বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের মূল্য দ্রুত বাড়ানোর সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হিসাব কষে বলা হয়েছে, এই তিন খাতে যদি মূল্য সমন্বয় তথা দাম বৃদ্ধি না করা হয়, তবে আগামী অর্থবছরে এখানে ৫০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা শুধুমাত্র ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করতে হবে। তাই দ্রুত বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মূল্য সমন্বয় না করা হলে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ খাতেই ভর্তুকি দিতে হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো না হলে এলএনজি (ঘনীভূত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি মূল্য পরিশোধ এবং প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ভর্তুকি এবং অন্যান্য ভর্তুকি বাবদ আগামী অর্থবছরে ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন পড়বে। একইভাবে সারের মূল্য বৃদ্ধি না করা হলে এই খাতে ভর্তুকি গুণতে হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী অর্থবছরে যদি বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের মূল্য সমন্বয় না করা হয়, তাহলে উল্লেখিত পরিমাণ ভর্তুকি কার্যকর হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানো হলে ভর্তুকি পরিমাণ কমতে পারে। সবকিছু নির্ভর করবে এই তিন খাতে মূল্য সমন্বয় কতখানি করা হয়। তবে এখনই মূল্য সমন্বয় না করা হলেও বাজেট শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের শুরুতে দাম বাড়ানোর দিকে সরকারকে এগোতেই হবে। এদিকে অন্যান্যের মধ্যে নতুন বাজেটে খাদ্য খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের হিসাব মতে, চলতি অর্থবছরে খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩২ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে প্রায় ৭৫ শতাংশ খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে খাদ্যশস্য বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩২ দশমিক ৭৫ লাখ মেট্রিক টন।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়, প্রতি বছরই ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ, কৃষি ও জ্বালানি খাতে বর্ধিত হারে ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন পড়ছে। প্রায় প্রতি বছরই মূল বাজেটে বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে। যেমন-চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় ১২ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরে এই দুই খাতে দেয়া লাগছে ৫৩ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। সূত্রে জানা যায়, করোনা-উত্তর চাহিদা বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেল ও এলএনজির মূল্য বৃদ্ধি এবং সবশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভর্তুকির চাপ বাড়ছে। এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে ভর্তুুকির চাপ আরো যে বাড়বে তা নিশ্চিত বলা যায়। এই চাপ অর্থনীতি কিভাবে নিতে পারবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে। অর্থ বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার হচ্ছে ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণÑ এ তিন খাতে একত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুুলনায় ২৭ হাজার ৯১০ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে এ তিন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা।