সমীকরণ প্রতিবেদন:
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এই নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন। ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে তিনি হারিয়েছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
৪৮০ কেন্দ্রের ফলাফলে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩। এর মধ্যে ভোট দেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০ ভোটার। যা মোট ভোটের ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবার ২০১৩ সালের নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী এম. এ মান্নানের কাছে হেরেছিলেন আজমত। বলা যায়, এবারের হারে গাজীপুরে তাঁর রাজনীতির পথ অনেকটাই সংকুচিত হলো।
এদিকে ফল ঘোষণার পরপরই সেখানে উপস্থিত গাজীপুরের সাবেক মেয়র, আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া জাহাঙ্গীর আলম নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন- ‘এ জয় গাজীপুরে মানুষের।’
পুরো নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের কারণে ধারণা ছিল ভোটগ্রহণের পর দুয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হয়তো ফলাফল ঘোষণা হয়ে যাবে। তবে সেই সময় গিয়ে ঠেকল রাত দেড়টায়। বেলা সোয়া একটার কিছু পরে ৪৮০ কেন্দ্রের মধ্য সবগুলোর ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। এ সময় বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ছাড়া আর কোনো মেয়র প্রার্থী বা তাদের সমন্বয়কদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
এ সময় পুলিশের উপকমিশনার ইব্রাহীম খান বলেন, ‘ফল ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো মিছিল এবং স্লোগান দেওয়া যাবে না। উৎসবমুখর পরিবেশে যেভাবে ভোট দিয়েছেন। যাই ফলাফল হয়েছে সবাই মেনে, সংযত থাকবেন।’
বিএনপি নির্বাচনে না থাকলেও টঙ্গীর প্রভাবশালী বিএনপি পরিবারের সদস্য সরকার শাহনুর ইসলাম (রনি সরকার) স্বতন্ত্র প্রার্থী (হাতি) পেয়েছেন ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিনের ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট, মাছ প্রতীকের আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪, গোলাপ ফুলের মো. রাজু আহমেদ ৭ হাজার ২০৬ ও ঘোড়া প্রতীকের হারুন অর রশিদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে। নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থীর সঙ্গে সবচেয়ে কম ভোটে প্রার্থীর পার্থক্য ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৮।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীকে গাজীপুরের মেয়র নির্বাচিত হন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে মেয়াদ পূরণের আগেই নিজের পদ হারাতে হয় তাকে। দল থেকেও সাময়িক বরখাস্ত হন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পর হন স্থায়ী বহিষ্কার। কিন্তু নিজের বয়স্ক মাকে নিয়ে মাঠে ছিলেন। আম্মাজান চলচ্চিত্রের শীর্ষ সংগীত আম্মাজান আম্মাজান আপনি বড় মেহেরবান, এই গান বাজিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ছুটেছেন গাজীপুরের এ মাথা থেকে ও মাথা। ২৫ মের নির্বাচনের ফলাফল নিজেই বলে দিল অনেক প্রশ্নের উত্তর।
গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট: ইসি আলমগীর
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। জনগণ ও ভোটাররা সন্তুষ্ট। প্রার্থীরা সন্তুষ্ট। আপনাদের প্রতিনিধিরা (সাংবাদিক) সন্তুষ্ট। গণমাধ্যমেই তারা এ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।’ গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। ইসি বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন সব প্রার্থীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’
এদিন সকাল ৮টায় দেশের সবচেয়ে বড় এ সিটি করপোরেশনের ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বড় কোনো গোলযোগ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট শেষ হয় বিকেল ৪টায়।
‘স্বশিক্ষিত’ জায়েদা দেশের দ্বিতীয় নারী সিটি মেয়র:
বয়স ৭০ বছর। নির্বাচনী হলফনামায় পেশা ‘ব্যবসা’ লেখা হলেও মূলত তিনি গৃহিণী। শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’। এ ‘স্বশিক্ষিত’ জায়েদা খাতুনই বসতে যাচ্ছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ারে। সূত্রে জানা গেছে, জায়েদা খাতুন এখন দেশের দ্বিতীয় নারী সিটি মেয়র। দেশের প্রথম নারী সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন তিনি। ওই নির্বাচনে আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার। আইভীর পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে সিটি করপোরেশনের মেয়র হচ্ছেন জায়েদা। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান।
নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী- জায়েদা খাতুনের জন্ম ১৯৬২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। পিতার নাম সামছুল ইসলাম, মাতা আফাতুন। স্থায়ী ঠিকানা কানাইয়া, গাজীপুর সদর, গাজীপুর। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’। তার স্বামী মো. মিজানুর রহমান পাঁচ বছর আগে মার গেছেন। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য নেই।
হলফনামায় জায়েদার পেশা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে ‘ব্যবসা’, যা থেকে বছরে আয় দেখানো হয়েছে তিন লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসাবে নগদ অর্থ দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা। ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডে শেয়ারমূল্য দেখিয়েছেন দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা।