সমীকরণ ডেস্ক: ভারতের আসামের একটি মার্কেটে শুক্রবার জঙ্গি হামলায় এক হামলাকারীসহ কমপক্ষে ১৫ জন নিহত ও আরো ১৫ জন আহত হয়েছে। হামলার সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ওই বিদ্রোহী নিহত হয়। আসামের বোড়ো বিদ্রোহীরা ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে জানান রাজ্য পুলিশের প্রধান মুকেশ সহায়। ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, আসামের কোকরাঝর জেলার বলজান এলাকায় শুক্রবার সাপ্তাহিক একটি মার্কেটে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে কয়েক সন্ত্রাসী। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও পাল্টা গুলি ছুড়তে শুরু করে। প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলে সংঘর্ষ। নিহত সন্ত্রাসীর কাছ থেকে একটি একে-৪৭ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই মার্কেটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য পাঠানো হয়। গুলিবর্ষণ ছাড়াও ঘটনাস্থলে একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা এবং তিনটি দোকান লুট করে।
আসামের পুলিশ প্রধান মুকেশ সহায় জানান, ভারতের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোড়োল্যান্ড (এনডিএফবি) ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, ঘটনার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। বিদ্রোহী অধ্যুষিত রাজ্যটিতে এই প্রথম দিনে-দুপুরে এ ধরনের হামলা চালানো হলো। ভারতের আসন্ন স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখেই গৃহীত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই ঘটল এ ঘটনা। স্থানীয় প্রতিরক্ষা প্রধান লে. কর্নেল এস নিউটন বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ, হামলাটি তিনজন মিলে চালিয়েছে, যাদের একজনকে হত্যা করা হয়েছে। বাকি সন্ত্রাসীদের ধরতে এলাকাটিতে তল্লাশি চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।’ এদিকে দিল্লি থেকেও একটি সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বোড়ো বিদ্রাহীদের একটি দল হামলাটি চালিয়েছে বলে ধারণা তাদের। সম্প্রতি দলটি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে (এনআইএ) হামলার হুমকি দিয়েছিল। তবে এখনো পর্যন্ত কেউ ঘটনার জন্য দায় স্বীকার করেনি। উল্লেখ্য, আসামের বোড়ো সম্প্রদায় স্থানীয় অধিবাসীদের প্রায় ১৬ শতাংশ। এরা অপেক্ষাকৃত অনুন্নত। বোড়ো স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ১৯৯৩ সালে অল-বোড়ো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন আন্দোলন শুরু করে। ক্রমেই এটা সহিংস রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয় এবং ২০০৪ সালে বোড়োল্যান্ড টাইগার্স ফোর্সের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে বোড়ো টেরিটরিয়েল কাউন্সিল গঠিত হয়। বোড়োরা বাঙালি মুসলিম অভিবাসীবিরোধী। তারা মূলত ভারতের বোড়োল্যান্ডে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ২০১২ সালে বাঙালি মুসলিম অভিবাসীদের সঙ্গে বেশকিছু দাঙ্গা হয়েছে বোড়োদের। ওই দাঙ্গায় কয়েকশ অভিবাসী নিহত এবং কয়েক হাজার গৃহহীন হয়। এর দুই বছর পর ২০১৪ সালে কোকরাঝারে এক হামলায় নিহত হয় ৬২ জন।