
সমীকরণ ডেস্ক: এই সেই শিশু। সিরিয়ার যিশু! দীর্ঘ কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধের ক্ষত আর রক্তের আলপনা আঁকা রয়েছে যার চোখে-মুখে। সারা গায়ে। তার শরীর বেয়ে রক্ত ঝরছে, ঝরে পড়ছে। যেন ক্রুশবিদ্ধ যিশু!
সিরীয় শহর আলেপ্পোয় ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে থেকে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। আকাশে প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের সেনাবাহিনী আর রুশ বোমারু বিমানের বিকট শব্দ, মুড়ি-মুড়কির মতো যত্রতত্র বোমা পড়ার শব্দ, গোলাগুলির শব্দ, সবকিছুকে ছাপিয়েও ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে ভেসে আসছিল ওই রক্তাক্ত শিশু, সিরিয়ার যিশুর আর্তচিৎকার। আর তা শুনেই কেউ একজন তাকে ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে খুঁজে বের করেন। তুলে আনেন। এনে বসিয়ে রেখে যান একটা কমলা রঙের চেয়ারে। শিশুটির দেখভালের ব্যবস্থা কীভাবে করা যায়, তার খোঁজখবর নিতে। একাকী শিশু, সিরিয়ার যিশু সেই সময় একটুও ভয় পায়নি। কাঁদেনি। কাঁদতে কাঁদতে পাড়া জড়ো করেনি। একা বসে বসে শিশুটি তার মাথা থেকে, চোখ থেকে, কান থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়া রক্তের স্রোত মুছেছে। ঘষে ঘষে তার গা থেকে রক্তের দাগ তোলার চেষ্টা করেছে। তুলেছে। আত্মমগ্ন হয়ে। কিছুটা পেরেছে, কিছুটা পারেনি। তাকে যে দূর থেকে দেখছে ভিডিও ক্যামেরার চোখ, সিরিয়ার যিশু তা খেয়ালও করেনি। সেই ভিডিও পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়ায়, গোটা বিশ্ব চাক্ষুষ করেছে, গত কয়েক দশক ধরে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধে দীর্ণ সিরিয়ার। কয়েক মাস আগে আর এক সিরীয় শিশু গোটা দুনিয়ার নজর কেড়ে নিয়েছিল। তার নাম আয়লান কুর্দি। বাবার হাতের ফাঁক গলে উথালপাথাল সমুদ্রে পড়ে গিয়েছিল শরণার্থী ওই শিশু। পরে তার একরত্তি দেহটা ভেসে এসেছিল তুরস্কের বদরামের সমুদ্রসৈকতে। ভেজা বালির মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল আয়লানের। লাল জামা, নীল প্যান্ট পরা। পায়ে খুদে খুদে জুতো। ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে ধুয়ে দিচ্ছিল তার মুখ। এক তুর্কি পুলিশ কোলে তুলে নিয়েছিলেন প্রাণহীন একরত্তি শরীরটাকে। সেই ছবি ভাইরাল হয়ে যায় গোটা দুনিয়ায়। আলেপ্পো শহরের লাগোয়া এলাকা কাতারজি বেশ কিছু দিন ধরেই দখল করে রেখেছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। সেখানেই ঘাঁটি গেড়ে গোটা সিরিয়া ও তার আশপাশের দেশগুলোতে নাশকতামূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে সিরিয় বিদ্রোহীরা। অভিযোগ, তাদের পিছনে মদদ রয়েছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসের। যাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকারের সেনাবাহিনী যুঝতে পারছে না, এই যুক্তিতে সিরিয়ার আকাশসীমায় ঢুকেছিল রুশ বোমারু বিমান, গত বছরের শেষাশেষি। তার পর থেকে গত এক বছর ধরে কার্যত নিরবচ্ছিন্নভাবে সিরিয়ায় হানাদারি চালিয়েছে রুশ বোমারু বিমান। যার ফলে হারিয়ে গেছে একের পর এক গ্রাম। ধূলিসাৎ হয়ে গেছে মফস্বল, শহর। তার আগে গত কয়েক দশক ধরে আকাশে হামলা চালিয়েছিল সিরীয় বিমানবাহিনী। যার জেরে, গত কয়েক দশকে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন সিরিয়ায়। পঙ্গু হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। স্বজনহারা হয়েছে বহু শিশু। সিরিয়ার এই যিশুও তাদেরই একজন। আলেপ্পোতেই রয়েছে সিরিয়ার প্রধান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। রুশ বোমারু বিমানের লাগাতার হামলায় তা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে, সিরিয়ার একটি বড় অংশ কার্যত, বিদ্যুৎহীন। আলেপ্পোসহ বেশ কয়েকটি শহরে গত মাস থেকে বন্ধ হয়েছে পানি সরবরাহ।