ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

৭২ চিকিৎসকের মৃত্যু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:০২:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জুলাই ২০২০
  • / ২০৩ বার পড়া হয়েছে

করোনাভাইরাস আক্রান্ত ১৬৯৪ ডাক্তার, ১৩৪৪ নার্স, ১৯১৯ স্বাস্থ্যকর্মী
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের কিছুদিন আগেও সমাজচ্যুত মনে করা হতো। সন্তান আক্রান্ত বাবা-মাকে বাড়ির বাইরে ফেলে আসতো, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে দূরে ঠেলে দিতো। আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে আক্রান্ত হওয়ার জন্য অপরাধীর চোখে দেখতো সকলেই। সেই সময়ও দেশের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। সারিয়ে তুলেছেন হাজার হাজার করোনা আক্রান্ত রোগীকে। এই প্রচেষ্টা এখনো চলমান রয়েছে। রোগীদের সারিয়ে তুলতে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন তারা। চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে এবং রোগীর সংস্পর্শে আসার কারণে আক্রান্ত হয়েছে কয়েক হাজার চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী। প্রতিদিনই বাড়ছে এই সংখ্যা।
জানা যায়, করোনায় চিকিৎসার বিভিন্ন বিভাগের দেশের প্রবীণ এবং অত্যন্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রাণ হারিয়েছেন। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসকরা বলছেন, যারা মৃত্যুবরণ করছেন তাদের বেশিরভাগই সিনিয়র চিকিৎসক এবং একেকজন চিকিৎসা বিজ্ঞানের একেকটি বিভাগে নিজেদেরকে ইনস্টিটিউট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যাদের কাছে তরুণ চিকিৎসকদের অনেক কিছু শেখার ছিল। এসব চিকিৎসককে হারিয়ে জাতির জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। সরকারের ভুলনীতি, নিম্নমানের পিপিই ও সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান, চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের অভাব, উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করার কারণেই এতো সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছেন বলে অভিযোগ চিকিৎসক সংগঠনগুলোর।
ভাইরাসের সাথে লড়াই করে মৃত্যবরণকারী চিকিৎসকের সংখ্যা নিয়ে চিকিৎসক সংগঠনগুলো মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬১জন, বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) তথ্য মতে করোনাভাইরাস এবং উপসর্গে ৭২জন, ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেস্পন্সিবিলিটিজের (এফডিএসআর) তথ্য মতে করোনায় ৬০ জন এবং উপসর্গে ৮জন, আর ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) তথ্য মতে করোনায় ৬১ জন এবং উপসর্গে ৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। বিএমএ’র তথ্য অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৯৪ জন চিকিৎসক, ১ হাজার ৩৪৪জন নার্স ও ১ হাজার ৯১৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী। মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসকদের মধ্যে- ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর