ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দর্শনায় শেষ হলো ‘অনির্বাণ একুশে নাট্যমেলা’

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৬:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ৭১৭ বার পড়া হয়েছে

দুই বাংলার নাট্য কর্মীদের পদচারণায় মুখোরিত ছিলো দর্শনা শহর
আওয়াল হোসেন/ওয়াসিম রয়েল:
দুই বাংলার সাংস্কৃতিক কর্মীদের অংশগ্রহণে দর্শনায় শেষ হলো ‘বুক জুড়ে স্বাধীনতা হও’ শীর্ষক ‘হিসাব অনির্বাণ একুশে নাট্যমেলা’। স্থানীয় ডাকবাংলো চত্বরে অনির্বাণ থিয়েটারের আয়োজনে ১৫ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ৭ দিনব্যাপী চলে এই মহা কর্মযজ্ঞ। ১৫ ফেব্রুয়ারী সকালে শিশুদের বর্ণলিখন, বাক্য লিখন ও চিত্রাংকন প্রতিযোগীতার মধ্যদিয়ে নাট্যমেলার শুভসূচনা আর সন্ধ্যায় উৎসব মঞ্চে ঢাকের সুরে পঞ্চপ্রদীপ জ্বেলে নাট্যমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করা হয়েছিল। মেলার প্রতিদিন ছিলো এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনাসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় এ মেলা।
মেলার শেষ দিনে চুয়াডাঙ্গা অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাটক ‘ক্ষুদিরামকথা’ পরিবেশন করে দর্শকের মনকাড়ে। এর আগে এক আলোচনা সভা ও কোলকাতার বাচীক শিল্পিদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ কথা ও কবিতার আসর অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে ছিলেন অনির্বাণ থিয়েটারের উপদেষ্টা এড. শহীদুল ইসলাম, দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন, অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনির্বাণ থিয়েটারের সভাপতি ফজলুল হক। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন অনির্বাণ থিয়েটারের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন।
একুশে নাট্যমেলার প্রথম দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হিংটিং ছট্ কবিতা আবলম্বনে প্রভাষক মিজানুর রহমানের রচনায় ও আনোয়ার হোসেনের নির্দেশনায় দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটার পরিবেশন করে নাটক হিং টিং ছট্। নাট্যমেলার দ্বিতীয় দিন বিকালে অনুষ্ঠিত হয় কেরু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় স্থানীয় শিল্পিবৃন্দের পরিবেশনায় নজরুল সংগীতের আসর এবং লোকনাট্য দল বনানী ঢাকার পরিবেশনায় মলিয়ের দ্য মাইজার আবলম্বে তারিক আনাম খানের রূপান্তর এবং কামরুন নুর চৌধুরী নির্দেশনায় নাটক ”কুন্জুস” পরিবেশিত হয়। পরের দিন বিকালে দর্শনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় আনন্দধাম সাংস্কৃতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেশগানের আসর এবং রাতে ঢাকা থিয়েটার আর্ট এর পরিবেশনায় নছর মালুম ও ভেলুয়া সুন্দুরী অবলম্বনে এস এম সোলায়মান এর রচনায় রোকেয়া রফিক বেরীর নির্দেশনায় এবং নাটক ”আমিনা সুন্দরী” পরিবেশিত হয়। নাট্যমেলার চতুর্থ দিন বিকালে অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় ঢাকা ছায়ানটের প্রক্তান শিক্ষার্থী ফারিহা মেহজাবিন অন্বেষা ও কলকাতাস্থ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াছমিন সাথী’র যৌথ পরিবেশনায় রবীন্দ্র সংগীতের আসর এবং যশোর বিবর্তনের পরিবেশনায় সাধন আহমেদ এর রচনায় ইউসুফ হাসান এর নির্দেশনায় নাটক ”মাত্ ব্রিং” পরিবেশিত হয়। পরদিন বিকালে আল-হেরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় নীলসেতার এর পরিবেশনায় কালজয়ী বাংলা সিনেমার গানের আসর এবং বিনোদিনী দাসীর জীবন বৃর্ত্তান্ত আমর কথা অবলম্বনে নাট্যরূপ মৈলাক সেন গুপ্ত আশীষ দাসের নির্দেশনায় কলকাতার গোবরডাঙ্গা নকশার পরিবেশনায় নাটক ’বিনোদীনি” ঃ a woman a human’ পরিবেশিত হয়। নাট্যমেলার ষষ্ঠ দিন বিকালে অনুষ্ঠিত হয় আব্দুল ওদুদ শাহ্ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী’র গণসংগীতের আসর এবং কলকাতার শিল্পীমন থিয়েটারের পরিবেশনায় এবং শন্কর তালুকদার এর নিদের্শনায় নাটক “শ্বাসকষ্ট নাটক” পরিবেশিত হয়।
নাট্যমেলার সমাপনী দিন বিকালে দর্শনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় কলকাতার বরণ্য বাচিক শিল্পী সৌমিত্র ঘোষ, ড. বাসুদেব ভট্টাচার্য ও ডা. মৌ ভট্টাচার্যের যৌথ পরিবেশনায় কথা ও কবিতার আসর, রাতে চুয়াডাঙ্গা অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় বজলুর রহমান এর রচনায় এবং এহসাননুর রহমান এর নির্দেশনায় নাটক “ক্ষুদিরাম কথা” পরিবেশন এবং সবশেষে ঢাকার রাসেল হায়দার ও তার দল পরিবেশন করে বাউল সংগীতের আসর।
আয়োজনের দায় নিয়ে অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন-‘সীমান্তবর্তী এই মফস্বল শহরে আমরা বহুকষ্টে দীর্ঘ ২৭ বছর আয়োজনটি ধরে রেখেছি। আগামীতে সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্ঠপোষক ছাড়া এ জাতীয় আয়োজনের ভবিষ্যত কী? তা নিয়ে আমরাও বড়ই সন্দিহান। আমাদের আহ্বান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রসার, বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতি সমৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসুন। একটি অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কৃতি চর্চার কোন বিকল্প নেই। সুতরাং আসুন অবারিত প্রাণ নিয়ে সংস্কৃতির সামিয়ানার নীচে’।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দর্শনায় শেষ হলো ‘অনির্বাণ একুশে নাট্যমেলা’

আপলোড টাইম : ০৯:৩৬:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

দুই বাংলার নাট্য কর্মীদের পদচারণায় মুখোরিত ছিলো দর্শনা শহর
আওয়াল হোসেন/ওয়াসিম রয়েল:
দুই বাংলার সাংস্কৃতিক কর্মীদের অংশগ্রহণে দর্শনায় শেষ হলো ‘বুক জুড়ে স্বাধীনতা হও’ শীর্ষক ‘হিসাব অনির্বাণ একুশে নাট্যমেলা’। স্থানীয় ডাকবাংলো চত্বরে অনির্বাণ থিয়েটারের আয়োজনে ১৫ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ৭ দিনব্যাপী চলে এই মহা কর্মযজ্ঞ। ১৫ ফেব্রুয়ারী সকালে শিশুদের বর্ণলিখন, বাক্য লিখন ও চিত্রাংকন প্রতিযোগীতার মধ্যদিয়ে নাট্যমেলার শুভসূচনা আর সন্ধ্যায় উৎসব মঞ্চে ঢাকের সুরে পঞ্চপ্রদীপ জ্বেলে নাট্যমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করা হয়েছিল। মেলার প্রতিদিন ছিলো এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনাসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় এ মেলা।
মেলার শেষ দিনে চুয়াডাঙ্গা অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাটক ‘ক্ষুদিরামকথা’ পরিবেশন করে দর্শকের মনকাড়ে। এর আগে এক আলোচনা সভা ও কোলকাতার বাচীক শিল্পিদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ কথা ও কবিতার আসর অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে ছিলেন অনির্বাণ থিয়েটারের উপদেষ্টা এড. শহীদুল ইসলাম, দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন, অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনির্বাণ থিয়েটারের সভাপতি ফজলুল হক। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন অনির্বাণ থিয়েটারের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন।
