ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা : গ্রেপ্তার ৪

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৯:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ জানুয়ারী ২০২১
  • / ১৬৫ বার পড়া হয়েছে

দর্শনার বড়বলদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্তে নিহতর শফিকের দাফন সম্পন্ন
দর্শনা অফিস:
দর্শনার বড়বলদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত শফিকুল ইসলাম শফিকের (৪৫) লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব নিহতর নামাজের জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ৪ আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যা ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই মামলার প্রধান আসামীসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করায় দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান কাজলসহ পুলিশকে সাধারণ গ্রামবাসী সাধুবাদ জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে জমিজমা সংক্রান্তের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে নিহত হন শফিক। ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে যায় ঘাতকেরা। ওইদিনই খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় দর্শনা থানা-পুলিশ। পরে এ ঘটনায় নিহতর ছেলে আসাদুজ্জামান শান্ত বাদি হয়ে দর্শনা থানায় গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে আবুল কালামকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দুজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে দর্শনা থানা-পুলিশ সীমান্ত এলাকা জুড়ে রাতভোর অভিযান চালায়। অভিযানে ঘটনার দিন রাতেই মোছা. তাজিরা নামের এক নারী আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ তাজিরাকে গ্রেপ্তারের পরেও অন্য আসামীদেরকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রাখে। পরে হত্যা মামলার প্রধান আসামীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানাধীন পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের বড়বলদিয়া গ্রামের মাঝপাড়ার শুকুর আলীর ছেলে শফিক বছর দুয়েক আগে গ্রামের বগা নামের জনৈক ব্যক্তির নিকট হতে আড়াই কাঠা বসত জমি ক্রয় করে। সে ক্রয়কৃত জমি গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ঘর-জমাই কালামের দখলে রয়েছে। এ জমি নিয়ে উভয় পরিবারের সাথে প্রায় প্রায় ছোট-খাটো বিরোধ লেগে থাকত। তা নিয়ে গত শুক্রবার উভয় পরিবারের মধ্যে বসে সমস্যার সমাধান হয়। যা বাংলা চৈত্র মাসে জমি দখলমুক্ত করে শফিককে দিয়ে দেবে কালাম। সে কথা মেনে নেওয়ার পর ওইদিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে গ্রামের বাজার হতে শফিক নিজ বাড়ি ফিরছিল। সে বাড়ি যাওয়ার সময় পথিমধ্যে কালামের বাড়ির নিকট পৌঁছালে কামাল হোসেন, আব্দুস ছাত্তারের ছেলে কালামের ঘর জামাই সুলতানসহ (৪২) তার পরিবারের লোকজন শফিকুলের পথে গতিরোধ করে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটির একপর্য়ায় কালামসহ তার পরিবারের লোকজন শফিকের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা শফিকের মাথায় আঘাত করলে রক্তাক্ত জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে শফিক। এসময় প্রতিবেশীসহ স্থানীয় লোকজন দৌঁড়ে ঘটনাস্থলে পৌছে শফিককে মৃত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখতে পাই। এ ঘটনার পর হামলাকারীরা স্বপরিবারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতর সহদর বিল্লাল হোসেন ও ঘাতক হত্যাকারী ঘরজামাই কালাম উদ্দিন আহত হন। খবর পেয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাব্বুর রহমান কাজল ও ইন্সপেক্টর তদন্ত (ওসি) শেখ মাহবুবুর রহমানসহ থানার অফিসার এবং সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ হত্যা ঘটনায় নিহত শফিকের ছেলে আসাদুজ্জামান শান্ত বাদী হয়ে দর্শনা থানায় গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে আবুল কালামকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে দর্শনা থানা পুলিশ সীমান্ত এলাকা জুড়ে রাত-ভোর চালায় সাঁড়াশি অভিযান। এ অভিযানে ঘটনার দিন রাতে হত্যা মামলার প্রধান আসামী আবুল কালামের বড় মেয়ে ও ইউনিয়নের ওসমানপুর (বেদেপোতা) গ্রামের ওমেদুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. তাজিরা খাতুনকে (৪০) গ্রেপ্তার করেন। পুলিশের অব্যাহত অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় মৃত আমির হোসেনের ছেলে হত্যা মামলার প্রধান আসামী আবুল কালামকে (৬৫) ও স্ত্রী মেগীরন নেছা (৫৫) এবং ওসমানপুর (বেদেপোতা) গ্রামের ওমেদুল ইসলামের ছেলে সাগর হোসনকে (২০)।
এদিকে নিহত শফিকুল ইসলাম শফিকের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শনিবার বাদ আসর গ্রামের বাড়ি পৌঁছালে পরিবারের কান্নার আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। শেষবারের মত নিহতর মৃতদেহ এক নজর দেখার জন্য গ্রামের নারী-পুরুষ ভিড় জমায় শফিকুলের বাড়িতে। এরপর মাগরিব বাদ গ্রামের কবরস্থানে মোরহুমের নামাজের জানাযা শেষে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।
দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাব্বুর রহমান কাজল জানান, ‘জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে দর্শনা থানাধীন পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের বড়বলদিয়া গ্রামের মাঝপাড়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় শফিকুল ইসলাম শফিক নামের এক কৃষককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল হতে নিহতর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। নিহতর ছেলে বাদি হয়ে দর্শনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলার প্রধান আসামীসহ চারজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকী আসামীদেরকেও দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা : গ্রেপ্তার ৪

