ইপেপার । আজ সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

এবার পছন্দের বিষয়ে ভর্তি নিয়ে মেধাবীদের শঙ্কা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:১২:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুলাই ২০১৮
  • / ৪২৫ বার পড়া হয়েছে

আসন সংখ্যার স্বল্পতায় ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে পড়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে সিংহভাগ মেধাবীর

ডেস্ক রির্পোট: চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১০টি বোর্ডে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন। গড় উত্তীর্ণের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ১০টি বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন। আর ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫ হাজার ৫৬২ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। এইচএসসি পাসের পর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রথম লক্ষ্য থাকে সরকারি মেডিকেল কলেজ কিংবা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হওয়া। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। তবে আসন সংখ্যার স্বল্পতায় ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে পড়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে সিংহভাগ মেধাবীর।
এদিকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না। উচ্চ শিক্ষায় ভর্তিযুদ্ধ শুরু হচ্ছে সেপ্টেম্বরে। স্বতন্ত্রভাবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। এবারো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সারাদেশে ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। তাই এবারো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে সীমাহীন ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। ইতিমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে ভর্তি পরীক্ষা নয়, এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর ৭ কলেজে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
ঢাকা, রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নেই। এ বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে নৈর্ব্যক্তিক নিয়মের বদলে লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ক-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। এ ছাড়া খ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২১ সেপ্টেম্বর, গ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৪ সেপ্টেম্বর, ঘ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১২ অক্টোবর, চ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (সাধারণ জ্ঞান) ১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার এবং চ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (অঙ্কন) ২২ সেপ্টেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে অনলাইনের মাধ্যমে প্রার্থীদের ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া আগামী ৩১ জুলাই মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৩০ থেকে। ২৬ আগস্ট রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এমবিবিএসসহ স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসহ আসন সংখ্যা ৩ লাখ। ডিগ্রি কলেজগুলোয় পাস কোর্সে রয়েছে দেড় লাখের মতো আসন। ফাজিলেও রয়েছে আরো বেশ কিছু আসন। এর বাইরে কিছু মাদরাসায় সম্মান কোর্স চালু করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স কলেজগুলো বাদে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আসন সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আসন আছে প্রায় ১ লাখ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে দেখা গেছে, একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক ধরনের নিয়মে পরীক্ষা গ্রহণ ও ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পদ্ধতিগত জটিলতা ও সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। কয়েক শিক্ষাবিদ দেশের উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি পদ্ধতি প্রসঙ্গে বলেন, কোচিং ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, মফস্বল ও শহরের সুযোগ-সুবিধার তারতম্য এবং প্রশ্ন পদ্ধতি প্রণয়নে এইচএসসি সিলেবাসকে কম গুরুত্ব দেয়ায় শিক্ষার্থীদের নানামুখী ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অর্জিত জ্ঞানের আলোকে ভর্তি পরীক্ষা পার করা শিক্ষার্থীদের দুষ্কর হয়ে পড়ে। আর এজন্য তারা কোচিং সেন্টারের পেছনে ছুটে।
রাজধানীর ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রশ্নে এমন কিছু বিষয় আনা হয়, যার সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্য বইয়ের সঙ্গে নূন্যতম সম্পর্ক নেই। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কোচিং সা¤্রাজ্য। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কোচিংকে নিরুৎসাহিত করতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের উদ্যোগ নিলেও শিক্ষার্থীরা কোচিং বিমুখ হচ্ছে না, বরং আরো বেশি কোচিংয়ের পিছু ছুটছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদে সিংহভাগ শিক্ষার্থীর পড়ার সুযোগ থাকলেও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ভর্তির সুযোগ কম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও অনেকটা একই রকম। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনুযায়ী একই ইউনিটে বিভিন্ন শিফটে পরীক্ষা হয়। প্রতিটি শিফটের জন্য আলাদা প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়। কোনো শিফটে প্রশ্ন সহজ হয়, কোনোটায় কঠিন। ফলে যে শিফটে প্রশ্ন সহজ হয়, সেই শিফট থেকে বেশি সংখ্যক ভর্তির সুযোগ পাওয়ার নজির রয়েছে। এ ছাড়া প্রশ্নে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত বিষয় থাকায় বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেই রয়েছে এ ধরনের নানা অসঙ্গতি। পরীক্ষা নিয়েও তৈরি হয় নানা ভোগান্তি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির জন্য পৃথক তারিখ নির্ধারণ করে। এর ফলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের দেশের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়। ছাত্ররা অভিভাবক ছাড়া পরীক্ষা দিতে গেলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে বিপাকে পড়েন ছাত্রীরা।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, সারাদেশে ঘুরে ঘুরে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অর্থ ও সময় অপচয় হয়। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে বলে তিনি জানান। উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো পূর্ণাঙ্গ যাত্রা শুরু করেনি। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতক (পাস) কোর্স চালু রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে মেডিকেল কলেজগুলোর মতো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে, সব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সুপারিশ ছিল। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পদক্ষেপ নিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এমবিবিএসসহ স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসহ আসন সংখ্যা ৩ লাখের কাছাকাছি। ডিগ্রি কলেজগুলোয় পাস কোর্সে রয়েছে দেড় লাখের মতো আসন। এর বাইরে কিছু মাদরাসায় ফাজিল (সম্মান) কোর্স রয়েছে। স্নাতক কলেজগুলো বাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে প্রায় ৫০ হাজার।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

