সমীকরণ ডেস্ক: গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পৃথক তিন অভিযানে ১১ জঙ্গি নিহত হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাত ও গতকাল ভোরে এ অভিযান চালানো হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযানে নিহতরা নব্য জেএমবির সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। সর্বশেষ গতকাল দুপুর থেকে গাজীপুরের পাতারটেক এলাকার জঙ্গি আস্তানায় পরিচালিত অভিযান শেষে সেখানে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ওই অভিযানে সাত জঙ্গি মারা যায় বলে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান। জেলার হাড়িনাল এলাকায় র্যাবের পৃথক অভিযানে দুই জঙ্গির মৃত্যু হয়। টাঙ্গাইলে র্যাবের আরেক অভিযানে সন্দেহভাজন আরও দুই জঙ্গির মৃত্যু হয়। গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর একই দিনে অভিযানে সবচেয়ে বেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে গতকাল। এর আগে রাজধানীর কল্যাণপুরে পরিচালিত অভিযানে ৯ জঙ্গি মারা যায়। গাজীপুরে নিহত সাতজনের মধ্যে জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়ক আকাশও রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। নগরের হাড়িনালে র্যাবের অভিযান চলার সময় দেড় কিলোমিটারের মধ্যে নোয়াগাঁওয়ের আফারখোলা পাতারটেক এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াত ও জেলা পুলিশ। সন্ধ্যায় পাতারটেকের ওই বাসা থেকে মরদেহগুলো উদ্ধারে তৎপরতা চলছিল। শনিবার সকাল ১০টার দিকে নগরের জয়দেবপুর থানার নোয়াগাঁও পাতারটেক এলাকার দোতালা একটি বাসা ঘিরে ফেলে গাজীপুর পুলিশ। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেন গাজীপুর পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। এর পরপরই পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াতের সদস্য ও কর্মকর্তাগণ সেখানে যান। আশপাশের এলাকার বাসা-বাড়িও ঘিরে রাখেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দুপুর ১২টার পর থেকে জঙ্গিদের আস্তানা দোতালা বাসাটিতে অভিযান শুরু হয়। এর আগে নিচতলার ভাড়াটিয়াদের সরিয়ে আনা হয়। দোতলায় অবস্থান নেয়া জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয় বারবার। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, যখনই আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয় তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিকে গুলি ছুড়তে থাকে জঙ্গিরা। পাল্টাগুলি ছুড়তে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন। থেমে থেমে ব্যাপক গোলাগুলি চলতে থাকে কয়েক ঘণ্টা ধরে। এ অবস্থা চলতে থাকে বিকাল পৌনে চারটা পর্যন্ত। র্যাব ও পুলিশের আলাদা দুটি অভিযানের খবরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও গাজীপুরের পাতারটেক এলাকায় আসেন। পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান ও জাবেদ পাটোয়ারীও এসময় তার সঙ্গে ছিলেন। এর আগে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামও সেখানে যান। এই অভিযানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিলেন। বিকাল ৪টার দিকে অভিযান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এখানে যারা ছিল, সবাই জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়ার পর তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এসময় পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে আকাশসহ সাতজন মারা যায়। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, পুলিশ, সোয়াত এবং অন্যান্য বাহিনী জঙ্গি দমনে সাহসী ভূমিকা পালন করছে। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি এবং গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন সেখানে সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তাদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বলে জানান তিনি। ঘটনাস্থলে থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। যে দোতালা বাসায় পুলিশের অভিযান চলে, সে বাসার মালিক সৌদি প্রবাসী জেলার শ্রীপুরের বাসিন্দা সোলেমান সরকার। তার ভাই কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আরবি শিক্ষক ওসমান গণি ওই বাসাটি দেখাশোনা করেন। তিন মাস আগে তার কাছ থেকে তিনজন ছাত্র পরিচয়ে বাড়িটির দোতলা ভাড়া নেয়। ওই তিনজনই জঙ্গি বলে ধারণা পুলিশের। এর আগে ভোরে নগরের হাড়িনাল পশ্চিমপাড়া লেবুবাগান এলাকায় আতাউর রহমানের একতলা বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। সেখানে দুই জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান। শনিবার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, কিছু দিন আগে দুজন জেএমবি দম্পতি আটক হয়েছিল। র্যাব তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছিল গাজীপুরে এবং এর আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি জেএমবি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তারা নাশকতা করার পরিকল্পনা করছিল এবং তাদের নাশকতা করার সামর্থ্যও ছিল। আটককৃত দম্পতির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যর ভিত্তিতে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করি। আতাউর রহমানের ভাড়া বাড়িতে যে কক্ষে জঙ্গিরা বসবাস করতো সেই কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। র্যাব সদস্যরা তাদের দরজা খুলতে বললে জঙ্গিরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এসময় র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি একে-২২ রাইফেল, একটি পিস্তল, একটি ল্যাপটপ ও বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাড়ির মালিক র্যাবকে জানিয়েছেন, নিহত দুই জঙ্গি রাশেদ মিয়া এবং তৌহিদুল বাড়ির মালিককে তথ্য দিয়েছিল যে, রাশেদ মিয়া এসএসসি পাস করে ভর্তির চেষ্টা করছে এবং তৌহিদুল ডুয়েটে লেখাপড়া করছে। অভিযানে এক জঙ্গির জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে এবং সেই পরিচয়পত্র থেকে একজনের পরিচয় প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করা গেছে। জঙ্গিরা তাদের নাম ও পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন নাম-পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে।
এদিকে টাঙ্গাইল শহরের কাগমারা মির্জামাঠ এলাকায় একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালায়। র্যাব বলছে, সেখানে দুজন ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। র্যাব-১২-এর তিন নম্বর কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী জানিয়েছেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাড়িটিতে সকাল ১০টার? দিকে অভিযান চালানো হয়। ভেতরে ঢোকার পর এক ‘জঙ্গি’কে গ্রেপ্তার করতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় অন্য ‘জঙ্গি’রা র?্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার চেষ্টা চালায়। র?্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে দুজন ‘জঙ্গি’ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। বেলা দেড়টার দিকে বোমা বিশেষজ্ঞ দলকে নিয়ে ভেতরে ঢোকে র?্যাবের দল। এরপর তারা লাশ দুটি বের করে নিয়ে আসে। ওই ঘর থেকে একটি পিস্তল, ?একটি রিভলবার, ১০টি চাপাতি, দুটি ছুরি ও ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা উদ্ধার হয়েছে। ওই বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আজাহার আলী জানিয়েছেন, ছাত্র পরিচয়ে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর তারা বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। এ সময় তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হলে তারা দু-এক দিন পরে দেবে বলে জানালেও আর দেয়নি।
হোম আজকের পত্রিকা প্রথম পাতা গাজীপুরের নোয়াগাঁও এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান একদিনে এগারো জঙ্গি নিহত :...