গাজীপুর ও কুষ্টিয়া কারাগার থেকে ৩১৩ বন্দির পলায়ন
কাশিমপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত ৬
- আপলোড টাইম : ০৯:৪২:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪
- / ৯৬ বার পড়া হয়েছে
গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০৯ জন বন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে ৬ বন্দি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের গেট ভেঙে ১০৪ জন বন্দি পালিয়ে যান। এছাড়া সাতক্ষীরা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৪০০ বন্দি মাইকিং শুনে তারা ফিরেছেন। মঙ্গলবার বিকাল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০৯ জন বন্দি পালিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে ৬ বন্দি নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- নওগাঁর মান্দা থানার কাঞ্চনপুর এলাকার আ. সালাম সরদারের ছেলে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসলাম হোসেন (২৭), জয়পুরহাটের রইস উদ্দিনের ছেলে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আফজাল হোসেন (২৭), মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থানার রামেশ্বরপুর এলাকার মো. মকবুল মিয়ার ছেলে ইমতিয়াজ (২৭), মৃত সীতারামের ছেলে রাধেশ্যাম (৬৭), টাঙ্গাইলের নাগরপুর এলাকার স্বপন শেখ (৪৫) ও জাকির হোসেনের ছেলে জিন্নাহ (২৯)। তারা সবাই কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি ছিলেন। গতকাল বুধবার বিকালে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বিকালে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে থাকা বন্দিরা বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহের সময় বন্দিরা কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কারারক্ষীরা তাদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে বন্দিরা কারারক্ষীদের ওপর চড়াও হয়। বন্দিরা দেয়াল ভেঙে, দেয়াল টপকে, দেয়ালের সঙ্গে বিদ্যুতের পাইপ লাগিয়ে কারারক্ষীদের মারধর করে পালিয়ে যেতে চায়। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীকে খবর দেওয়া হলে সেনাবাহিনী কমান্ডো অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহ দমন করেন। বন্দিদের মধ্যে ২০৯ জন দেয়াল টপকে পালিয়ে গেছে। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক মো. মোস্তাক আহমেদ জানান, কাশিমপুর কারা হাসপাতালের মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট আব্দুর রহিম বুধবার ভোরে একটি গাড়িতে বহন করে লাশগুলো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরে স্বজনদের ও হেফাজতে ইসলামের নেতাদের দাবির প্রেক্ষিতে লাশ সন্ধ্যায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের গেট ভেঙে ১০৪ জন বন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি চালিয়েছে কারারক্ষীরা। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী পৌঁছে জেলা কারাগারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৫ জন কারারক্ষী আহত হয়েছেন। কারা সূত্র জানিয়েছে, ১০৭ জন বন্দি পালিয়েছে। কুষ্টিয়ার জেল সুপার আ. বারেক বলেন, ভেতরে দুপুরের খাবার ও গণনা শেষ করে অফিসেই নামাজ আদায় করছিলাম। নামাজ শেষ করে উঠতেই হঠাৎ কারাগারের ভেতর থেকে চিৎকার ও অভ্যন্তরীণ গেটে আঘাতের শব্দ শুনতে পাই। দৌড়ে গিয়ে দেখি অন্তত ৩শ’ জন সংঘবদ্ধ হয়ে ভেতর থেকে একসঙ্গে গেটে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে গেটের হেজবোল্ড ভেঙে যায়। এ সময় কারাবন্দিরা পালানোর চেষ্টা করলে কারারক্ষীরা ফাঁকা গুলি চালায়। এ সময় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে আবারো ভেতরে ঢুকে যায়। তবে এই সুযোগে বেশ ক’জন কারাবন্দি পালিয়ে গেছে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঠেকাতে গিয়ে ৫ জন কারারক্ষী আহত হয়েছেন। এছাড়া কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অস্ত্র ভান্ডার রক্ষিত আছে, কারাবন্দিরা নিরাপদে আছেন।
এছাড়াও সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দিরা ফিরে আসতে শুরু করেছেন। বুধবার পর্যন্ত অন্তত ৪০০ বন্দির ফেরত আসার কথা জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। সাতক্ষীরা কারাগারের জেলার হাসনা জাহান বিথি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ জনতা কারাগারে হামলা ও ভাঙচুর করলে ৫৯৬ জন বন্দি পালিয়ে যান। সাতক্ষীরা কারাগারের জেলার হাসনা জাহান বিথি সাংবাদিকদের জানান, কারাগারে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের আসামি ও কয়েদি ছিলেন ৫৯৬ জন। সোমবার সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ জনতা কারাগারে হামলা ও ভাঙচুর করলে তারা পালিয়ে যান। তাদের ফিরে আসার জন্য পরে দিন মাইকিং করলে ৪০০ জন ইতিমধ্যে ফিরে এসেছেন। আরও আসামিরা ফেরত আসবেন বলে তিনি আশা করছেন।