একুশে নাট্যমেলার প্রথম দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হিংটিং ছট্ কবিতা আবলম্বনে প্রভাষক মিজানুর রহমানের রচনায় ও আনোয়ার হোসেনের নির্দেশনায় দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটার পরিবেশন করে নাটক হিং টিং ছট্। নাট্যমেলার দ্বিতীয় দিন বিকালে অনুষ্ঠিত হয় কেরু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় স্থানীয় শিল্পিবৃন্দের পরিবেশনায় নজরুল সংগীতের আসর এবং লোকনাট্য দল বনানী ঢাকার পরিবেশনায় মলিয়ের দ্য মাইজার আবলম্বে তারিক আনাম খানের রূপান্তর এবং কামরুন নুর চৌধুরী নির্দেশনায় নাটক ”কুন্জুস” পরিবেশিত হয়। পরের দিন বিকালে দর্শনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় আনন্দধাম সাংস্কৃতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেশগানের আসর এবং রাতে ঢাকা থিয়েটার আর্ট এর পরিবেশনায় নছর মালুম ও ভেলুয়া সুন্দুরী অবলম্বনে এস এম সোলায়মান এর রচনায় রোকেয়া রফিক বেরীর নির্দেশনায় এবং নাটক ”আমিনা সুন্দরী” পরিবেশিত হয়। নাট্যমেলার চতুর্থ দিন বিকালে অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় ঢাকা ছায়ানটের প্রক্তান শিক্ষার্থী ফারিহা মেহজাবিন অন্বেষা ও কলকাতাস্থ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াছমিন সাথী’র যৌথ পরিবেশনায় রবীন্দ্র সংগীতের আসর এবং যশোর বিবর্তনের পরিবেশনায় সাধন আহমেদ এর রচনায় ইউসুফ হাসান এর নির্দেশনায় নাটক ”মাত্ ব্রিং” পরিবেশিত হয়। পরদিন বিকালে আল-হেরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় নীলসেতার এর পরিবেশনায় কালজয়ী বাংলা সিনেমার গানের আসর এবং বিনোদিনী দাসীর জীবন বৃর্ত্তান্ত আমর কথা অবলম্বনে নাট্যরূপ মৈলাক সেন গুপ্ত আশীষ দাসের নির্দেশনায় কলকাতার গোবরডাঙ্গা নকশার পরিবেশনায় নাটক ’বিনোদীনি” ঃ a woman a human’ পরিবেশিত হয়। নাট্যমেলার ষষ্ঠ দিন বিকালে অনুষ্ঠিত হয় আব্দুল ওদুদ শাহ্ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী’র গণসংগীতের আসর এবং কলকাতার শিল্পীমন থিয়েটারের পরিবেশনায় এবং শন্কর তালুকদার এর নিদের্শনায় নাটক “শ্বাসকষ্ট নাটক” পরিবেশিত হয়।
নাট্যমেলার সমাপনী দিন বিকালে দর্শনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যায় কলকাতার বরণ্য বাচিক শিল্পী সৌমিত্র ঘোষ, ড. বাসুদেব ভট্টাচার্য ও ডা. মৌ ভট্টাচার্যের যৌথ পরিবেশনায় কথা ও কবিতার আসর, রাতে চুয়াডাঙ্গা অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় বজলুর রহমান এর রচনায় এবং এহসাননুর রহমান এর নির্দেশনায় নাটক “ক্ষুদিরাম কথা” পরিবেশন এবং সবশেষে ঢাকার রাসেল হায়দার ও তার দল পরিবেশন করে বাউল সংগীতের আসর।
আয়োজনের দায় নিয়ে অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন-‘সীমান্তবর্তী এই মফস্বল শহরে আমরা বহুকষ্টে দীর্ঘ ২৭ বছর আয়োজনটি ধরে রেখেছি। আগামীতে সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্ঠপোষক ছাড়া এ জাতীয় আয়োজনের ভবিষ্যত কী? তা নিয়ে আমরাও বড়ই সন্দিহান। আমাদের আহ্বান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রসার, বাংলা ও বাঙালি সংস্কৃতি সমৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসুন। একটি অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কৃতি চর্চার কোন বিকল্প নেই। সুতরাং আসুন অবারিত প্রাণ নিয়ে সংস্কৃতির সামিয়ানার নীচে’।