ইন্টারনেট আসক্তি বাড়ছে

প্রযুক্তি প্রতিবেদন
যতই দিন যাচ্ছে মানুষের ইন্টারনেট নির্ভরতা বাড়ছে। প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে ‘অফলাইন-অনলাইন’ মিলেমিশে একাকার। বাজার-সদাই থেকে অফিসিয়াল মিটিং, সবই হচ্ছে অনলাইনে। ইন্টারনেট জীবনকে দিচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্য ও গতি। সেই সাথে বাড়ছে আসক্তি, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এখনই ইন্টারনেট আসক্তি রোধে সচেতন না হলে দিতে হবে চরম মূল্য। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের ৩১টি দেশের মানুষের ওপর করা একটি জরিপে ওঠে এসেছে, বিশ্বের প্রায় ৪২০ মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেটে আসক্ত। যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ছয় ভাগ। তারা দিনে গড়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় ইন্টারনেটে কাটান। ওই গবেষণায় প্রকাশ হয়, বিশ্বের ৪০ ভাগের বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। খ্যাতনামা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, বাংলাদেশেও ক্রমবর্ধমান হারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়ছে। একই সঙ্গে অতিমাত্রায় ইন্টারনেট আসক্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এদের অধিকাংশই কিশোর-তরুণ। অভিভাবকদের সহায়তা প্রদানভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা ‘কমন সেন্স মিডিয়া’র একটি জরিপে দেখা গেছে, শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সী মানুষই ইন্টারনেটে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করেন। তবে আসক্তির হার বেশি কিশোর-তরুণদের মধ্যে। ৫৯ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন তাদের সন্তানরা বিভিন্ন মোবাইল ডিভাইস ও ইন্টারনেটে আসক্ত। ওই গবেষণায় অংশ নেয়া ৫০ শতাংশ শিশু-কিশোর নিজেরাই মনে করে তারা ইন্টারনেট আসক্ত। কানাডায় ২০১৮ সালের একটি প্রাইভেট সার্ভে অনুযায়ী, মাত্র ৩ বছর বয়সেই শিশুদের ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। দুই তৃতীয়াংশ তরুণ-তরুণী জানান, ইন্টারনেট তাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, ইন্টারনেট আসক্তির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অপ্রয়োজনে নেট ব্রাউজ করা। নেট ছাড়া অসহায় বোধ করা। এবং নিয়মিত বিরতিতে ব্রাউজ না করলে ছটফট অনুভব করা। তিনি বলেন, ইন্টারনেট আসক্তরা দিনের বড় অংশ এতে অপব্যয় করেন। এ সময় তারা ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটান। একে অপরের পোস্টে লাইক-কমেন্ট করেন। কিশোর-তরুণরা ইউটিউবে ভিডিও দেখেন কিংবা টিকটকের মতো মাধ্যমে নিজের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার নেশায় মগ্ন থাকেন। ইন্টারনেটে গেম খেলেও প্রচুর সময় নষ্ট করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মনোচিকিৎসা নিতে আসাদের মধ্যে একটা বড় অংশ ইন্টারনেট আসক্ত। তারা প্রায়ই ‘ভার্চুয়াল ও রিয়েল লাইফ’কে গুলিয়ে ফেলেন। এতে পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রে নানা জটিলতায় পড়েন তারা। ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এর প্রায় অর্ধেক রুগী ভয়াবহ ইন্টারনেট আসক্তিতে ভুগছেন। হাসপাতালটির বিশেষজ্ঞরা ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানান, সেখানে ১৪ থেকে ২৯ বছর বয়সীরাই ইন্টারনেট আসক্তির বড় শিকার। তীব্র ইন্টারনেট-আসক্তির কারণে তারা ‘ভয়াবহ আচরণগত ও মানসিক সমস্যায়’ ভুগছে। দিন যত যাচ্ছে কিশোর-তরুণদের মধ্যে এ সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে বলে তারা লক্ষ্য করেছেন। ইন্টারনেট ব্যবহার যত বাড়ছে ততই গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, গেমসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপার্জন বাড়ছে তরতর করে। ‘ইকোনমিস্ট’-এর প্রতিবেদনে প্রকাশ, গুগল ও অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের সবচেয়ে বেশি আয় করা ২৫টি অ্যাপই হলো গেমের। চীনের টেনসেন্ট শুধু গেমের কারণেই টেক জায়ান্টে পরিণত হয়েছে।