
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ভোটের সময় ইন্টারনেটের গতি স্লো যদি অপকৌশল হিসেবে করা হয়, তাহলে তা নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত করবে। এটা সরকারের অনুধাবন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, সরকার যদি স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করে, নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিশ্বাস করে, তাহলে নির্বাচনের দিন এই জিনিসগুলো না করলেই বোধ হয় ভালো হবে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গতকাল নির্বাচন কমিশনে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসির (আরএফইডি) সাথে সাংবাদিক নীতিমালা নিয়ে মতবিনিময় সভায় সিইসি এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যান্য কমিশনার, ইসি সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভোটে সাংবাদিকদের অবাধ সুযোগ তৈরিতে বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরেন আরএফইডির সাধারণ সম্পাদক মুকিমুল হাসান হিমেল। সংগঠনের সভাপতি সাইদুর রহমান, সাবেক সভাপতি সোমা ইসলাম, ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খানসহ আরএফইডির সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।
আরএফইডির লিখিত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের অনুমতিপ্রাপ্ত কার্ডধারী সাংবাদিকদের সরাসরি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে দিতে হবে। কেন্দ্রে প্রবেশে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতির বিষয়টি বাতিল করতে হবে। ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচারে ইসির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। ভোটকক্ষে নির্বাচনি কর্মকর্তা, এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না বলে যে ধারা আছে তা বাতিল করতে হবে। অনুমতিপ্রাপ্ত সাংবাদিকরা নিষেধাজ্ঞা না মানলে রিটার্নিং অফিসার কিংবা নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার হাতে এই ক্ষমতা দেয়া যাবে না। নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোন কোন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কাভারেজের সাংবাদিক কার্ড পাবে সে জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। প্রেস ক্লাব বা সাংবাদিক নেতাদের হাতে এই কর্তৃত্ব দেয়া যাবে না। সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় আরপিওতে যে সংস্কার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল তা কার্যকরের দাবি জানান তারা।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইন্টারনেট স্লো করা যদি অপকৌশল হিসেবে করা হয়, তাহলে নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত করবে। কেননা এতে সন্দেহের উদ্রেক হবে। অনেকেই ভাববেন অপকর্মের জন্যই এটা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যতই উনাদের বাধা দেয়া হবে, ততই উনাদের মনে হবে ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়।’ এই ধরনের একটা ভাব সৃষ্টি হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি স্বচ্ছতা লাগবে। স্বচ্ছতা না হলে আমরা আবারো গত নির্বাচন যেভাবে বিতর্কিত হয়েছে, হয়তো পুরোটাই সত্য নয়। কাজেই স্বচ্ছতার বিষয়টাতে আমাদের জোর দিতে হবে।
পুলিশের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে সিইসি বলেন, যদি নির্বাচন কমিশন থেকে আপনাদের অথরাইজ করা হয়, সেই অথরিটির ওপর পুলিশ আপনাদের ঢুকতে দিচ্ছে না, আপনারা ছবি তুলে দেখাবেন। আমাদের বিষয়টি অবহিত করতে পারবেন। এই লক্ষ্যে যাতে আপনাদের বাধা না দেন যতটুকু আমরা বিষয়টা দেখব। সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে যদি স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে আমাদের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগটা বেড়ে যাবে। গণমাধ্যমের বিপক্ষে কখনোই আমাদের অবস্থান নয়।