ইভিএম ব্যবহার : জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে কোনো বিতর্ক কাম্য নয়
- আপলোড টাইম : ০৯:২১:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৩২৬ বার পড়া হয়েছে
সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এ বিষয়ে খোদ ইসিতেই যে মতভেদ রয়েছে, তা প্রকাশ পেয়েছে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (লিখিত আপত্তি) দিয়ে একজন নির্বাচন কমিশনারের সভাস্থল ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সর্বশেষ সংলাপে যে ২৩টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল তার মধ্যে ১২টি ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিলেও আওয়ামী লীগ ও জোটভুক্ত দলগুলো পক্ষে মতামত দেয়। সংলাপের পর নির্বাচন কমিশনও বলেছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, নয়তো নয়। এ প্রেক্ষাপটে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাস দু’য়েক আগে তড়িঘড়ি করে ইভিএম ব্যবহারের বিধান আইনে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে আরপিও সংশোধন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দেবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা মনে করি, নির্বাচনে ইভিএমসহ যেম কোনো ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতৈক্য হওয়া দরকার। ইসি আয়োজিত সংলাপে বিএনপিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল যেখানে ইভিএমের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে, সেখানে তাদের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই ইভিএমে ভোটগ্রহণে ইসির এত আগ্রহ কেন- এ প্রশ্ন অযৌক্তিক নয়। আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেই তা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। নির্বাচন যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন ইভিএমে ভোট গ্রহণের অতিউৎসাহী এ সিদ্ধান্ত কাউকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ করে দেবে না- এমন নিশ্চয়তা কি ইসি দিতে পারবে? ইভিএম নয়, বরং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, সেটা নিশ্চিত করাই বেশি জরুরি। এটা সত্য, প্রযুক্তির কল্যাণে সহজে ও দ্রুততম সময়ে যে কোনো কাজ করা সম্ভব এবং জীবনের নানা ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন দেখা যায়। ইভিএমে তেমন অনেক সুবিধা হয়তো পাওয়া যাবে; কিন্তু সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের ঐকমত্য ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হবে বলেই মনে হয়। পূর্ববর্তী সংলাপে যেহেতু অনেক রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিরোধিতা করেছে, নতুন করে সংলাপ ডাকা হলে তারা এটির পক্ষে কথা বলবে- এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসি অবশ্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখে, তবে তা যেন অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি তৈরি না করে এবং প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে না ফেলে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। তাছাড়া নির্বাচনের প্রাক্কালে আরপিও সংশোধন, প্রকল্প পাস, সংলাপ ও ভোটগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষিত করে তোলা যাবে কিনা, সেটিও ভেবে দেখার বিষয়। কোনো ধরনের ‘হ-য-ব-র-ল’ পরিস্থিতির জন্ম না দিয়ে বরং সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইসি সামনে অগ্রসর হবে এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সচেষ্ট হবে, এটাই কাম্য।