চুয়াডাঙ্গায় ই-কমার্স খাতে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের নির্দেশনা
বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় কেনা-কাটায় জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ই-কমার্স। ঘরে বসে পণ্য পছন্দ করে তা ঘরে বসেই ডেলিভারি পেয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। এতে করে বেড়েছে সুবিধা। তবে সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও কম নয়। ওয়েবসাইট কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পণ্যের ছবি দেওয়া থাকলেও উল্লেখ থাকে না মূল্য। কমেন্টে মূল্য জানতে চাইলে বলা হয় ইনবক্স চেক করতে। এতেই বিব্রত অবস্থায় পড়ে যান ক্রেতারা। শুধু তাই নয়, সুযোগ বুঝে ইচ্ছা মতো দাম হাকিয়ে বসেন অনলাইন উদ্যোক্তারা। ফলে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তা। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের প্রজ্ঞাপনে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’-এর ৩.১.২ উপধারায় বলা হয়েছে- ‘ওয়েবসাইট, মার্কেটপ্লেস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা সংশ্লিষ্ট সকল বিবরণ ও শর্তাবলী যেমন- পণ্য ও মূল্য ফেরতের শর্তাবলী পরিবর্তন, সরবরাহের সময়সীমা ইত্যাদি বিষয়ে সকল শর্তাবলী সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।’
এদিকে, চুয়াডাঙ্গার ক্রেতাদের জন্য স্বস্তির খবর দিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এখন থেকে অনলাইনে পণ্য বিক্রি করতে হলে পণ্যের ছবির সাথে মূল্য লিখতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল বুধবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দিয়েছে। এর ফলে রক্ষা হবে ভোক্তার অধিকার। এদিকে, এ নির্দেশনার পর স্বস্তি প্রকাশ করে বিষয়টি সময়াপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন নেটিজেনরা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, “চুয়াডাঙ্গার সমস্ত অনলাইন সেলার/ফেসবুকভিত্তিক পণ্য বিক্রয়কারী ব্যবসায়ীদের জ্ঞাতার্থে। আপনারা অনলাইনে, নিজেদের আইডিতে বা ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন পেজে পণ্য বিক্রয়ের যে বিজ্ঞাপন দেন সেখানে অবশ্যই পণ্যের সাথে মূল্য উল্লেখ করে দিবেন। বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা গিয়েছে আপনারা মূল্য উল্লেখ না করে তা জানার জন্য ইনবক্স করতে বলেন, এটা এক ধরণের ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য। মূল্য হবে ওপেন এবং এটা জানার অধিকার সবারই আছে। এ বিষয়ে কোনো রাখঢাক নয়। তাই এখন থেকে এ বিষয়টি মেনে সবাইকে ব্যবসা পরিচালনার অনুরোধ করছি নতুবা অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সাদিকুর রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বর্তমান সময়ে অনলাইনে কেনা-কাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমি এখন বেশিরভাগ পণ্য অনলাইন থেকেই ক্রয় করি। তবে পণ্যের সাথে পণ্যের মূল্য উল্লেখ না থাকায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।’ জেসমিন আক্তার নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘ফেসবুকে পণ্যের ছবি দেওয়া থাকে। কিন্তু মূল্য দেওয়া থাকে না। মূল্য জানতে চাইলে ইনবক্স চেক করতে বলা হয়। ইনবক্সে ইচ্ছামতো দাম চাওয়া হয়।’ বিল্লাল হোসেন নামের একজন জানান, ‘যারাই অনলাইনে খাবার বা ভোগ্যপণ্য বিক্রি করে তারা মূলত মানুষের সাথে প্রতারণা করে। এরা পণ্যের বিজ্ঞাপনের সাথে কখনোই দাম উল্লেখ করে না। দাম জানতে চাইলে ইনবক্সে দাম জানায়, যা বাজার বাজার মূল্য ছাড়া অনেক বেশি। তাই দাম শুনে দ্বিতীয় বার আর এসএমএস করতে মন বলে না।’
