদর্শ স্কুল জীবননগর বাসস্ট্যান্ড, সবুজপাড়াসহ আশপাশের এলাকার স্কুলের কোমলমতি ছাত্রীদেরসহ কলেজগামী ছাত্রীদেরও উত্যাক্ত করতো। তাদের ভয়ে প্রতিবাদও করতে পারেনি অনেক পরিবার। তবে পরিবারের সতর্কতার অভাবে এদের এই বেপরোয়া আচরণ বলে ধারণা করেন সাধারণ মানুষ।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মাস পূর্বে ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় কেদারগঞ্জ নতুন বাজার পাড়ার জুবায়ের হোসেন জিমের। পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই স্কুলছাত্রীকে কৌশলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তলে জুবায়ের। পরে জুবায়ের তার ১৩-১৪ জন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পুনরাই ওই অনৈতিক সম্পর্কের ভিডিওসহ মোবাইলে ছবি তুলে রাখে। এ ঘটনার পর থেকেই ওই স্কুলছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করে তারা। প্রথম দিকে কয়েক দফায় ১৬ হাজার টাকাসহ ওই স্কুলছাত্রীর স্বর্ণের চেইন, হাতের ব্রেসলেট ও একটি সোনার আঙটিসহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার স্বর্ণের গহনা হাতিয়ে নেয় তারা। গত সোমবার আবারও তারা ওই স্কুলছাত্রীকে মহিলা কলেজের পাশে আসামি জুবায়েরের মায়ের ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করে। দাবি অনুযায়ী টাকা না দিলে ভিডিওসহ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।
বিষয়টি স্কুলছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পেরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের নিকট জানান। পরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সদর থানা পুলিশের একটি টিম কেদারগঞ্জ এলাকার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করেন।
