চুয়াডাঙ্গা শনিবার , ২১ জানুয়ারি ২০২৩

আমবয়ানে দ্বিতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমা শুরু

নিউজ রুমঃ
জানুয়ারি ২১, ২০২৩ ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সমীকরণ প্রতিবেদন:
শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা ওসমানের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে নিজামুদ্দিন মারকাজ আয়োজিত ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপ। শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে জুমার বৃহত্তর জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন দিল্লি নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা সাদ কান্দলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্দলভি। বাদ জুমা সংক্ষিপ্ত বয়ান করেন তাবলিগ জামাতের (একাংশ) স্বাগতিক বাংলাদেশের মুরব্বি ওয়াসিফুল ইসলাম। শুক্রবার বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা সাদ কান্দলভির ছেলে মাওলানা সাঈদ বিন সাদ কান্দলভী ও মাগরিবের পর বয়ান করেন মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্দলভী। এ ছাড়া সকাল ১০টায় বয়ান করেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা ইউসুফ। আগামীকাল রোববার জোহরের নামাজের আগে এ পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা। এ পর্বের শেষ দিনে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা সাঈদ বিন সাদ কান্দলভী। শুক্রবার জুমার জামাতকে কেন্দ্র করে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লি ছাড়াও রাজধানীসহ পাশের এলাকার মুসল্লিরা এ নামাজে শরিক হন। ইজতেমার এ ধাপে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৫৮টি দেশের ৪ হাজার ৭৯১ জন মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ইংরেজি খিমায় (তাঁবু) ২,৬৫১ জন, উর্দু খিমায় ৯৮৪ জন, আরবি খিমায় ৩,৩৩৫ জন ও বাংলা খিমায় ৮২১ জন অবস্থান করছেন। কূটনৈতিক বিধিনিষেধ সত্ত্বেও এবারই প্রথম ইসরাইলের ৪০ জন মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। ফিলিস্তিন থেকেও এসেছেন পাঁচজন মুসল্লি। এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ইসরাইল থেকে আগত মুসল্লিরা ময়দানে যোগ দিয়েছেন। তারা ভিন্নভাবে আমাদের দেশে এসেছেন। তাদের ফিরিয়ে দেয়া যাবে না। তারা ধর্মীয় কাজে অংশ নিয়েছেন।’ এ দিকে শীতের তীব্রতা কমে যাওয়ায় এবং অনুকূল আবহাওয়া ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকায় ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা স্বাচ্ছন্দ্যে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিদের বয়ান শুনছেন এবং ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল রয়েছেন। উগান্ডা থেকে প্রথমবার ইজতেমা ময়দানে অংশ নেয়া আলী মোহাম্মদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে ময়দানে এসে পৌঁছেছি। পরিবেশ খুব ভালো লাগছে। তবে বাংলাদেশে এসে কোনো সিম কার্ড পাইনি। ফোন করতে পারছি না।’ ভারতের গুজরাট থেকে আগত আহসান উল্লাহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বিদেশী খিত্তায় স্থাপিত টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা নিতে এসে বলেন, ‘ময়দানের পাশে চিকিৎসার ব্যবস্থাটি ভালো হয়েছে। চিকিৎসা শেষে ওষুধ পেয়েছি।’ ইজতেমা ময়দানে টু্যুরিস্ট পুলিশের কন্ট্রোলরুমের দায়িত্ব থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘ইজতেমায় আসা বিদেশী মুসল্লিদের জন্য ট্যুরিস্ট সিম কার্ডের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মুসল্লিরা আমাদের কাছে সিম কার্ড চাইছেন। আমরা মুসল্লিদের এ ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করতে পারছি না।’
ইজতেমায় আসছেন না মাওলানা সাদ, এসেছেন তার ৩ ছেলে ও জামাতা:
তাবলীগ জামায়াতের বাংলাদেশের শীর্ষ শূরা সদস্য প্রকৌশলী ওয়াসেফুল ইসলাম জানান, ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্দলভি পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারো ইজতেমায় আসছেন না। তবে বৃহস্পতিবার সকালে একটি জামাতসহ তার তিন ছেলে ও মেয়ের জামাতা ময়দানে এসেছেন। তারা হলেন, মাওলানা সাদ কান্দলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্দলভী, মেজো ছেলে মাওলানা সাঈদ কান্দলভী ও ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস কান্দলভী এবং মেয়ের জামাতা মাওলানা হাসান। তারা বিদেশী তাঁবুর ১নং ভবনে বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষস্থানীয় শূরা সদস্যদের সাথে অবস্থান করছেন। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের কাছ থেকে মাঠ বুঝে নেয়া হয়। পরে দুপুরে দ্বিতীয় পর্ব আয়োজনের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে সাদ অনুসারী মুরুব্বিরা ইজতেমা ময়দান বুঝে নেন। এর পর থেকেই শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি। বুধবার থেকেই দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন ইজতেমা ময়দানে জড়ো হতে শুরু করেন।