মনিরুজ্জামান, প্রফেসর এ মুকাররিম, আজিজুর রহমান রাজু, এমএ মতিন, কাজী দিলরুবা খানম, আমিনা খাতুন, আব্দুর রহমান, মোশাররফ হোসেন, সাইদুর ইসলাম, ওয়াহিদুজ্জামান আকন্দ, মঞ্জুর রশিদ চৌধুরী, তেএম ওয়াহিদুল হক, এহসানুল করিম, মহিউদ্দীন, হাবিবুর রহমান, এনআই খান, মহিদুল হাসান, এহসানুল করিম চৌধুরী, এসএএম গোলাম কিবরিয়া, মির্জা নাজিম উদ্দিন, রাজিয়া সুলতানা, সাখাওয়াত হোসেন, আনোয়ার হোসেন, জলিলুর রহমান, তানজিলা রহমান, গাজী জহিরুল হাসান, মাহমুদ মনোয়ার, একেএম ফজলুল হক, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, সাদেকুর রহমান, নজরুল ইসলাম, তৌফিকুন নেসা, মুজিবুর রহমান, আব্দুল হাই, নুরুল হক, আশরাফুজ্জামান খোকন, শাহ আব্দুল আহাদ, রফিকুল হায়দার লিটন, এমদাদ উল্লাহ খান, শফিকুল ইসলাম, মজিবুর রহমান রিপন, সুনিল কুমার সরকার, বজলুর রহমান, ললিত কুমার দত্ত, আলী আজগর, ইউনুস আলী খান, সমিরুল ইসলাম বাবু, উপেন্দ্র নাথ পাল, এসএম সাইফুল ইসলাম, শহীদুল আনোয়ার, ফিরোজা বানু মিনু, আসাদুজ্জামান রিতু, মোহাম্মদ হোসেন, গোপাল শঙ্কর দে, মহসিন কবির, গোলাম সরোয়ার, রুহুল আমিন, এমএ ওয়াহাব ও কেএম মুন্তাকিম চৌধুরী। উপসর্গে মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসকরা হলেন- ডা. ফেরদৌস রহমান, প্রফেসর আনিসুর রহমান, প্রফেসর মীর মাহবুবুল আলম, সারওয়ার ইবনে আজিজ, সৈয়দ জাফর হোসেন রুমি, আবুল কাশেম খান, আরিফ হাসান, সৈয়দ শাহ নেওয়াজ, সৈয়দ তমিজুল আহসান রতন।
আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে- নরসিংদীতে ৭ জন, গাজীপুরে ৫৮, শরিয়তপুরে ১, নারায়ণগঞ্জে ২৮, টাঙ্গাইলে ৩, কিশোরগঞ্জে ৫৯, মানিকগঞ্জে ৩, ঢাকায় ৬৬৫, মুন্সিগঞ্জে ২২, মাদারিপুরে ৬, গোপালগঞ্জে ১৭, ফরিদপুরে ২, ঝালকাঠিতে ৪, পটুয়াখালীতে ৫, বরিশালে ৩১, ভোলায় ৮, বরগুনায় ২, কুমিল্লায় ৫০, ফেনীতে ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯, রাঙামাটিতে ৪, নোয়াখালীতে ১০, চাঁদপুরে ৪, লক্ষীপুরে ৭, চট্টগ্রামে ২৩৬, কক্সবাজারে ৮, বান্দরবানে ১, যশোরে ২১, সাতক্ষীরায় ৪, মেহেরপুরে ১, নড়াইলে ৭, চুয়াডাঙ্গায় ২, কুষ্টিয়ায় ৭, মাগুরায় ২, খুলনায় ২৩, বাগেরহাটে ১, ঝিনাইদহে ১১, সিরাজগঞ্জে ৩, পাবনায় ২, বগুড়ায় ১১, রাজশাহীতে ৪, নাটোরে ১, জয়পুরহাটে ২, চাপাইনবাবগঞ্জে ১, নওগাঁয়ে ৫, পঞ্চগড়ে ১, দিনাজপুরে ১৪, লালমনিরহাটে ৩, নীলফামারীতে ২, গাইবান্ধায় ৪, রংপুরে ৩১, কুড়িগ্রামে ৪, সিলেটে ৯৮, মৌলভীবাজারে ১৮, হবিগঞ্জে ৪, সুনামগঞ্জে ৭, শেরপুরে ১০, ময়মনসিংহে ৯৫, জামালপুরে ২৮, নেত্রকোণায় ১০জন।
বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) চেয়ারম্যান ডা. শাহেদ রাফি পাভেল বলেন, প্রথম দিকে মানসম্মত পিপিইসহ অন্যান্য যে উপকরণ প্রয়োজন হয় তা ছিল না, আবার পরবর্তীতে সঠিক পিপিই পাওয়ার পরও কিভাবে খুলতে হবে, কিভাবে পড়তে হবে সে বিষয়ে অনেক চিকিৎসকের ট্রেনিং ছিল না। একইভাবে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও কোন ট্রেনিং ছিল না। হাসপাতালগুলোতে যেধরণের প্রটোকল মেইনটেইন করা দরকার ছিল সেটা করা হয়নি। কারণ এধরণের ভাইরাসের চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে যাওয়ার আগে পিপিই পরিবর্তণ করতে হয়। আমাদের এখানে সে পরিমাণ উপকরণ ছিল না। এছাড়া অনেক রোগী উপসর্গ নিয়ে নন-কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন যাদের মাধ্যমে অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন।
ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি প্রফেসর ডা.হারুন আল রশিদ বলেন, চিকিৎসকরা আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হলো- মানসম্মত পিপিই ও সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব এবং সকল চিকিৎসককে রোগী সেবা দেয়ার জন্য বাধ্য করা। তিনি বলেন, সরকার চিকিৎসকদের জন্য যেসব পিপিই ও সুরক্ষা সামগ্রী দিয়েছিল তা নিম্নমানের। এসব পড়ে চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া সরকার করোনাকালে সকল চিকিৎসককে রোগী দেখার জন্য বাধ্য করেছে। এদের মধ্যে কে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসছেন তা জানা নেই। এটি না করে যদি তরুণ, আগে থেকে শারীরিক কোন সমস্যা নেই এমন চিকিৎসকদের রোগী দেখার জন্য বলা হতো তাহলে এতো বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক আমরা হারাতাম না।
প্রফেসর হারুন বলেন, যেসব চিকিৎসক আমরা হারাচ্ছি এটা জাতির জন্য অনেক বড় শূণ্যতা তৈরি করবে। কারণ একজন ডা. ওয়াহাব বা এম এ হক একদিনে তৈরি হয়নি। তারা শুধু চিকিৎসা দেয়ার জন্যই না তরুন চিকিৎসকরা তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারতেন। তারা একেকজন একেকটা ইনস্টিটিউট ছিলেন। সরকারের ভুল নীতির কারণে এতো বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করলেন। এমনকি বাংলাদেশেও চিকিৎসক মৃত্যুর হার বিশে^র সবচেয়ে বেশি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

৭২ চিকিৎসকের মৃত্যু

আপলোড টাইম : ০৮:০২:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জুলাই ২০২০

করোনাভাইরাস আক্রান্ত ১৬৯৪ ডাক্তার, ১৩৪৪ নার্স, ১৯১৯ স্বাস্থ্যকর্মী
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের কিছুদিন আগেও সমাজচ্যুত মনে করা হতো। সন্তান আক্রান্ত বাবা-মাকে বাড়ির বাইরে ফেলে আসতো, স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে দূরে ঠেলে দিতো। আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে আক্রান্ত হওয়ার জন্য অপরাধীর চোখে দেখতো সকলেই। সেই সময়ও দেশের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। সারিয়ে তুলেছেন হাজার হাজার করোনা আক্রান্ত রোগীকে। এই প্রচেষ্টা এখনো চলমান রয়েছে। রোগীদের সারিয়ে তুলতে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন তারা। চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে এবং রোগীর সংস্পর্শে আসার কারণে আক্রান্ত হয়েছে কয়েক হাজার চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী। প্রতিদিনই বাড়ছে এই সংখ্যা।
