ইপেপার । আজ রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

এমপি আজিম হত্যা: অভিযোগপত্র দিল পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৪৪ বার পড়া হয়েছে


ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় রহস্যজনকভাবে খুন হওয়া বাংলাদেশের সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলার চার্জশিট দিয়েছে ভারতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১ হাজার ২০০ পাতার ঐ অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযোগপত্রে জিহাদ হাওলাদার ও মোহাম্মদ সিয়াম নামে দুই জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
চার্জশিটে হত্যার বিবরণ থাকলেও হত্যার কারণ সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই। এ ব্যাপারে তদন্তকারী সংস্থাটি বলছে, লাশের যে অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে সেটির ডিএনএ টেস্ট হয়নি। এ কারণে এটি সাবেক এমপি আনারের লাশ কি না, সেটা চার্জশিটে স্পষ্ট করা যায়নি।
ঝিনাইদহ-৪ (সদর-কালীগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে কলকাতায় যান। পরদিন কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জীভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে তাকে খুন করা হয়। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ঐ ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশকে এমন তথ্য জানিয়েছিল।
কলকাতা পুলিশ সূত্র বলছে, সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্রে জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম হোসেনের নাম রয়েছে। এ দুই জনকে সিআইডি গ্রেফতার করেছিল। তবে কী উদ্দেশে তারা আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করেছে, সে ব্যাপারে অভিযোগপত্রে কিছু বলা হয়নি।
তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, সাবেক এমপি আনোয়ারুল হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিনকে এখনো ধরা সম্ভব হয়নি। সেই কারণে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার উদ্দেশ্য এখনো অজানা। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের একজন জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ। তাকে ২৩ মে ও সিয়াম হোসেনকে গত ৭ জুন গ্রেফতার করা হয়। আদালতের নির্দেশে জিহাদকে দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে সিআইডি হেফাজতে রয়েছেন সিয়াম।
জিহাদ ও সিয়ামকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ বিভিন্ন সময় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙ্গরের কৃষ্ণমাটি এলাকার বাগজোলা খালে তল্লাশি চালিয়েছিল। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একাধিক হাড়গোড়। প্রাথমিকভাবে সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হাড়গোড় মানুষের। জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম পুলিশকে জানিয়েছিল, তিনি পলাতক আখতারুজ্জামানের অধীনে ৬০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। তার নির্দেশেই তিনি জিহাদকে কলকাতা এনে রাজারহাটে ভাড়া ফ্ল্যাটে রেখেছিলেন। আনোয়ারুল আজীমকে হত্যায় ব্যবহূত অস্ত্র, প্লাস্টিকের চাদর, ব্যাগ সবকিছুই কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকা থেকে কিনে আনা হয়েছিল।
সিয়াম পুলিশকে আরো জানান, মামলার অন্য দুই অভিযুক্ত আসামি ফয়সাল সাজি ও মুস্তাফিজ রহমান মাংস কাটার মেশিন কিনে এনেছিলেন। আজীমকে হত্যার পর তার দেহ থেকে মাংস ও হাড় আলাদা করা হয়। এরপর মাংস কাটার মেশিনে ছোট ছোট টুকরা করা হয়। এরই মধ্যে ২৮ জুন সঞ্জীভা আবাসনের বিইউ-৫৬ ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় চার কেজি মাংস। উদ্ধার করা ঐ মাংস মানুষের কি না, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, ঐ মাংস মানুষের।
পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি সূত্র জানায়, তবে সেই খণ্ডিত মাংস সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীমের কি না, তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষা করতে চান তদন্তকারী কর্মকর্তারা। সেই লক্ষ্যে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন এবং রক্তের সম্পর্ক থাকা অন্য ব্যক্তিদের ডেকে তাদের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলেও জানিয়েছে রাজ্যের সিআইডি। ডোরিনকে কলকাতায় আসার জন্য সিআইডির পক্ষ থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি এখনো কলকাতায় আসতে পারেননি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

