আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পুলিশ ছিল রায়ট মুডে নিরপেক্ষ ভূমিকায়। এর আগের কয়েকটি ইউপি নির্বাচনে পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কম-বেশি সমালোচনা থাকলেও, এবারে ছিল না মোটেও। নির্বাচন উপলক্ষে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের বক্তব্য অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনের আগে এবং পরে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের পাড়া-মহল্লায় সাধারণ ভোটারদের প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশ।
গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে আলমডাঙ্গার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গ্রহণের বেশ কিছু দিন আগে থেকেই এই নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা কী থাকবে, তা নিয়েও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আলোচনা ছিল। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে নানা ধরনের মন্তব্যকে ছাড়িয়ে শেষ-মেষ পুলিশের ভূমিকা ছিল নিরপেক্ষ। নির্বাচনের আগের দিন গত শনিবার আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার লক্ষে পুলিশের অফিসার-ফোর্সদের সঙ্গে ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়।
ওই ব্রিফিং প্যারেডে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘জনগণের টাকায় আমাদের বেতন হয়। পুলিশ নির্বাচনী সহিংসতা শতভাগ রুখে দিবে। যে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা বেশি রয়েছে, ভোটাররা তাকে ভোট দিবেন। ভয়-ভীতি ছাড়াই কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে কোনো পক্ষ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা কিছুতেই হতে দিবে না। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ১৩টি ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে রায়ট মুডে। যেকোনো অপশক্তি, ভয়-ভীতি, বাধা জয় করার মতো শক্তি বাংলাদেশ পুলিশের আছে। পুলিশ, আনসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন, তারা ঈমানের সহিত দায়িত্ব পালন করবেন।”
এদিকে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য নির্বাচনে পর্যাপ্ত সংখ্যক অফিসার, ফোর্স নিয়োগ করা হয়। ইউনিফর্ম পুলিশের পাশাপাশি ২৬টি মোবাইল টিম, ১৩টি স্ট্রাইকিং টিম, দাঙ্গা দমন মোকাবিলায় রায়ট গিয়ারে ২ প্লাটুন এপিবিএন টিম, ২ প্লাটুন র্যাবের টিম, ৩ প্লাটুন বিজিবি টিম, সাদা পোশাকে ডিএসবি নজরদারি, ডিবির ঈগল-১ টিম এবং অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রোবকাপ টিম উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। এছাড়াও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে গেলে দেখা যায়, সাধারণ ভোটারদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইনও দেখা যায়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা সমর্থকদের মধ্যে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও ভোট দিতে কারো সমস্যা হয়েছ এমন অভিযোগ নেই।
আলমডাঙ্গার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ ধরনের নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে প্রশংসায় ভাসছে পুলিশ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের পাড়া-মহল্লায় সাধারণ ভোটাররা করছেন পুলিশের প্রশংসা। ভোট দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় কালিদাসপুর গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছি। কোনো সমস্যাই হয়নি। পরিবেশও খুব ভালো এবং শান্ত ছিল। পুলিশ চাইলে এ রকম প্রত্যেকটি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারে। নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিরপেক্ষ এবং প্রশংসনীয়।
হেমায়েতপুর কেন্দ্রে ভোট দিয়ে কলেজপড়ুয়া তরুণ ভোটার মিজানুর রহমান জানান, ‘এটি আমার প্রথম ভোট দেওয়া। ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ আমার খুব ভালো লেগেছে। আর সকলেই বলছেন, পুলিশের অবস্থান নিরপেক্ষ।’
এদিকে, পুলিশের এ নিরপেক্ষ অবস্থানের প্রশংসা করছেন সাংবাদিক, সাধারণ ভোটারসহ সমাজের সচেতন শ্রেণি। তাঁরা বলছেন, আলমডাঙ্গার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পুলিশের নিরপেক্ষ ও নির্বাচনী সহিংসতা প্রতিরোধী অবস্থান সত্যিই প্রশংসনীয়।