গাংনী অফিস: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নওপাড়া গ্রামের নবীনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মানাধীন ভবনের ছাদ ঢালায়ের ১৫ দিনের মাথায় দ্বিতীয় তলার সিড়ি ধসে পরেছে। নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার কারণে এ দূর্ঘটনা বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। এঘটনায় উত্তেজিত এলাকাবাসী গাংনী উপজেলা প্রকৌশলীকে অবরুদ্ধ করে রাখে। গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে গাংনী উপজেলার নওপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের মে মাসে পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৬৩ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা ব্যায়ে নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করা হলে কুষ্টিয়ার মেসার্স তামান্না টের্ড ইন্টালন্যাশনাল নামে মেহেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক ও মুনায়েম হোসেন মুলাক নামের একজন এ কাজ নেয়। কাজের শুরু থেকে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন তৈরী করে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ স্থানীয় লোকজন নি¤œমানের এ নির্মাণ কাজের বিরোধিতা করে উপজেলা প্রকোশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারকে বার বার অবহিত করলেও তারা কর্ণপাত করেনি।
অন্যদিকে বিদ্যালয়ের সিড়ি ধসে পরার সংবাদ পেয়ে ছুটে যান গাংনী উপজেলা প্রকৌশীল মাহাবুবুল হক। এসময় প্রকৌশলী মাহাবুবুল হককে উত্তেজিত জনগন অবরুদ্ধ করে রাখে। সাংবাদিক ও স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় প্রকৌশলীকে উদ্ধার করা হয়। এদিকে ভবনের সিড়ি ধসে পড়ার খবর চারিদিকে ছরিয়ে পড়লে অভিভাবকদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়। ভবনের সিড়ি ধসে পড়ায় কোন শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠাবে না বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনির ছাত্র সাইফ জানান, প্রথমে মনে হয়েছে ভূমিকর্ম্প হচ্ছে। পরে বাইরে গিয়ে দেখি বিদ্যালয়ের সিড়ি ভাংসে। আমাদের অনেক আশা ছিলো পাকা ভবনে ক্লাস করব কিন্তু এখন ওই ভবন দেখে ভয় লাগছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা খাতুন জানান, আমি ক্লাস নিচ্ছিলাম হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। বাইরে গিয়ে দেখলাম বিদ্যালয়ের সিড়ি ধসে পরছে। আমরা বারবার নি¤œমানের সামগ্রীর বিষয়ে অভিযোগ করেই কোন সুরাহা মেলেনি।
রাজমিস্ত্রী আমিরুল ইসলাম জানান, সিমেন্ট বিহিন, নরমাল ইট ও বালি দিয়ে এ ভবনের কাজ করছিলেন আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনায় পর্ষদের সভাপতি সুমন হোসেন, উর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রতি দাবি করেন ঠিকাদার ও অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
প্রকৌশলী জানান, সিড়ি ঢালায়ের সময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমাকে ডাকেনি। এমনকি আমি জানিনা কবে এ সিড়ির ঢালাই দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঠিকাদার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ওই কাজ মুনায়েম হোসেন মুলাকের আমার নয়। আমি এ কাজ সর্ম্পকে কিছুই জানিনা। সবাই বাচার জন্য আমার নাম করছে।
ঠিকাদার মুনায়েম হোসেন মুলাক বলেন, এটা মিস্ত্রির দোষ আমাদের কোন দোষ নেই এবং এই সিড়ির সার্টারিং খোলার সময়ের আগেই খুলে ফেলা হয়েছে বলেই এদূঘর্টনা। উপ সহকারী প্রকৌশলী সামসুল আলম জানান, আমরা অর্থ নিইনি। এম এ খালেক কাউকে টাকা দিয়ে কাজ করায় না। আমাদের না জানিয়ে ঠিকাদার এম এ খালেক ও মুনায়েম এ কাজ করেছে। তা ছাড়া অল্প সিমেন্ট, নি¤œমানের ইট ও বালি দিলেও এটা ধসে পড়ার কথা নয়। আমাদের যেহেতু জানায়নি সেহেতু আসলে কিভাবে যে কাজ করেছে তা বুজা যাচ্ছে না। তবে যেহেতু এখন তদন্ত হবে কাদের অপরাধ সেটা বেরিয়ে যাবে। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান জানান, সরকারী কাজের দুনীর্তি অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। এঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।