কাল বাজছে বিদায় ঘণ্টা

সমীকরণ প্রতিবেদন:
আর একদিন পর অর্থাৎ কাল শেষ হবে ফেব্রুয়ারি মাস। এর সাথে সাথে মাসব্যাপী বইমেলার বিদায় ঘণ্টা বাজবে। সব হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে এক বছরের জন্য কপাট নামবে বইমেলার। অবশ্য গতকাল মেলা চত্বরে এর কিছুটা প্রভাব ছিল। অনেকের আলোচানায় ছিল মেলা শেষের গল্প। কেউ জানতে চেয়েছেন মেলার সময়সীমা এবার বাড়ছে কিনা। আবার অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের বিক্রির প্রত্যাশা প্রাপ্তি নিয়ে কথা বলছিলেন। এরই মধ্যে আগত অনেকের মধ্যে হাহাকারও ছিল। মেলার ২৬তম দিনে লোক সমাগম কম ছিল। মেলা বেলা ৩টায় শুরু হয়ে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। গতাকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৫৫টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্থানীয় সাহিত্যের বৈভব ও জেলা সাহিত্যমেলা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইমন জাকারিয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুন্সি আবু সাইফ, সাহেদ মন্তাজ ও মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির বহুমাত্রিক ধারা-উপধারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক সাহিত্যের বাইরে বিভিন্ন জেলায় জেলায়। কিন্তু ঢাকার বাইরে চর্চিত সাহিত্যের সৃষ্টিশীল বৈভবকে পর্যবেক্ষণ ও সঙ্কলন করার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ বাংলাদেশে অতীতে কখনো গৃহীত হয়নি। স্থানীয় সাহিত্যস্রষ্টাদের সৃষ্টিকর্মকে মূল্যায়ন ছাড়া সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। এসব দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে নিয়েই বাংলা একাডেমি জেলা সাহিত্যমেলার রূপরেখা প্রণয়ন করে এবং তা সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিটি অঞ্চলের জেলা প্রশাসনকে প্রেরণ করে। আলোচকবৃন্দ বলেন, সাহিত্য জনমানুষের কথা বলে। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে হবে। এ জন্য জেলা সাহিত্যমেলা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। জেলা সাহিত্যমেলায় অংশ নিয়ে স্থানীয় লেখক, সাহিত্যিকরা নিজেদের মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করতে পেরেছেন। এর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে সাহিত্য উপকরণাদি সংরক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জেলা সাহিত্যমেলার নিয়মিত আয়োজন দেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চাকে বেগবান করবে।
সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, আঞ্চলিকতাকে অবলম্বন করেই বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে। তাই স্থানীয় সাহিত্যকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে আয়োজিত জেলা সাহিত্যমেলা আমাদের সাহিত্যের দিগন্ত প্রসারিত করবে।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সোহেল আমিন বাবু, হরষিত বালা, আসাদুজ্জামান আসাদ, মাহফুজা অনন্যা ও মোহাম্মদ আলমগীর আলম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন মালেক মাহমুদ, সালাউদ্দিন বাদল, শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও আলমগীর আলম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন ম ম জুয়েল, সাফিয়া খন্দকার রেখা, ফয়জুল আলম পাপ্পু, শামস মিঠু ও ফারজানা ইসলাম। এ ছাড়া ছিল দিলরুবা খানমের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘শব্দনোঙর’, ফরিদা পারভীনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অচিন পাখি’, অনিকেত আচার্যের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর’, ড. শামীম মতিন চৌধুরীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বিউটিফুল মাইন্ড’-এর পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া, ফেরদৌস আরা, জেরিন তাবাসসুম হক, নয়ন বাউল, দেলোয়ার হোসেন বয়াতি ও আমজাদ দেওয়ান। আজ মেলার ২৭তম দিনে মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বিশ্ববাঙালির সাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আলম খোরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, আ-আল মামুন ও জসিম মল্লিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
মেলায় এসেছে আইন আদালত সংবিধান : নির্বাচিত লেখালেখি, লেখক মিজানুর রহমান খান, প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- দ্বিতীয় খণ্ড, লেখক মুসা আল হাফিজ, প্রকাশক শোভা প্রকাশ। পুথিনিলয় এনেছে সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মুহাম্মদ মিজানুর রহমানের ‘কালজয়ী রবীন্দ্রনাথ’। বইটি পাওয়া যাচ্ছে পুথিনিলয়ের ১৫ নম্বর প্যাভিলিয়নে। বরীন্দ্র জীবনের অনেক বিষয়ই এখানে উঠে এসেছে। অয়ন প্রকাশন নিয়ে এসেছে নাঈমা সারমীনের উপন্যাস ‘আত্মজ’। বইটিতে এক মায়ের সাথে তার আত্মাজের অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের গল্প, ষাটোর্ধ্ব এক প্রৌঢ়া বাঙালি নারীর সারাটি জীবনের গল্প ছাড়াও প্রবাসে ক্যান্সার আক্রান্ত বাংলাদেশী এক যুবকের জীবনযুদ্ধ ও কানাডা উপমহাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। বইটির লেখিকা একজন চিকিৎসক। গত বছরও করোনা মহামারী নিয়ে বইমেলায় তার উপন্যাস ‘পেন্ডলাম’ প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।