হাইকোর্টে ৩৩ ধারা বাতিল : ইউএনও শুধু সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন

উপজেলা পরিষদে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কমল ইউএনওদের

সমীকরণ প্রতিবেদন:

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ঘোষণাসংক্রান্ত আইনের এমন বিধান বেআইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারায় ইউএনওদের যে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, সেখানে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার কোনো জবাবদিহি নেই, যার কারণে উপজেলা পরিষদের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে, যা সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেহেতু ৩৩ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সে কারণে এই ধারা বাতিল ঘোষণা করা হলো। এসংক্রান্ত রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ রায় দেন। রায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বিভিন্ন আমন্ত্রণপত্রে উপজেলা পরিষদের পরিবর্তে উপজেলা প্রশাসন লেখার যে সিদ্ধান্ত, সেটিও অবৈধ ঘোষণা করেছে আদালত। একই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের পরিবর্তে এখন থেকে উপজেলা পরিষদ লিখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন।’ ৩৩-এর (২) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিপালন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলি পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পাদন করিবেন।’ এই বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের সংগঠনের সভাপতি পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রিনা পারভীন, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহম্মেদ ও ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আক্তার। ঐ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ঐ হাইকোর্ট রুল জারি করে। রুলে উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করল হাইকোর্ট। আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি, হাসান এম এস আজিম, মো. মিনহাদুজ্জামান লীটন এবং রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী শুনানি করেন।

ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। এছাড়া ইউএনওরা বিভিন্ন আমন্ত্রণপত্রে উপজেলা পরিষদ না লিখে উপজেলা প্রশাসন লিখে থাকেন এটাও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে উপজেলা পরিষদ আইনের ২৯ ধারায় উপজেলা পরিষদের যেসব কমিটি রয়েছে, সেগুলো সেভাবে এবং সরকার যেসব কমিটি করে দেবে তা সেভাবে পরিচালিত হবে। কমিটির ব্যাপারে আদালত কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। তিনি বলেন, হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেছে, এখন থেকে ইউএনওরা সাচিবিক সহায়তা দেবেন উপজেলা পরিষদকে এবং উপজেলা পরিষদের কাছে জবাবদিহি করবেন।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, হাইকোর্ট ৩৩ ধারা অবৈধ ঘোষণা করলেও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন ইউএনওরা। উপজেলা পরিষদ আইনের ২৯ ধারায় যেসব কমিটি হয়, এগুলোর মধ্যে যেগুলো সরকারি অর্থায়ন আছে, সেগুলোর সভাপতি হিসেবে ইউএনওরাই দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, রায় পর্যালোচনা করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রিটকারী হারুন-আর-রশীদ হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি স্তরে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ কাজ করবেন নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের অধীনে, এটাই সাংবিধানিক নির্দেশনা। কিন্তু মনগড়া পরিপত্র দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা খর্ব করার চর্চা চলছে। হাইকোর্টের এই রায় যুগান্তকারী। রায়ের বাস্তবায়ন চাই।