এবার পছন্দের বিষয়ে ভর্তি নিয়ে মেধাবীদের শঙ্কা

আপলোড টাইম : ০৫:১২:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুলাই ২০১৮

আসন সংখ্যার স্বল্পতায় ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে পড়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে সিংহভাগ মেধাবীর

ডেস্ক রির্পোট: চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১০টি বোর্ডে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন। গড় উত্তীর্ণের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ১০টি বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন। আর ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫ হাজার ৫৬২ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। এইচএসসি পাসের পর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রথম লক্ষ্য থাকে সরকারি মেডিকেল কলেজ কিংবা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হওয়া। ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। তবে আসন সংখ্যার স্বল্পতায় ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে পড়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে সিংহভাগ মেধাবীর।
এদিকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না। উচ্চ শিক্ষায় ভর্তিযুদ্ধ শুরু হচ্ছে সেপ্টেম্বরে। স্বতন্ত্রভাবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। এবারো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সারাদেশে ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। তাই এবারো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে সীমাহীন ভোগান্তি ও দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। ইতিমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে ভর্তি পরীক্ষা নয়, এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর ৭ কলেজে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
ঢাকা, রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নেই। এ বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে নৈর্ব্যক্তিক নিয়মের বদলে লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ক-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। এ ছাড়া খ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২১ সেপ্টেম্বর, গ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৪ সেপ্টেম্বর, ঘ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১২ অক্টোবর, চ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (সাধারণ জ্ঞান) ১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার এবং চ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (অঙ্কন) ২২ সেপ্টেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে অনলাইনের মাধ্যমে প্রার্থীদের ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া আগামী ৩১ জুলাই মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৩০ থেকে। ২৬ আগস্ট রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এমবিবিএসসহ স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসহ আসন সংখ্যা ৩ লাখ। ডিগ্রি কলেজগুলোয় পাস কোর্সে রয়েছে দেড় লাখের মতো আসন। ফাজিলেও রয়েছে আরো বেশ কিছু আসন। এর বাইরে কিছু মাদরাসায় সম্মান কোর্স চালু করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স কলেজগুলো বাদে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আসন সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আসন আছে প্রায় ১ লাখ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে দেখা গেছে, একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক ধরনের নিয়মে পরীক্ষা গ্রহণ ও ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পদ্ধতিগত জটিলতা ও সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। কয়েক শিক্ষাবিদ দেশের উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি পদ্ধতি প্রসঙ্গে বলেন, কোচিং ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, মফস্বল ও শহরের সুযোগ-সুবিধার তারতম্য এবং প্রশ্ন পদ্ধতি প্রণয়নে এইচএসসি সিলেবাসকে কম গুরুত্ব দেয়ায় শিক্ষার্থীদের নানামুখী ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অর্জিত জ্ঞানের আলোকে ভর্তি পরীক্ষা পার করা শিক্ষার্থীদের দুষ্কর হয়ে পড়ে। আর এজন্য তারা কোচিং সেন্টারের পেছনে ছুটে।
রাজধানীর ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রশ্নে এমন কিছু বিষয় আনা হয়, যার সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্য বইয়ের সঙ্গে নূন্যতম সম্পর্ক নেই। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কোচিং সা¤্রাজ্য। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কোচিংকে নিরুৎসাহিত করতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের উদ্যোগ নিলেও শিক্ষার্থীরা কোচিং বিমুখ হচ্ছে না, বরং আরো বেশি কোচিংয়ের পিছু ছুটছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদে সিংহভাগ শিক্ষার্থীর পড়ার সুযোগ থাকলেও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ভর্তির সুযোগ কম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও অনেকটা একই রকম। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনুযায়ী একই ইউনিটে বিভিন্ন শিফটে পরীক্ষা হয়। প্রতিটি শিফটের জন্য আলাদা প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়। কোনো শিফটে প্রশ্ন সহজ হয়, কোনোটায় কঠিন। ফলে যে শিফটে প্রশ্ন সহজ হয়, সেই শিফট থেকে বেশি সংখ্যক ভর্তির সুযোগ পাওয়ার নজির রয়েছে। এ ছাড়া প্রশ্নে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত বিষয় থাকায় বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেই রয়েছে এ ধরনের নানা অসঙ্গতি। পরীক্ষা নিয়েও তৈরি হয় নানা ভোগান্তি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির জন্য পৃথক তারিখ নির্ধারণ করে। এর ফলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের দেশের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হয়। ছাত্ররা অভিভাবক ছাড়া পরীক্ষা দিতে গেলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে বিপাকে পড়েন ছাত্রীরা।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, সারাদেশে ঘুরে ঘুরে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অর্থ ও সময় অপচয় হয়। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে বলে তিনি জানান। উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো পূর্ণাঙ্গ যাত্রা শুরু করেনি। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতক (পাস) কোর্স চালু রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে মেডিকেল কলেজগুলোর মতো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে, সব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সব সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সুপারিশ ছিল। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পদক্ষেপ নিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এমবিবিএসসহ স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসহ আসন সংখ্যা ৩ লাখের কাছাকাছি। ডিগ্রি কলেজগুলোয় পাস কোর্সে রয়েছে দেড় লাখের মতো আসন। এর বাইরে কিছু মাদরাসায় ফাজিল (সম্মান) কোর্স রয়েছে। স্নাতক কলেজগুলো বাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে প্রায় ৫০ হাজার।