কুড়ুলগাছিতে আগাছানাশক ছিটিয়ে কৃষকের জমির ধান বিনষ্ট

সমীকরণ প্রতিবেদক:
জোর করে জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে জমির লাগানো ধানগাছে মাত্রা অতিরিক্ত আগাছানাশক কীটনাশক ছিটিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার দিবাগত রাতের শেষ প্রহরে দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামের মৃত রওশন আলীর ছেলে অসহায় কৃষক ফকির মোহাম্মদের জমিতে লাগানো প্রায় ১ বিঘা জমির ধানের গাছে আগাছানাশক কীটনাশক দিয়ে ঝলসে দিয়েছে আব্দুল হামিদ, আসাদ ও আরশাফ। আব্দুল হামিদ ও আসাদ বুইচিতলা গ্রামের মৃত খোদা বক্সোর ছেলে এবং আরশাফ আলী ওরফে ভিলকি একই গ্রামের মৃত হামিদ মৌলভীর ছেলে। কীটনাশকে ফকির মোহাম্মদের শেষ সম্বল প্রায় ১ বিঘা জমির প্রায় সব ধানগাছ পুড়ে ঝলসে গেছে।
কৃষক ফকির মোহাম্মদ বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো ধানের জমি দেখে এসে রাতে ঘুমিয়ে পড়ি। পরদিন ধানের জমিতে গিয়ে দেখি জমিতে থাকা ধানগাছ পুড়ে ঝলসে গেছে। অতিরিক্ত পরিমাণ আগাছানাশক কীটনাশক প্রয়োগ করে আমার সর্বনাশ করেছে আমার।’ ১০-১২ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হলেও নিজ হাতে লাগানো ধানের জমির এরকম অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পরে তিনি। তিনি জানান, ‘বুইচিতলা গ্রামের মৃত খোদা বক্সোর ছেলে আব্দুল হামিদ ও আসাদ এবং মৃত হামিদ মৌলভীর ছেলে আরশাফ আলীর (ভিলকি) সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিবাদ চলছে। তারা জোর করে আমার জমি দখল নিতে চায়। আমার জমি জোর করে দখল না নিতে পেরে গত শনিবার রাতের আঁধারে তারা ৩জন মিলে আমার ১৯ কাটা জমির ধানগাছ আগাছানাশক কীটনাশক ছিটিয়ে ঝলসে দিয়েছে।’
কৃষক ফকির মোহাম্মদের ধানী জমিতে কেন তার ধানের গাছে বিষাক্ত আগাছানাশক কীটনাশক প্রয়োগ করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন যাবত হরিশ্চন্দ্রপুর নতুন গ্রামের কৃষক ফকির মোহাম্মদের সাথে বুইচিতলা গ্রামের আব্দুল হামিদ, আসাদ ও আরশাফের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। কৃষক ফকির মোহাম্মদের মালিকাধীন ধানী জমি জোর করে দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। এটা নিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সমাধানের জন্য বসেন। সমাধানের কৃষক ফকির মোহাম্মদের পক্ষে রায় হওয়ায় সালিশ মানেনি তারা। জোর করে জমি দখলে নেওয়ার জন্য পুলিশ পাঠিয়ে কৃষক ফকির মোহাম্মদকে হয়রানিও করা হয় বলে জানান স্থানীয়রা। কিছুদিন আগেও ফকির মোহাম্মদেকে হুমকি দিয়ে ঐ জমিতে ধানের চাষ না করার জন্য বলে যায় তারা। জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা রাতের আঁধারে ধানী জমির গাছ বিনষ্ট করেছে। আর যাই করুক এভাবে ক্ষতি করা ঠিক হয়নি।
এই ঘটনায় অভিযুক্তদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাদের পাওয়া না গেলেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামের মৃত রওশন আলীর ছেলে ফকির মোহাম্মদের সঙ্গে পাশ্ববর্তী বুইচিতলা গ্রামের মৃত খোদা বক্সোর ছেলে আব্দুল হামিদ ও আসাদ এবং একই গ্রামের মৃত হামিদ মৌলভীর ছেলে আরশাফ আলীর (ভিলকি) জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিবাদ চলে আসছে। তারা ফকির মোহাম্মদের ভোগ দখলে থাকা প্রায় ১ বিঘা জমি নিজেদের দাবি করে বিভিন্ন রকম হয়রানি করে আসছে। ফকির মোহাম্মদের বাড়িতে একাধিবার পুলিশ পাঠিয়ে তাকে হয়রানির চেষ্টা করা হয়েছে। আমি প্রতিবাদ করায় তারা আমার নামে চেয়ারম্যান ও ইউএনও বরাবার অভিযোগও করছে। আসলে তারা ৩জন এলাকার নামকরা ভূমিদস্যু। মানুষদের হয়রানি করে জমি দখল করা তাদের পেশা।’
এই বিষয়ে কুড়ুলগাছি ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে জের ধরে বুইচিতলা গ্রামের কয়েকজন মিলে নতুন গ্রামের কৃষক ফকির মোহাম্মদের জমিতে লাগানো প্রায় ১ বিঘা জমির ধানের গাছে আগাছানাশক কীটনাশক দিয়ে ঝলসে দিয়েছে এমন একটি ঘটনা আমি শুনেছি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।