ধর্ম ডেস্ক: অন্যায়ভাবে মানুষের মনে কষ্ট দেয়া পাপের কাজ। মসজিদ ভাঙা আর মানুষের মন ভাঙা সমান কথা। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলমানের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘মুসলমান তাকে বলে, যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে’। অর্থাৎ যার ক্ষমতা ও ভাষার অপব্যবহার থেকে সাধারণ মুসলমানরা নিরাপদ থাকে। তাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ দ্বারা অন্যরা কষ্ট পায় না। যাদের দুর্ব্যবহার ও রুঢ় আচরণের কারণে মানুষ তাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়, তাদের কাছে ভিড়ে না, মানুষ তাদের অপছন্দ করে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের নিকৃষ্ট মানুষ বলে হাদিসে উল্লেখ করেছেন। আর বৈধ উপায়ে মানুষকে খুশি করা সওয়াবের কাজ।
এটা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ। মানুষকে কষ্ট না দেয়া এবং খুশি করার উদারনীতির কারণে তার জন্য বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচার-প্রসার সহজ হয়েছিল। এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মানুষকে খুশি করার একটি চমৎকার ঘটনা উল্লেখ করছি। এক গরিব লোক কিছু আঙ্গুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপহার নিয়ে এলো। পাশেই তার অনেক সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) আঙ্গুরের থোকা থেকে একটা আঙ্গুর ছিঁড়ে মুখে দিলেন, তারপর এক এক করে সব আঙ্গুর খেয়ে ফেললেন, কিন্তু পাশে বসে থাকা সাহাবিদের কাউকেই আঙ্গুর খেতে সাধলেন না। চোখের সামনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এভাবে আঙ্গুর খাওয়া দেখে গরিব লোকটি অনেক খুশি হলো, তারপর রাসুলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। লোকটি চলে যাওয়ার পর এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আজ আপনি কিভাবে একাই সব আঙ্গুর খেয়ে ফেললেন, আমাদের কাউকে একটু ভাগ দিলেন না! আপনি তো কখনো এমনটি করেন না! সাহাবির প্রশ্ন শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুচকি হেসে উত্তর দিলেন, আমি একাই সব আঙ্গুর খেয়ে ফেলেছি, কারণ আঙ্গুরগুলো টক ছিল। যদি আমি তোমাদেরকে আঙ্গুর খেতে দিতাম, তাহলে খাওয়ার সময় তোমাদের মুখভঙ্গি দেখেই হয়তো লোকটি বুঝে ফেলত এবং কষ্ট পেত। তাই আমি চিন্তা করে দেখলাম, যদি আঙ্গুরগুলো আমি একাই আনন্দের সঙ্গে খেয়ে ফেলি, তাহলে লোকটি খুশি হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পুরো জীবনটাই এমন অসংখ্য উদাহরণে পরিপূর্ণ। আমরা সেগুলো অনুসরণ ও অনুকরণ করতে পারলে পৃথিবীর রং পাল্টে যেত।