ঝিনাইদহে খামারিদের স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তালিকা করা হয়নি
ঝিনাইদহ অফিস:
করোনাকালে খামারিদের স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তালিকা করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে যাদের কোনো গরু-ছাগল বা মুরগী খামার নেই, এমন ব্যক্তিরা প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। এ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ধুমায়িত হচ্ছে। তবে ঝিনাইদহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিস থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, করোনাকালে খামারিদের তালিকা তৈরি করতে ঢাকা থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ পেয়ে প্রাণিসম্পাদ বিভাগের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মীরা তালিকা প্রস্তুত করে অনলাইনে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। খবর জানাজানি হয়ে পড়লে রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীরা সরব হয়ে ওঠেন। গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা গরু-ছাগল বা মুরগীর খামার নেই এমন ব্যক্তিরও তালিকা পাঠাতে চাপ সৃষ্টি করেন। ফলে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তালিকা তৈরিতে ছেদ পড়ে।
শৈলকুপা উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের মনোয়ারা খাতুন অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়ে রোজি আক্তারের পোল্ট্রি মুরগীর খামার ছিল। করোনাকালে তাঁর সাড়ে চার হাজার মুরগী মারা যায়। তাঁর গ্রামের অনেকেই প্রথম ধাপে প্রণোদনার টাকা পেলেও তাঁর মেয়ে পাননি বলে তিনি অভিযোগ করেন। শৈলকুপার ফুলহরি, আবাইপুরের কুমিরাদহ ও কৃপালপুরে বেশ কিছু ব্যক্তির গরু না থাকলেও তাঁরা রাজনৈতিক বিবেচনায় টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শৈলকুপায় প্রথম ধাপে ২ হাজার ৮৯০ জন টাকা পেয়েছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেতে শৈলকুপার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন খানের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের বংকিরা গ্রামে আদল বিশ্বাস, বলয় ঘোষ, তাজুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমান মতির গরুর খামার থাকলেও তাঁরা টাকা পাননি। করোনাকালে ১০-১২টি গরু নিয়ে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। অথচ ওই গ্রামে যাদের একটি গরু আছে, তাঁরাও পেয়েছেন এই টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা জেলায় প্রণোদনার টাকার তালিকা স্বচ্ছভাবে করা হয়নি। সমাজের প্রভাবশালী ও নেতা-কর্মীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে এই তালিকা করা হয় বলে অহরহ অভিযোগ আসছে।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী জানান, ‘ঢাকা থেকে তালিকা চেয়ে পাঠানো হলে আমরা প্রথম ধাপে ১২ হাজার ৬৪৬ জনের তালিকা পাঠায়। তাঁর মধ্যে ১২ হাজার ৪৮৮ জনের টাকা এসেছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই টাকা তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্টে চলে এসেছে।’ তিনি বলেন, তালিকা করতে কোনো স্বেচ্ছাচারিতা বা অনিয়ম হয়নি। তারপরও বলব ঝিনাইদহের মানুষরাই তো সরকারি এই টাকা পেয়েছে। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, খামারি হয়েও টাকা পাননি এমন একজন ব্যক্তির নাম আমাকে দেন। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপে আরও ৭ হাজার ৩২৪ জনের তালিকা পাঠানো হচ্ছে। আশা করি বাদ পড়ারা এই তালিকায় স্থান পাবেন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের ভোটার আইডির সঙ্গে মোবাইল সিমের মিল নেই। ফলে এমন অসঙ্গতি থাকা ব্যক্তিদের প্রণোদনার তালিকায় নাম থাকলেও তাঁরা টাকা পাচ্ছেন না। ভোটার আইডি কার্ডের সঙ্গে মোবাইল সিম ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট মিলে গেলে তাঁরা টাকা পাবেন। তা ছাড়া গ্রামে যখন প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা তালিকা করতে যান তখন তাঁদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ বা বিষয়টি একেবারেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে গৃহকর্তারা এড়িয়ে যান। কেউ কেউ মোবাইল নম্বর দিলেও তা বিকাশ বা নগদ অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মিল নেই। ফলে তালিকা করা হলেও প্রণোদনার টাকা পান না।
