ইপেপার । আজ সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আকাঙ্খা : অচলাবস্থার অবসান হোক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫০:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ৪৭১ বার পড়া হয়েছে

মাত্র তিন মাসের কিছু বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বলতে গেলে দশম সংসদের পুরো মেয়াদেই একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছে সর্বমহলে। দশম সংসদটি একতরফাভাবে গঠিত হওয়ায় সেটি দেশে-বিদেশে সর্বজনস্বীকৃত হতে পারেনি। অতঃপর আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে- এ ধরনের একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে সর্বসাধারণের মাঝে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ নির্বাচন নিয়ে জনমনের সংশয় দূর হচ্ছে না। নির্বাচনটি আদৌ অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা, হলে তা কতটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে, সে প্রশ্নও রয়েছে জোরালোভাবে। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারই সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে যে অনিয়ম হবে না, তা বলা যাবে না। খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারই যখন এমন কথা বলেন, তখন সাধারণ মানুষ আর কতটা আস্থা রাখতে পারে? সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপরের মন্তব্যটি উদ্ধৃত করে বুধবার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যে মডেল তৈরি করেছে, তাতে মনে হয় না জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারবে। সুজন সম্পাদকের কথার রেশ ধরে বলা যায়, দেশের রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত কোনো শুভ লক্ষণ দেখা দেয়নি, যাতে আশা করা যেতে পারে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, বিরোধী পক্ষের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না এবং সংবিধান মোতাবেকই নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে দেশের অন্যতম বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি তাদের এক সমাবেশ থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কয়েকটি পূর্বশর্ত আরোপ করেছে। এসব শর্তের মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার কথাও রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সরকারপক্ষ বিএনপির এসব শর্ত পূরণ করবে না এবং সেভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তারা বদ্ধপরিকর। এমতাবস্থায় একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বৈকি। এ অচলায়তন ভাঙা কঠিন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলোর রাজনীতিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ওদিকে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের মধ্যে একটা ঐক্য প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া বিএনপি পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে। বিরোধীদলীয় এ ধরনের বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে সেই ঐক্যবদ্ধ শক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে পারবে কিনা, তা-ও বলা যাচ্ছে না। সবটা মিলিয়ে এক অনিশ্চিত পথে হাঁটছে জাতি।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বলেছেন, বাংলাদেশে নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এ বক্তব্য অবশ্য দেশি-বিদেশি সব মহলের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। বস্তুত দেশে একটি স্থায়ী স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। এ অবস্থায় সরকার, সরকারি দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে সংকটের নিষ্পত্তি করবে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে দেশবাসী।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আকাঙ্খা : অচলাবস্থার অবসান হোক

আপলোড টাইম : ০৯:৫০:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মাত্র তিন মাসের কিছু বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বলতে গেলে দশম সংসদের পুরো মেয়াদেই একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছে সর্বমহলে। দশম সংসদটি একতরফাভাবে গঠিত হওয়ায় সেটি দেশে-বিদেশে সর্বজনস্বীকৃত হতে পারেনি। অতঃপর আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে- এ ধরনের একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে সর্বসাধারণের মাঝে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ নির্বাচন নিয়ে জনমনের সংশয় দূর হচ্ছে না। নির্বাচনটি আদৌ অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা, হলে তা কতটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে, সে প্রশ্নও রয়েছে জোরালোভাবে। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারই সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে যে অনিয়ম হবে না, তা বলা যাবে না। খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারই যখন এমন কথা বলেন, তখন সাধারণ মানুষ আর কতটা আস্থা রাখতে পারে? সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপরের মন্তব্যটি উদ্ধৃত করে বুধবার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যে মডেল তৈরি করেছে, তাতে মনে হয় না জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারবে। সুজন সম্পাদকের কথার রেশ ধরে বলা যায়, দেশের রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত কোনো শুভ লক্ষণ দেখা দেয়নি, যাতে আশা করা যেতে পারে নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, বিরোধী পক্ষের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না এবং সংবিধান মোতাবেকই নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে দেশের অন্যতম বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি তাদের এক সমাবেশ থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কয়েকটি পূর্বশর্ত আরোপ করেছে। এসব শর্তের মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার কথাও রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সরকারপক্ষ বিএনপির এসব শর্ত পূরণ করবে না এবং সেভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তারা বদ্ধপরিকর। এমতাবস্থায় একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বৈকি। এ অচলায়তন ভাঙা কঠিন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলোর রাজনীতিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ওদিকে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের মধ্যে একটা ঐক্য প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া বিএনপি পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে। বিরোধীদলীয় এ ধরনের বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে সেই ঐক্যবদ্ধ শক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে পারবে কিনা, তা-ও বলা যাচ্ছে না। সবটা মিলিয়ে এক অনিশ্চিত পথে হাঁটছে জাতি।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বলেছেন, বাংলাদেশে নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এ বক্তব্য অবশ্য দেশি-বিদেশি সব মহলের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি। বস্তুত দেশে একটি স্থায়ী স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। এ অবস্থায় সরকার, সরকারি দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে সংকটের নিষ্পত্তি করবে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে দেশবাসী।