ঢালাওভাবে ছাড় দেয়ায় ঋণ পরিশোধে সক্ষমরাও সুযোগ নেওয়ায় সমস্যা সৃষ্টি
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ঋণের কিস্তি পরিশোধের নীতিমালা শিথিলতার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।। অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপি হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন ঋণগ্রহীতারা। এর ফলে টানা দুই বছর তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুযোগ পেলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নীতিমালা শিথিলতার সময়সীমা বাড়ানোয় দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন ব্যাংকাররা; তবে অনেকটা স্বস্তিতে আছেন ঋণখেলাপিরা। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঢালাও ছাড়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের পাশাপাশি ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা সুযোগ নিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেকেরই ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তারাও এর সুযোগ নিচ্ছেন। ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় নতুন উদ্যোক্তাদের মাঝে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে ব্যাংকের।
এ বিষয়ে ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান গতকাল জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিস্তি পরিশোধে ছাড় দিয়ে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত তাদের সাথে এ সুবিধা নিয়ে নিচ্ছেন অন্যরাও। চলমান সময়ে অনেক খাতের অবস্থা ভালো। অনেকেরই ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু ঢালাওভাবে ছাড় দেয়ায় ঋণ পরিশোধের সক্ষমরাও এ সুযোগ নিয়ে নিচ্ছেন। এখানেই বড় সমস্যা। আমরা অনেকেরই বুঝিয়ে ঋণ আদায়ের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ঠিকই আমানতকারীদের অর্থ সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছরের জানুয়ারি থেকেই ঋণখেলাপি নীতিমালায় ছাড় দেয়া হচ্ছে। প্রথমে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত, পরে সময় বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এভাবে ধারাবাহিকভাবে সময় বাড়াতে বাড়াতে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এভাবে সময় দেয়ায় পুরো দুই বছরই শেষ পৃষ্ঠার পর কোনো কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ না করেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। এতে ব্যাংকগুলো চরম বেকায়দায় পড়ে গেছে। এমনিতেই বিভিন্নভাবে ছাড় দেয়ায় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে একধরনের অনীহা বিরাজ করছে বড় বড় ঋণ খেলাপিদের মধ্যে, এর ওপর ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ায় আরো সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা। ফলে ব্যাংকের ঋণ আদায় কমে গেছে। বিপরীতে আমানতকারীদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষে সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এককালীন এক্সিট সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণ বা বিনিয়োগকারীরা ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ সহজতর করতে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের শেষ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হলে এক্সিট সুবিধা বহাল থাকবে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন যাবত ঋণের কিস্তি আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। নতুন করে ঋণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। এক দিকে ব্যাংকের আয়ের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে, সেই সাথে আমানতকারীদের আমানত ফেরত দেয়ারও সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। কয়েকজন শীর্ষ নির্বাহী জানান, সময় বাড়ানোর আগে অবশ্যই ব্যাংকারদের মতামত নেয়া উচিত ছিল। কারণ, ব্যাংকাররা জানেন, প্রকৃতপক্ষে কারা ক্ষতিগ্রস্ত। কাদের ঋণ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাত ও অর্থনীতির স্বার্থে ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেয়ায় বিপাকে পড়ে গেছে ব্যাংকিং খাত। এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এখনো শেষ হয়নি। এ কারণে বেশির ভাগ ব্যবসায়ীদেরই ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা এখনো নেই। অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারছেন না। এমনি পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়লে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। সব কিছু বিবেচনা করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময়বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে।