বর্তমানে পড়ালেখা ও জীবিকার প্রয়োজনসহ নানা কারণে নারীদের ঘরের বাইরে বের হতে হয়। কিন্তু দেশের গণপরিবহণ নারী ও কন্যাশিশুর জন্য এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিরাপদ নয়। এটা দুঃখজনক। গণপরিবহণে নারী ও কন্যাশিশুরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়। এর মধ্যে কেউ কেউ যৌন হয়রানির শিকারও হয়ে থাকেন। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, নিপীড়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ বছরের বেশি বয়সিদের সংখ্যাই বেশি। এসব তথ্যে সামাজিক অবক্ষয়ের দিকটি স্পষ্ট হয়। হয়রানির শিকার নারীদের অনেকেই পরবর্তী সময় মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হন। গণপরিবহণে চলাচল করার সময় কিশোরী, তরুণী ও নারীরা হয়রানির শিকার হলেও ঝামেলা এড়াতে অনেকেই প্রতিবাদ করেন না। যারা হয়রানির শিকার হন, তাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাস্তবতার কারণেও নারীদের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। কোনো গণপরিবহণে দাঁড়িয়ে থাকা এক ডজনেরও বেশি যাত্রী যখন অপেক্ষায় থাকে কখন একটি সিট খালি হবে, তখন দু-একটি সিট খালি হলে তাতে বসার জন্য যাত্রীদের মধ্যে এমন হুড়োহুড়ি পড়ে যায় যে তখন কে তরুণ, কে বয়স্ক, কে অসুস্থ-এই বোধ খুব কম যাত্রীর ভেতরেই কাজ করে। এই প্রতিযোগিতার সময়ও বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকে। বর্তমানে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া গণপরিবহণে সেবার মান এতটাই নিচে নেমেছে যে, চলার পথে যাত্রীদের ন্যূনতম ধৈর্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যেক যাত্রীকে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এতটাই সতর্ক থাকতে হয় যে, অন্য যাত্রীর সুরক্ষার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায় না। নিম্ন রুচি ও বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা এই পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। বস্তুত যারা পারিবারিকভাবে সুশিক্ষা পায় না, তারাই বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দিয়ে থাকে। কাজেই যারা পরিবার থেকে সুশিক্ষা পায় না, তারা যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজে সেই শিক্ষা পেতে পারে, সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। গণপরিবহণের সেবার মান ও বিদ্যমান সংকট দূর করার যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে এ সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রতিটি অভিযোগের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হলে অপরাধের মাত্রা কমবে, এটা আশা করা যায়। সার্বিকভাবে সামাজিক মূল্যবোধে পরিবর্তন না এলে দেশের গণপরিবহণে নারী ও কন্যাশিশুরা তাদের প্রাপ্য মর্যাদা পাবেন কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।