উচ্চ আদালতে র্দুর্নীতি প্রতিরোধ; টাস্কফোর্স স্থায়ী সমাধান নয়

উচ্চ আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে সম্প্রতি একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। স্বয়ং প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন টাস্কফোর্সটি গঠন করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার আলমগীর মোহাম্মদ ফারুকীর নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্সের অন্য দুই সদস্য হলেন আপিল বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার এবং হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার। দুর্নীতি দেশের সর্বস্তরে অতি ছোঁয়াচে রোগের মতো ছড়িয়ে গেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। আর সংক্রামক রোগজীবাণু যেমন কাউকে ছাড় দেয় না, তেমনি দুর্নীতিও অনুকূল পরিবেশ পেলে সমাজের কোনো অংশকেই সংক্রমণ করতে বাকি রাখে না। এ জন্য যেখানে শতভাগ সততা প্রত্যাশিত সেই বিচারালয়ও দুর্নীতির ছোবলে আক্রান্ত হয়েছে। শুধু আক্রান্ত হয়নি বরং তথ্য-উপাত্তে জানা যাচ্ছে, দেশের সব সেবাখাতের মধ্যে বিচার বিভাগে দুর্নীতি হয় বেশি। এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একাধিক জরিপ রিপোর্ট আমাদের সামনে আছে। তাতে যেসব তথ্য উঠে এসেছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ২০১০ সালের রিপোর্টে কোন আদালতে বিচারপ্রার্থীদের কত টাকা ঘুষ দিতে হয় সেই তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে উঠে আসে। জরিপ থেকে জানা যায়, উচ্চ আদালতে গড়ে ঘুষ দিতে হয় ১২ হাজার ৭৬১ টাকা, হাকিম আদালতে গড়ে ছয় হাজার ৫৯৮ টাকা এবং জজ আদালতে ছয় হাজার ১৭৮ টাকা। টিআইবির জরিপের আগে আদালতে দুর্নীতির বিষয়ে জানতেন কেবল ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজরাই। সাধারণ মানুষ বিশ্বাসও করতে পারত না এমন একটি বাস্তবতা তাদের চোখের আড়ালে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতি ঘোষণা করেছিলেন। দুর্নীতি-অনিয়ম রোধে কয়েকটি কমিটিও গঠন করেন তিনি। এর ধারাবাহিকতায় প্রায় দেড় বছর পর এখন উচ্চ আদালত থেকে দুর্নীতি দূর করার লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠন করা হলো। এটি নিঃসন্দেহে শুভ উদ্যোগ। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, টাস্কফোর্স প্রতিদিন সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন দফতরে অভিযান চালাচ্ছে। হাতেনাতে ধরা পড়ছেন কেউ কেউ। কিছু ক্ষেত্রে অনিয়মে জড়িতদের মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আর অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হচ্ছে বিভাগীয় মামলা। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিতে তিনি এক মিনিটও দেরি করবেন না। তা সে অভিযুক্ত ব্যক্তি উচ্চপদস্থ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাই হোন বা সুপ্রিম কোর্টের কর্মচারীই হোন। এই কার্যক্রম যদি নিয়মিত ও ধারাবাহিকভাবে অবাধে চলতে পারে তাহলে কিছু সুফল পাওযা যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিপদে পড়া মানুষের যখন আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না কেবল তখনই তারা আদালতের শরণাপন্ন হন। তারা আশা করেন, অন্তত আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন। কিন্তু সেখানে যদি ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হয় তাহলে এর বিপরীতে বিচার প্রভাবিত করতেও একই দাওয়াই ব্যবহৃত হবে তাতে সন্দেহ কী? টিআইবির ২০১০ সালের জরিপে অংশ নেয়া ৮৮ শতাংশ খানা বিচার বিভাগের দুর্নীতির শিকার বলে জানা গিয়েছিল। যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্নীতির শিকার খানার সংখ্যা ছিল ৮০ শতাংশের কম। অথচ এ দেশে পুলিশের বদনাম সবচেয়ে বেশি। এসব কারণে রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থবিত্তের প্রভাবে বিচার পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কা কোনোভাবে উড়িয়ে দেয়া যায় না। দুর্নীতি রোধে টাস্কফোর্সের কার্যক্রম একটি আপৎকালীন ব্যবস্থা হতে পারে। যেমন রোগ হলে আমরা ওষুধ সেবন করি। নিরোগ স্বাস্থ্যবান শরীরের জন্য রোগ প্রতিরোধ সবচেয়ে জরুরি। আইন আদালতের ক্ষেত্রে সেটি হলো সততার শিক্ষা ও অনুশীলন। সততার শিক্ষা ও অনুশীলন থেকে জাতি হিসেবে আমরা অনেক দূরে।ধ