চুয়াডাঙ্গা শনিবার , ২৯ আগস্ট ২০২০

করোনায় শনাক্তের হার কমলেও মৃত্যু বাড়ছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
আগস্ট ২৯, ২০২০ ৯:১১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৭ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত হয়েছে ২২১১ জন
সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার কমলেও মৃতের হার বেড়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসায় এবং চিকিৎসার ব্যাপারে সচেতন না থাকায় মৃতের হারের লাগাম টেনে ধরা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে দেশে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ১৭৪ জনের। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২ হাজার ২১১ জন শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৯৪ জন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশ থেকে ১৩ হাজার ৯৭৭টি নমুনার সংগ্রহ করা হয়। পরে ৯২টি পরীক্ষাগারে ১৩ হাজার ৭৪১টি পরীক্ষা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৫ লাখ ১৪ হাজার ১২৬টি নমুনা। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৩৭৮ জন, আর এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৩৬ জন।
করোনায় সপ্তাহভিত্তিক মৃত্যুর সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সংক্রমণের ১২তম সপ্তাহ (২৪ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত) দৈনিক মৃত্যুর গড় ছিল ২৫ জনের নিচে, যা পরবর্তীতে বেড়ে ৩০-এর ঘরে গিয়ে ঠেকে। সংক্রমণের ২০তম সপ্তাহে (১৯ থেকে ২৫ জুলাই) দৈনিক গড় মৃত্যুর সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৪২ জন। তবে পরের দুই সপ্তাহ সেটা কমতির দিকে ছিল। অর্থাৎ ২২তম সপ্তাহে মৃত্যুর দৈনিক গড় নেমে আসে ৩৩ জনে। তবে এরপর থেকে এই গতি ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। ফলে ২৩তম সপ্তাহে (৯ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত) মৃত্যুর দৈনিক গড় ৩৭ জনে এসে দাঁড়ায়। এ ধারাবাহিকতায় পরের সপ্তাহে সেটি আরও বেড়ে চলিস্নশের কোটা ছাড়িয়ে যায়। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত চলতি সপ্তাহে (৬ দিনের হিসাব) করোনায় দৈনিক মৃত্যুর গড় ৪৪ ঘরে পৌঁছেছে। এদিকে ২৭ আগস্ট ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটির সংক্রমণ হার ১৬ দশমিক ১১ শতাংশ থাকলেও ২৮ আগস্ট শুক্রবার ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ হয়। এ পর্যন্ত সংক্রমণ ২০ দশমিক ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা দুই দিন আগে (২৬ ও ২৭ আগস্ট) ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ১৮৮টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম। বাংলাদেশের ঠিক ওপরেই আছে এই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীন। যদিও আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে অনেক আগেই চীনকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। তবে চীনের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যু হার কম। বিশেষজ্ঞদের দাবি, দেশে করোনা সংক্রমণজনিত অসুস্থতায় যে হারে প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে এটি চলতে থাকলে শিগগিরই চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা জানান, চীনে ভাইরাসটি ছড়ানোর দুই মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও তিন থেকে চার মাস লেগেছিল। কিন্তু বাংলাদেশে সংক্রমণের পঞ্চম-ষষ্ঠ মাসেও লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। মাস দুয়েক ধরে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা কমায় নতুন রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও মৃত্যু কমছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও দাবি, যেসব নির্দেশকের মাধ্যমে সংক্রমণ কমার প্রবণতা বোঝা যায় তার কোনোটাই বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে না। শুক্রবার সংক্রমণের ১৭৪তম দিনে আক্রান্ত সংখ্যা ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৯৪ ও মৃত্যুর সংখ্যা ৪ হাজার ১৭৪ জনে পৌঁছিয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে এই সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) মতে, টানা ১ থেকে ৩ সপ্তাহ ধরে নতুন রোগী শনাক্ত, পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ও মৃত্যু কমে এলে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলা হয়। কিন্তু বর্তমানে পরীক্ষা কমে যাওয়ায় নতুন রোগী শনাক্ত কমেছে। এতে সহজেই অনুমেয় হয় যে, পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী সংক্রমণ শুরুর পর গত ২২ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ৩২২ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এখানে ২৭ হাজার ২৬৪ জন রোগী বেড়েছে। শতকরা হিসাবে আগের সাড়ে চার মাসের তুলনায় এই এক মাসে রাজধানীতে ৫৬ শতাংশ রোগী বেড়েছে। মূলত দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের ফলে এমনটা হচ্ছে। রাজধানীর এই চিত্র থেকে জনবহুল মূল বিভাগীয় শহরের চিত্রও কিছুটা বোঝা যায়। দেশে বর্তমানে সংক্রমণের হার কমলেও মৃত্যু কমছে না কেন এমন প্রশ্নে (২৬ আগস্ট) বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে এক আলোচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এর বড় কারণ হচ্ছে রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসছে। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, ক্যানসার অথবা যেসব রোগের জন্য স্টেরয়েড গ্রহণ করতে হয়, এমন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে অথবা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, সংক্রমণ দীর্ঘ হচ্ছে, এটা কতদিন থাকবে বলা যাচ্ছে না। তবে সামাজিক সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে পারলে প্রাদুর্ভাব কমে আসবে। এজন্য গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয়পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যাপক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বেশি পরিমাণে কনট্রাক্ট ট্রেসিং করে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেক সাবেক মহাপরিচালক ডা. মো. এম এ ফয়েজ বলেন, জনাকীর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, একে অপরের সংস্পর্শে থেকে দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব। এ জন্য সবাইকে সচেতন করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা কারিকুলাম থেকেই স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেখানে সংক্রামক, অসংক্রামক ব্যাধির বিষয়গুলোর উলেস্নখ্য থাকবে। তবেই সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ও মৃত্যু কমানো সম্ভব হবে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। সময়ের ব্যবধানে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। গত ৫ এপ্রিল ঢাকার দুটি এলাকা ও ঢাকার বাইরে তিনটি জায়গাকে সংক্রমণের ক্লাস্টার (কাছাকাছি একই জায়গায় অনেক আক্রান্ত) হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। পরে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সংক্রমণের সংখ্যা পর্যালোচনা করে এলাকাভিত্তিক রেড (লাল), ইয়োলো (হলুদ) ও গ্রিন (সবুজ) জোনে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাসহ চারটি জেলার কয়েকটি অঞ্চল রেড জোন ঘোষণা দিয়ে পাইলট ভিত্তিতে লকডাউন কার্যকরসহ পর্যায়ক্রমে ৫০টি জেলা ও ৪০০ উপজেলার জোনভিত্তিক লকডাউন হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু পরে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ শিথিলতা দেখা দেয়।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।