আপলোড টাইম : ১০:২৯:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ জানুয়ারী ২০২১

দর্শনার বড়বলদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্তে নিহতর শফিকের দাফন সম্পন্ন
দর্শনা অফিস:
দর্শনার বড়বলদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত শফিকুল ইসলাম শফিকের (৪৫) লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব নিহতর নামাজের জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ৪ আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যা ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই মামলার প্রধান আসামীসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করায় দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান কাজলসহ পুলিশকে সাধারণ গ্রামবাসী সাধুবাদ জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে জমিজমা সংক্রান্তের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে নিহত হন শফিক। ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে যায় ঘাতকেরা। ওইদিনই খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় দর্শনা থানা-পুলিশ। পরে এ ঘটনায় নিহতর ছেলে আসাদুজ্জামান শান্ত বাদি হয়ে দর্শনা থানায় গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে আবুল কালামকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দুজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে দর্শনা থানা-পুলিশ সীমান্ত এলাকা জুড়ে রাতভোর অভিযান চালায়। অভিযানে ঘটনার দিন রাতেই মোছা. তাজিরা নামের এক নারী আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ তাজিরাকে গ্রেপ্তারের পরেও অন্য আসামীদেরকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রাখে। পরে হত্যা মামলার প্রধান আসামীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানাধীন পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের বড়বলদিয়া গ্রামের মাঝপাড়ার শুকুর আলীর ছেলে শফিক বছর দুয়েক আগে গ্রামের বগা নামের জনৈক ব্যক্তির নিকট হতে আড়াই কাঠা বসত জমি ক্রয় করে। সে ক্রয়কৃত জমি গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ঘর-জমাই কালামের দখলে রয়েছে। এ জমি নিয়ে উভয় পরিবারের সাথে প্রায় প্রায় ছোট-খাটো বিরোধ লেগে থাকত। তা নিয়ে গত শুক্রবার উভয় পরিবারের মধ্যে বসে সমস্যার সমাধান হয়। যা বাংলা চৈত্র মাসে জমি দখলমুক্ত করে শফিককে দিয়ে দেবে কালাম। সে কথা মেনে নেওয়ার পর ওইদিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে গ্রামের বাজার হতে শফিক নিজ বাড়ি ফিরছিল। সে বাড়ি যাওয়ার সময় পথিমধ্যে কালামের বাড়ির নিকট পৌঁছালে কামাল হোসেন, আব্দুস ছাত্তারের ছেলে কালামের ঘর জামাই সুলতানসহ (৪২) তার পরিবারের লোকজন শফিকুলের পথে গতিরোধ করে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটির একপর্য়ায় কালামসহ তার পরিবারের লোকজন শফিকের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা শফিকের মাথায় আঘাত করলে রক্তাক্ত জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে শফিক। এসময় প্রতিবেশীসহ স্থানীয় লোকজন দৌঁড়ে ঘটনাস্থলে পৌছে শফিককে মৃত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখতে পাই। এ ঘটনার পর হামলাকারীরা স্বপরিবারে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতর সহদর বিল্লাল হোসেন ও ঘাতক হত্যাকারী ঘরজামাই কালাম উদ্দিন আহত হন। খবর পেয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাব্বুর রহমান কাজল ও ইন্সপেক্টর তদন্ত (ওসি) শেখ মাহবুবুর রহমানসহ থানার অফিসার এবং সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ হত্যা ঘটনায় নিহত শফিকের ছেলে আসাদুজ্জামান শান্ত বাদী হয়ে দর্শনা থানায় গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে আবুল কালামকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে দর্শনা থানা পুলিশ সীমান্ত এলাকা জুড়ে রাত-ভোর চালায় সাঁড়াশি অভিযান। এ অভিযানে ঘটনার দিন রাতে হত্যা মামলার প্রধান আসামী আবুল কালামের বড় মেয়ে ও ইউনিয়নের ওসমানপুর (বেদেপোতা) গ্রামের ওমেদুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. তাজিরা খাতুনকে (৪০) গ্রেপ্তার করেন। পুলিশের অব্যাহত অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় মৃত আমির হোসেনের ছেলে হত্যা মামলার প্রধান আসামী আবুল কালামকে (৬৫) ও স্ত্রী মেগীরন নেছা (৫৫) এবং ওসমানপুর (বেদেপোতা) গ্রামের ওমেদুল ইসলামের ছেলে সাগর হোসনকে (২০)।
এদিকে নিহত শফিকুল ইসলাম শফিকের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শনিবার বাদ আসর গ্রামের বাড়ি পৌঁছালে পরিবারের কান্নার আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। শেষবারের মত নিহতর মৃতদেহ এক নজর দেখার জন্য গ্রামের নারী-পুরুষ ভিড় জমায় শফিকুলের বাড়িতে। এরপর মাগরিব বাদ গ্রামের কবরস্থানে মোরহুমের নামাজের জানাযা শেষে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।
দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাব্বুর রহমান কাজল জানান, ‘জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে দর্শনা থানাধীন পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের বড়বলদিয়া গ্রামের মাঝপাড়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় শফিকুল ইসলাম শফিক নামের এক কৃষককে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল হতে নিহতর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। নিহতর ছেলে বাদি হয়ে দর্শনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলার প্রধান আসামীসহ চারজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকী আসামীদেরকেও দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিতে সক্ষম হবো বলে আশা করছি।’