সমীকরণ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে প্রসংশা করলেও উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে হলে বাংলাদেশের সামনে তিনটি চ্যালেঞ্জ দেখছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশনস) অ্যালেক্স ভ্যান ট্রটসেনবার্গ বলেন, আগামীতে উন্নয়নশীল দেশে যেতে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো, ডিজিটালাইজেশন, জলবায়ু পরিবর্তন ও শিক্ষার মান উন্নয়ন। এসবের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জের সময়ে আমরা বাংলাদেশকে এর উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনের পথে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০৩১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করতে প্রয়োজনীয় রিফর্মগুলো করতে হবে। আর পদ্মা সেতুতে ঋণ না দেয়ায় বিশ্বব্যাংক কি অনুতপ্ত? এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রটসেনবার্গ বলেন, আমি বাংলাদেশের ৫০ বছরের উন্নয়ন দেখছি। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৩৬৫ প্রকল্প চলমান। এর মধ্যে একটি প্রকল্পে ঋণ দেয়া বা না দেয়ার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। ৫০ বছরে ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
শেরেবাংলা নগরের বিআইসিসিতে গতকাল সফরের শেষ দিনে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক এবং ব্যাংকের সিনিয়র এক্সটারনাল এফেয়ার্স অফিসার মেহরীন আহমেদ মাহবুব।
ভ্যান ট্রটসেনবার্গ বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশ অচিন্তনীয় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এর মধ্যে অন্যতম কোভিড-১৯, ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তন। তিনি বলেন, আইডিএ হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে সস্তা ঋণ। পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ৪০ বছরে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে পরিশোধযোগ্য এ ঋণ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দেয়া হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক আইইডিএভুক্ত দেশ বাজেট সহায়তা চায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশের চাহিদাও দেখা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, সামষ্টিক রাজস্ব আহরণ ও আর্থিক খাতের সংস্কার, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার মাধ্যমে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে বাংলাদেশ। আমরা এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে এই প্রচেষ্টাগুলোতে পূর্ণ সমর্থন দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, বিগত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়ন যাত্রার অংশ হতে পেরে বিশ্বব্যাংক গর্বিত। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের উদাহরণ। বিশেষ করে দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাস ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তিনটি বিষয়ে খুব ভালো করেছে- নারীর ক্ষমতায়ন, মানুষের ওপর বিনিয়োগ ও পরিবেশ। তবে আরো ভালো করতে হবে।
বিশ্বব্যাংক এমডি বলেন, করোনা সঙ্কট ও ইউক্রেন-রাশিয়া সঙ্কটে অনেক দেশ বাজেট সহায়তা চায়। তারপরও আমরা সবার চাহিদার মাপকাঠির ওপর ভিত্তি করে অল্প করে বাজেট সহায়তা দেবো। কোভিডের কারণে অনেক দেশের অর্থ দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম দেশ থেকে ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রথম উন্নয়ন সহযোগীদের অন্যতম হিসেবে এই যাত্রায় অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখেছি উন্নয়ন কিভাবে কাজ করে।
তিনি বলেন, গত পাঁচ দশকের অসাধারণ যাত্রায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অবিচল অংশীদার ছিল। ১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদস্য হয়। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক প্রথম প্রকল্প হাতে নেয়, যার মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি ও শিল্পের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্মাণ ও বিদ্যুৎ খাতের সহায়তার জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলারের জরুরি পুনরুদ্ধার ঋণ দেয়া হয়। একই সময়ে বিশ্বব্যাংক চারটি প্রকল্প পুনরায় চালু করে, যা স্বাধীনতার আগে অনুমোদিত।
বিশ্বব্যাংক এমডি আরো বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রমে আইডিএর আওতায় অনুদান, সুদবিহীন ঋণ এবং নমনীয় ঋণ হিসেবে প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৫৬টি চলমান প্রকল্পে প্রায় ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন করছে।
বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাদেরকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। আমরা তাদের ব্যাপারে সরকারের নেয়া প্রকল্পে সহায়তা দিয়েছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে রিফুজির সংখ্যা বাড়ছে। তাদের জন্যও আমাদেরকে সহায়তা দিতে হচ্ছে। তবে আমরা আশা করি রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান হবে, তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। কক্সবাজারে তাদের জন্য অবকাঠামো ও স্যানিটেশনে বিশ্বব্যাংক অনুদান দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করব সরকারকে সব সময় এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সহায়তা করতে।