এমপি আজিম হত্যা: অভিযোগপত্র দিল পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি

আপলোড টাইম : ০৩:০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪


ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় রহস্যজনকভাবে খুন হওয়া বাংলাদেশের সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলার চার্জশিট দিয়েছে ভারতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১ হাজার ২০০ পাতার ঐ অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযোগপত্রে জিহাদ হাওলাদার ও মোহাম্মদ সিয়াম নামে দুই জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
চার্জশিটে হত্যার বিবরণ থাকলেও হত্যার কারণ সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই। এ ব্যাপারে তদন্তকারী সংস্থাটি বলছে, লাশের যে অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে সেটির ডিএনএ টেস্ট হয়নি। এ কারণে এটি সাবেক এমপি আনারের লাশ কি না, সেটা চার্জশিটে স্পষ্ট করা যায়নি।
ঝিনাইদহ-৪ (সদর-কালীগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে কলকাতায় যান। পরদিন কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জীভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে তাকে খুন করা হয়। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ঐ ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশকে এমন তথ্য জানিয়েছিল।
কলকাতা পুলিশ সূত্র বলছে, সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্রে জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম হোসেনের নাম রয়েছে। এ দুই জনকে সিআইডি গ্রেফতার করেছিল। তবে কী উদ্দেশে তারা আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করেছে, সে ব্যাপারে অভিযোগপত্রে কিছু বলা হয়নি।
তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, সাবেক এমপি আনোয়ারুল হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিনকে এখনো ধরা সম্ভব হয়নি। সেই কারণে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার উদ্দেশ্য এখনো অজানা। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের একজন জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ। তাকে ২৩ মে ও সিয়াম হোসেনকে গত ৭ জুন গ্রেফতার করা হয়। আদালতের নির্দেশে জিহাদকে দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে সিআইডি হেফাজতে রয়েছেন সিয়াম।
জিহাদ ও সিয়ামকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ বিভিন্ন সময় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙ্গরের কৃষ্ণমাটি এলাকার বাগজোলা খালে তল্লাশি চালিয়েছিল। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একাধিক হাড়গোড়। প্রাথমিকভাবে সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হাড়গোড় মানুষের। জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম পুলিশকে জানিয়েছিল, তিনি পলাতক আখতারুজ্জামানের অধীনে ৬০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। তার নির্দেশেই তিনি জিহাদকে কলকাতা এনে রাজারহাটে ভাড়া ফ্ল্যাটে রেখেছিলেন। আনোয়ারুল আজীমকে হত্যায় ব্যবহূত অস্ত্র, প্লাস্টিকের চাদর, ব্যাগ সবকিছুই কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকা থেকে কিনে আনা হয়েছিল।
সিয়াম পুলিশকে আরো জানান, মামলার অন্য দুই অভিযুক্ত আসামি ফয়সাল সাজি ও মুস্তাফিজ রহমান মাংস কাটার মেশিন কিনে এনেছিলেন। আজীমকে হত্যার পর তার দেহ থেকে মাংস ও হাড় আলাদা করা হয়। এরপর মাংস কাটার মেশিনে ছোট ছোট টুকরা করা হয়। এরই মধ্যে ২৮ জুন সঞ্জীভা আবাসনের বিইউ-৫৬ ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় চার কেজি মাংস। উদ্ধার করা ঐ মাংস মানুষের কি না, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক প্রতিবেদন বলছে, ঐ মাংস মানুষের।
পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি সূত্র জানায়, তবে সেই খণ্ডিত মাংস সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীমের কি না, তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষা করতে চান তদন্তকারী কর্মকর্তারা। সেই লক্ষ্যে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন এবং রক্তের সম্পর্ক থাকা অন্য ব্যক্তিদের ডেকে তাদের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলেও জানিয়েছে রাজ্যের সিআইডি। ডোরিনকে কলকাতায় আসার জন্য সিআইডির পক্ষ থেকে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি এখনো কলকাতায় আসতে পারেননি।