প্রথম দিনের বয়ানে যা বলা হয়:
বয়ানে বলা হয়, জুমার দিন, একটি পবিত্র দিন, সপ্তাহের সেরা দিন। সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এটি হলো সবচেয়ে বড় ও সম্মানী দিন। এটি দুই ঈদের চেয়েও ফজিলতপূর্ণ। এ দিনে হজরত আদম আ:কে সৃষ্টি করা হয়। এ দিনই দুনিয়া ধ্বংস হবে। এ দিনে আল্লাহর কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। জুমার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে গোসল-ওজু করে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর থেকে তার নেকি লেখা হয়। আমরা যা করব আল্লাহকে রাজি করার জন্য করব। আল্লাহ পাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে এবং সারা দুনিয়ায় মানুষের মধ্যে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে।
বিভিন্ন ভাষায় বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ:
বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০ জন শূরা সদস্য ও বুজর্গ পর্যায়ক্রমে বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও ইজতেমায় আগত বিভিন্ন দেশের-ভাষা মুসল্লিদের জন্য বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিকভাবে অনুবাদ করা হচ্ছে। বিদেশী মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরুব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান।
শেষ দু’দিন যারা বয়ান করবেন:
বিশ্ব ইজতেমার এ পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানিয়েছেন, শনিবার ফজরের নামাজের পর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ইয়াকুব, তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ, এদিন জোহরের পর বয়ান করবেন তুর্কির মাওলানা ওমর। এরপর আসরের নামাজের পর বয়ান করবেন মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্দলভী, এ সময় তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা ওসামা ইসলাম। মাগরিবের নামাজের পর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা আব্দুস সাত্তার, তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম। রোববার বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিনে ফজরের নামাজের পর বয়ান করবেন মাওলানা মুরসালিন। এরপর হেদায়তী বয়ান ও আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্দলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্দলভী। এ সময় তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম।
দ্বিতীয় ধাপে একজনের মৃত্যু:
ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপে যোগ দিতে এসে বরগুনার মফিজুল ইসলামের (৭৫) মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় ধাপের মিডিয়া সমন্বয়কারী মো: সায়েম জানান, ময়দানে নামাজে জানাজা শেষে মফিজুলের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পকেটমারের কবলে শ্রীলঙ্কান নাগরিক:
টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে একজন শ্রীলঙ্কান নাগরিকের মোবাইল ফোন খোয়া গেছে। শুক্রবার দুপুর ১২টায় ময়দানের বিদেশী কামরায় নির্ধারিত দোকান থেকে পণ্য কেনার সময় এ ঘটনা ঘটে। দোকানের সামনে ভিড়ের মধ্যে পকেটমার কৌশলে মোবাইল ফোনটি লুটে নেয় বলে তাবলিগ সাথীরা ধারণা করছেন। এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় হারোনো সাধারণ ডায়েরি করেছেন শ্রীলঙ্কান নাগরিক মো: নাদিম। খোয়া যাওয়া স্যামসং এস-২২ (আলট্রা) মডেলের মোবাইল সেটটির মূল্য বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় দেড় লাখ টাকা বলে জানান তিনি। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে টঙ্গী পূর্ব থানার ডিউটি অফিসার এসআই ফাতেমা জানান, খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, এটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পুরো ইজতেমা ময়দান টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকায়। কিন্তু আলোচিত ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় সাধারণ ডায়েরির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতে কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয় সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে।

 

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।