
সারা বিশ্বে খাদ্যসঙ্কট দিন দিন বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও যুদ্ধ এ অভাবকে আরও বাড়াচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের কিছু অঞ্চলে জমি অনাবাদি পড়ে আছে। বিশেষ করে আফ্রিকায় বিপুল উর্বর জমি থাকলেও মহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশে রয়েছে খাদ্যাভাব। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল আফ্রিকার এ দেশগুলো। এদিকে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির। এখানে চাষাবাদে মানুষের বিপুল অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ থাকলেও আবাদি জমির অভাব রয়েছে। কৃষকদের বড় একটি অংশের কোনো জমি নেই। আবার একটি অংশের রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য জমি। এ অবস্থায় আফ্রিকা মহাদেশে পড়ে থাকা অনাবাদি জমি লিজ নিয়ে কিংবা অন্য কোনো চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ কৃষিকাজ করতে পারে। সে লক্ষ্যে এক যুগের বেশি সময় ধরে আলাপ-আলোচনা চললেও কার্যকর কিছু হয়নি।
৭ ফেব্রুয়ারি কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর খামারবাড়িতে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আলোচনার বিষয় ছিল বহির্বিশ্ব বিশেষ করে আফ্রিকায় চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদের সম্ভাবনা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পুষ্টি প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদ। তিনি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তিন বছর বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হয়ে কাজ করেছেন। সেখানকার আবহাওয়া, মাটি ও ফল-ফসল নিয়ে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রবন্ধে তিনি বলেন, আফ্রিকার সম্পদ এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। সেখানকার তাপমাত্রা ও মাটি বাংলাদেশের মতো। কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এক হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করে। সেসব দেশে ১০০ জনের বেশি বসবাস করে না। মাইলের পর মাইল জনবসতিশূন্য। অথচ রয়েছে উর্বর অনাবাদি ভূমি। আমের মৌসুম নিয়ে তিনি বলেন, কেনিয়াতে এমন সময় আম পাকে যখন আমাদের দেশে এর ফলন হয় না। এভাবে সেখানে আমবাগান করে সহজে অফ সিজনে সেটি দেশে নিয়ে আসা যায়। এভাবে বহু ফল-ফসল উৎপাদন করে আমাদের মতো ঘাটতির দেশে নিয়ে আসা যায়।
আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত। এ ছাড়া ভুট্টা ও গমের চাহিদাও বেড়েছে। এসব খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। আফ্রিকায় এসব খাদ্য অনায়াসে উৎপাদন করা যায়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, তানজানিয়ায় বাংলাদেশী একটি কোম্পানি আরো এক যুগ আগে ৩০ হাজার হেক্টর জমি লিজ নিয়ে ধান, ভুট্টা ও ডালের আবাদ শুরু করে। এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি অনুবিভাগ রয়েছে। এটি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পতিত জমিতে আবাদের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। কেনিয়া, উগান্ডা, জাম্বিয়া, সেনেগাল, লাইবেরিয়া, আইভরি কোস্ট ও ঘানার মতো দেশে সহজে সফল হওয়া যায় বলেও আশা করছেন ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এখানেও দেখা যাচ্ছে। ১০ বছর ধরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এটি আলোচনায় থাকলেও এর কার্যকারিতা নেই। খামারবাড়িতে আয়োজিত ওই কর্মশালায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. রুহুল আমিন বলেন, সরকার চাষাবাদ করে না। সরকার উৎসাহিত করতে পারে তার মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে। খবরে জানা যাচ্ছে, ভারত ও পাকিস্তান এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে কৃষিজমি আবাদ করছে।
আফ্রিকার কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষায় নিযুক্ত। আমাদের সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমে এসব দেশে বাংলাদেশের উজ্জ্বল একটি ভাবমর্যাদা রয়েছে। তারা ওইসব দেশে যেকোনো প্রকল্পে বাংলাদেশীদের আনন্দের সাথে স্বাগত জানাবে। অথচ বাংলাদেশে রয়েছে বিপুল বেকারত্ব। বিশেষ করে কৃষিকাজের সাথে নিযুক্ত শ্রমিকের বড় একটি অংশ বেকার কিংবা ছদ্মবেকার। প্রতি বছর এ বেকার মানুষের সাথে আরো ২০-২৫ লাখ নতুন বেকার যুক্ত হচ্ছে। অন্য দিকে, বাড়িঘর শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে দ্রুত হারে দেশে কৃষিজমি কমে আসছে। এ অবস্থায় আফ্রিকায় পতিত কৃষিজমি আবাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যেতে পারে আমাদের। এতে দারিদ্র্যপীড়িত আফ্রিকার দেশগুলোও লাভবান হতে পারে।