ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাদকের স্বর্গরাজ্য দর্শনার এক শীর্ষ মাদকব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৩৩:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ মে ২০১৮
  • / ৬১২০ বার পড়া হয়েছে

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আকরাম প্রত্যাহার : তদন্ত কমিটি গঠন
মাদকবিরোধী অভিযানে কোনো শৈথিল্য নয় : এই প্রত্যাহার দূর্নীতিগ্রস্থ পুলিশের জন্য সতর্ক বার্তা : এসপি মাহবুবুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদকের স্বর্গরাজ্য দর্শনার এক শীর্ষ মাদকব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নানা সময়ে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে। সর্বশেষ দর্শনার শীর্ষ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু গ্রেফতারের কিছুক্ষণ পরই ৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে ওসি আকরাম নাকি ওই মাদক ব্যবসায়ীকেও এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করেছেন।
জানা যায়, ওসি আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হুমকি-ধামকির ভয় দেখিয়ে মাদকসেবী ও মাদকব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়াও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সে থানায় আটককৃত আসামীদের পরিবারের নিকট ঘুষ দাবি করে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ওসি আকরামকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যে বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসময় তিনি দূর্নীতিগ্রস্থ পুলিশের সতর্ক করে বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে কোন শৈথিল্য নয়। কোনভাবে কেউ যদি কোন মাদক কারবারির সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে তাহলে তাদের কাউকেও ছাড় দেয়া হবে না।
এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার সুশিল সমাজের লোকজন জানান, যেখানে মাদক নির্মূলে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন। যার কারনে মূল ব্যবসায়ীরা থাকছেন ধরা ছোয়ার বাইরে।
এদিকে, ঘুষ ও দুর্নীতির বাইরে গিয়ে মাদক ব্যবসার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা। ফলে জঙ্গি দমন থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ পুলিশের নানা সফলতা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নানা অপরাধে জড়িত থাকা এবং অপেশাদার আচরণের অভিযোগ ওঠার পর প্রমাণের ভিত্তিতে শাস্তি দেয়া হচ্ছে ঠিকই কিন্তু এরপরও থামছে না অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের দুর্নীতি-অনিয়ম। পুলিশ সদর দফতর এসব বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও মাঠপর্যায়ে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বরং উল্টো দৃশ্যই পরিলক্ষিত হচ্ছে।
পুলিশ অ্যাক্ট-১৮৬১ অনুযায়ী, কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়ালে তার বিরুদ্ধে দুই ধরনের বিভাগীয় শাস্তির বিধান রয়েছে। এর একটি লঘুদ-, অন্যটি গুরুদ-। গুরুদ-ের আওতায় চাকরি থেকে বরখাস্ত, পদাবনতি, পদোন্নতি স্থগিতকরণ ও বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ। এছাড়া বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। মামলায় অপরাধ প্রমাণ হলে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে গুরুদ-ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ছোট ছোট অনিয়ম বা অপরাধের জন্য দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার, অপারেশনাল ইউনিট থেকে পুলিশ লাইন বা রেঞ্জে সংযুক্ত করে লঘুদ- দেয়া হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মাদকের স্বর্গরাজ্য দর্শনার এক শীর্ষ মাদকব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৫:৩৩:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ মে ২০১৮

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আকরাম প্রত্যাহার : তদন্ত কমিটি গঠন
মাদকবিরোধী অভিযানে কোনো শৈথিল্য নয় : এই প্রত্যাহার দূর্নীতিগ্রস্থ পুলিশের জন্য সতর্ক বার্তা : এসপি মাহবুবুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদকের স্বর্গরাজ্য দর্শনার এক শীর্ষ মাদকব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নানা সময়ে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে। সর্বশেষ দর্শনার শীর্ষ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু গ্রেফতারের কিছুক্ষণ পরই ৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে ওসি আকরাম নাকি ওই মাদক ব্যবসায়ীকেও এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করেছেন।
জানা যায়, ওসি আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হুমকি-ধামকির ভয় দেখিয়ে মাদকসেবী ও মাদকব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়াও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সে থানায় আটককৃত আসামীদের পরিবারের নিকট ঘুষ দাবি করে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ওসি আকরামকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যে বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসময় তিনি দূর্নীতিগ্রস্থ পুলিশের সতর্ক করে বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে কোন শৈথিল্য নয়। কোনভাবে কেউ যদি কোন মাদক কারবারির সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে তাহলে তাদের কাউকেও ছাড় দেয়া হবে না।
এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার সুশিল সমাজের লোকজন জানান, যেখানে মাদক নির্মূলে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন। যার কারনে মূল ব্যবসায়ীরা থাকছেন ধরা ছোয়ার বাইরে।
এদিকে, ঘুষ ও দুর্নীতির বাইরে গিয়ে মাদক ব্যবসার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা। ফলে জঙ্গি দমন থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ পুলিশের নানা সফলতা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। নানা অপরাধে জড়িত থাকা এবং অপেশাদার আচরণের অভিযোগ ওঠার পর প্রমাণের ভিত্তিতে শাস্তি দেয়া হচ্ছে ঠিকই কিন্তু এরপরও থামছে না অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের দুর্নীতি-অনিয়ম। পুলিশ সদর দফতর এসব বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও মাঠপর্যায়ে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বরং উল্টো দৃশ্যই পরিলক্ষিত হচ্ছে।
পুলিশ অ্যাক্ট-১৮৬১ অনুযায়ী, কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়ালে তার বিরুদ্ধে দুই ধরনের বিভাগীয় শাস্তির বিধান রয়েছে। এর একটি লঘুদ-, অন্যটি গুরুদ-। গুরুদ-ের আওতায় চাকরি থেকে বরখাস্ত, পদাবনতি, পদোন্নতি স্থগিতকরণ ও বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ। এছাড়া বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। মামলায় অপরাধ প্রমাণ হলে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে গুরুদ-ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ছোট ছোট অনিয়ম বা অপরাধের জন্য দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার, অপারেশনাল ইউনিট থেকে পুলিশ লাইন বা রেঞ্জে সংযুক্ত করে লঘুদ- দেয়া হয়।