এ বিষয়ে পাপিয়া সুলতানা নামের এক অনলাইন উদ্যোক্তা জানান, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ইনবক্সে মূল্য জানানোটাকে সমর্থন করি। তার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ আছে। যা একজন ক্রেতা বিরক্ত হলেও, বিক্রেতার দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তিযুক্ত। বিক্রেতা যখন ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে ব্যবসা করেন, তখন তার পেইজের সপ সেকশনে বা পেইজের পোস্টে পণ্যের দাম সহ বিস্তারিত সব কিছুই লেখা থাকে। তবে যখন সেই পণ্যের প্রচারণার জন্য কোন গ্রুপ বা ব্যক্তিগত পোস্টে পণ্যের সম্পর্কে তথ্য দেন, তখন কেউ যদি তার নিচে কমেন্টে দাম জানতে চান, তবে ইনবক্সে দাম জানানোর মাধ্যমে সেই সম্ভাব্য কাস্টমারের সাথে তার মিথস্ক্রিয়ার একটি জায়গা তৈরি হয়। অনলাইনে বেচা-কেনায় এই মিথস্ক্রিয়াটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। পণ্যের প্রচারণার সেই পোস্টের কমেন্টে দাম লিখে দেওয়ার মাধ্যমে শুধু দামটাই সম্ভাব্য ক্রেতাকে জানানো যায়। কিন্তু ইনবক্সে ম্যাসেজের মাধ্যমে ক্রেতা যদি পণ্য নাও কেনেন, তবে ঠিক কী কারণে তিনি কিনবেন না সেটা বিক্রেতা জানতে পারেন। এবং তার পরিসংখ্যান মোতাবেক তিনি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আরও অনেক বেশি সম্ভাব্য ক্রেতার ডাটা সংগ্রহের মাধ্যমে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় সম্ভাব্য ক্রেতা শুধু দাম জানতে চাওয়ার মাধ্যমে আগ্রহ দেখালেও, পোস্টে দাম দেখে আর আগ্রহ দেখান না। কিন্তু সেই একই জন বিক্রেতার সাথে ইনবক্সে তার মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে পণ্য কিনেন। যেই বিক্রয়টি শুধুমাত্র কমেন্ট সেকশনে দাম জানিয়ে উত্তর দেয়াতে কখনই সম্ভব হতো না। কোন গ্রুপ বা ব্যক্তিগত পোস্টের কমেন্ট সেকশনে দাম না জানানোর কারণ হতে পারে সেই পোস্টের রিচ বাড়ানো বা বেশি বেশি মানুষের কাছে সেই পোস্ট পৌঁছে দেওয়ার কৌশল। কেননা কমেন্ট করা মানেই সম্ভাব্য ক্রেতার ফলোয়ারদের ওয়ালেও নোটিফিকেশন যাওয়া। যদি দাম জানতে চাওয়া প্রথম কমেন্টের উত্তরেই দাম লিখে দেওয়া হতো, পরের কমেন্টগুলো হয়ত হতো না।’
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সজল আহমদে জানান, ‘আমরা চুয়াডাঙ্গায় ইদানিং লক্ষ্য করছি অনলাইন/ফেসবুকে পণ্যের বিজ্ঞপনে মূল্য উল্লেখ থাকে না। বিক্রয়ের জন্য সব পণ্যের দাম জানার অধিকার ভোক্তার রয়েছে। মূল্য হবে ওপেন, এখানে গোপন করার কোনো সুযোগ নেই। এটা ভোক্তার সাথে এক ধরণের প্রতারণা। ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ এ স্পষ্ট করে বলা হয়েছে ওয়েবসাইট, মার্কেটপ্লেস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পণ্য ও মূল্য সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে সবার জ্ঞাতার্থে একটি নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা এটি তদারকি করব। কোনো ভোক্তা অভিযোগ করলে আমরা তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’