আলমডাঙ্গার জোড়গাছায় স্ত্রী হত্যা অভিযোগের ঘটনায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা গ্রামে হিরা খাতুন (২৩) নামের এক গৃহবধূকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী শাহীন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। গত রোববার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের জোড়্গাছা গ্রামের মাদ্রাসাপাড়ার এ ঘটনা ঘটে। নিহতের বড় ভাই এ ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। গতকাল সোমবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ বছর আগে আলমডাঙ্গা উপজেলা নাগদাহ ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামের মাদ্রাসাপাড়ার খবির উদ্দীনের ছেলে শাহীনের সঙ্গে দামুড়হুদা উপজেলার রামনগর গ্রামের ফজলুল হকের মেয়ে হিরা খাতুনের বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী শাহীন যৌতুক দাবি করত। টাকা দিতে অস্বীকার করলে স্বামী শাহীনসহ পরিবারের লোকজন তাকে নির্যাতন করত।
এলাকার মেম্বার শাহ জামাল বলেন, গত কয়েকদিন আগেও নিহত হিরা খাতুন তার বাপের বাড়ি থেকে বিশ হাজার টাকা নিয়ে আসে। এবার কি নিয়ে ঘটনা ঘটেছে তা জানিনা। লোক মারফতে শুনেছি, শাহিনের মা গৃহবধু হিরাকে অত্যাচার করত। রোববার কোনো এক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হলে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন হিরা খাতুন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হিরাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, শাহিন খুব ভালো ছেলে। সে চাষাবাদ করে সংসার চালাই। আবার স্থানীয়দের কেউ কেউ বলেন, শাহীনের পরকীয়া নিয়ে হিরার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া বিবাধ লেগে থাকত। এরই জের ধরে রোববার দুপুর দুইটার দিকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। শাহীন তার স্ত্রীকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। একপর্যায়ে শ্বাসরোধ করে মুখে কিটনাশক বিষ ঢেলে দেয়। পরে জানাজানি হলে আহত হিরা খাতুনকে প্রতিবেশিরাসহ শাহীনের পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিস্থিতি বেকায়দা হলে হিরা খাতুনের মরদেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে সটকে পড়ে শাহিনের পরিবার।
নিহতের বড় ভাই তারা চাঁদ জানান, বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় টাকা নিতো শাহিন। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি চার বছরের সন্তান আছে। সন্তান ও বোনের সুখের কথা ভেবে এ যাবতকাল নগত এক লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে শাহিনকে। টাকা না দিলে নির্যাতন করত শাহিন ও তার পরিবার। এছাড়া শাহীন অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে আমার বোন কিছু বললেই মারধর করত। আমার বোনকে শাহিন ও তার পরিবারের লোকজন মেরে ফেলেছে।
এদিকে, রোববার সদর হাসপাতাল লাশ জোড়গাছা গ্রামে নিলে এলাকাবাসির মধ্যে রহস্যের দানা বাধে। রাতে স্থানীয় মেম্বর দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করে। এসময় খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে হিরা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। গতকাল সকালে ময়নাতদন্ত শেষে হিরা খাতুনের মরদেহ তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকালই বাদ আছর জানাজা শেষে রামনগর গ্রাম্যকবরস্থানে লাশের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।
এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবির জানান, এ বিষয়ে নিহতের বড় ভাই আলমডাঙ্গা থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা করেছে। গতকাল ময়নাশেষে নিহতের লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তাস্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।