জানা যায়, করোনায় চিকিৎসার বিভিন্ন বিভাগের দেশের প্রবীণ এবং অত্যন্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রাণ হারিয়েছেন। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসকরা বলছেন, যারা মৃত্যুবরণ করছেন তাদের বেশিরভাগই সিনিয়র চিকিৎসক এবং একেকজন চিকিৎসা বিজ্ঞানের একেকটি বিভাগে নিজেদেরকে ইনস্টিটিউট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যাদের কাছে তরুণ চিকিৎসকদের অনেক কিছু শেখার ছিল। এসব চিকিৎসককে হারিয়ে জাতির জন্য অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। সরকারের ভুলনীতি, নিম্নমানের পিপিই ও সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান, চিকিৎসার সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের অভাব, উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করার কারণেই এতো সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছেন বলে অভিযোগ চিকিৎসক সংগঠনগুলোর।
ভাইরাসের সাথে লড়াই করে মৃত্যবরণকারী চিকিৎসকের সংখ্যা নিয়ে চিকিৎসক সংগঠনগুলো মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬১জন, বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) তথ্য মতে করোনাভাইরাস এবং উপসর্গে ৭২জন, ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেস্পন্সিবিলিটিজের (এফডিএসআর) তথ্য মতে করোনায় ৬০ জন এবং উপসর্গে ৮জন, আর ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) তথ্য মতে করোনায় ৬১ জন এবং উপসর্গে ৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। বিএমএ’র তথ্য অনুযায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৯৪ জন চিকিৎসক, ১ হাজার ৩৪৪জন নার্স ও ১ হাজার ৯১৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী। মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসকদের মধ্যে- ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর মনিরুজ্জামান, প্রফেসর এ মুকাররিম, আজিজুর রহমান রাজু, এমএ মতিন, কাজী দিলরুবা খানম, আমিনা খাতুন, আব্দুর রহমান, মোশাররফ হোসেন, সাইদুর ইসলাম, ওয়াহিদুজ্জামান আকন্দ, মঞ্জুর রশিদ চৌধুরী, তেএম ওয়াহিদুল হক, এহসানুল করিম, মহিউদ্দীন, হাবিবুর রহমান, এনআই খান, মহিদুল হাসান, এহসানুল করিম চৌধুরী, এসএএম গোলাম কিবরিয়া, মির্জা নাজিম উদ্দিন, রাজিয়া সুলতানা, সাখাওয়াত হোসেন, আনোয়ার হোসেন, জলিলুর রহমান, তানজিলা রহমান, গাজী জহিরুল হাসান, মাহমুদ মনোয়ার, একেএম ফজলুল হক, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, সাদেকুর রহমান, নজরুল ইসলাম, তৌফিকুন নেসা, মুজিবুর রহমান, আব্দুল হাই, নুরুল হক, আশরাফুজ্জামান খোকন, শাহ আব্দুল আহাদ, রফিকুল হায়দার লিটন, এমদাদ উল্লাহ খান, শফিকুল ইসলাম, মজিবুর রহমান রিপন, সুনিল কুমার সরকার, বজলুর রহমান, ললিত কুমার দত্ত, আলী আজগর, ইউনুস আলী খান, সমিরুল ইসলাম বাবু, উপেন্দ্র নাথ পাল, এসএম সাইফুল ইসলাম, শহীদুল আনোয়ার, ফিরোজা বানু মিনু, আসাদুজ্জামান রিতু, মোহাম্মদ হোসেন, গোপাল শঙ্কর দে, মহসিন কবির, গোলাম সরোয়ার, রুহুল আমিন, এমএ ওয়াহাব ও কেএম মুন্তাকিম চৌধুরী। উপসর্গে মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসকরা হলেন- ডা. ফেরদৌস রহমান, প্রফেসর আনিসুর রহমান, প্রফেসর মীর মাহবুবুল আলম, সারওয়ার ইবনে আজিজ, সৈয়দ জাফর হোসেন রুমি, আবুল কাশেম খান, আরিফ হাসান, সৈয়দ শাহ নেওয়াজ, সৈয়দ তমিজুল আহসান রতন।
আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে- নরসিংদীতে ৭ জন, গাজীপুরে ৫৮, শরিয়তপুরে ১, নারায়ণগঞ্জে ২৮, টাঙ্গাইলে ৩, কিশোরগঞ্জে ৫৯, মানিকগঞ্জে ৩, ঢাকায় ৬৬৫, মুন্সিগঞ্জে ২২, মাদারিপুরে ৬, গোপালগঞ্জে ১৭, ফরিদপুরে ২, ঝালকাঠিতে ৪, পটুয়াখালীতে ৫, বরিশালে ৩১, ভোলায় ৮, বরগুনায় ২, কুমিল্লায় ৫০, ফেনীতে ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯, রাঙামাটিতে ৪, নোয়াখালীতে ১০, চাঁদপুরে ৪, লক্ষীপুরে ৭, চট্টগ্রামে ২৩৬, কক্সবাজারে ৮, বান্দরবানে ১, যশোরে ২১, সাতক্ষীরায় ৪, মেহেরপুরে ১, নড়াইলে ৭, চুয়াডাঙ্গায় ২, কুষ্টিয়ায় ৭, মাগুরায় ২, খুলনায় ২৩, বাগেরহাটে ১, ঝিনাইদহে ১১, সিরাজগঞ্জে ৩, পাবনায় ২, বগুড়ায় ১১, রাজশাহীতে ৪, নাটোরে ১, জয়পুরহাটে ২, চাপাইনবাবগঞ্জে ১, নওগাঁয়ে ৫, পঞ্চগড়ে ১, দিনাজপুরে ১৪, লালমনিরহাটে ৩, নীলফামারীতে ২, গাইবান্ধায় ৪, রংপুরে ৩১, কুড়িগ্রামে ৪, সিলেটে ৯৮, মৌলভীবাজারে ১৮, হবিগঞ্জে ৪, সুনামগঞ্জে ৭, শেরপুরে ১০, ময়মনসিংহে ৯৫, জামালপুরে ২৮, নেত্রকোণায় ১০জন।
বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) চেয়ারম্যান ডা. শাহেদ রাফি পাভেল বলেন, প্রথম দিকে মানসম্মত পিপিইসহ অন্যান্য যে উপকরণ প্রয়োজন হয় তা ছিল না, আবার পরবর্তীতে সঠিক পিপিই পাওয়ার পরও কিভাবে খুলতে হবে, কিভাবে পড়তে হবে সে বিষয়ে অনেক চিকিৎসকের ট্রেনিং ছিল না। একইভাবে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও কোন ট্রেনিং ছিল না। হাসপাতালগুলোতে যেধরণের প্রটোকল মেইনটেইন করা দরকার ছিল সেটা করা হয়নি। কারণ এধরণের ভাইরাসের চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে যাওয়ার আগে পিপিই পরিবর্তণ করতে হয়। আমাদের এখানে সে পরিমাণ উপকরণ ছিল না। এছাড়া অনেক রোগী উপসর্গ নিয়ে নন-কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন যাদের মাধ্যমে অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন।
ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি প্রফেসর ডা.হারুন আল রশিদ বলেন, চিকিৎসকরা আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হলো- মানসম্মত পিপিই ও সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব এবং সকল চিকিৎসককে রোগী সেবা দেয়ার জন্য বাধ্য করা। তিনি বলেন, সরকার চিকিৎসকদের জন্য যেসব পিপিই ও সুরক্ষা সামগ্রী দিয়েছিল তা নিম্নমানের। এসব পড়ে চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া সরকার করোনাকালে সকল চিকিৎসককে রোগী দেখার জন্য বাধ্য করেছে। এদের মধ্যে কে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসছেন তা জানা নেই। এটি না করে যদি তরুণ, আগে থেকে শারীরিক কোন সমস্যা নেই এমন চিকিৎসকদের রোগী দেখার জন্য বলা হতো তাহলে এতো বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক আমরা হারাতাম না।
প্রফেসর হারুন বলেন, যেসব চিকিৎসক আমরা হারাচ্ছি এটা জাতির জন্য অনেক বড় শূণ্যতা তৈরি করবে। কারণ একজন ডা. ওয়াহাব বা এম এ হক একদিনে তৈরি হয়নি। তারা শুধু চিকিৎসা দেয়ার জন্যই না তরুন চিকিৎসকরা তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারতেন। তারা একেকজন একেকটা ইনস্টিটিউট ছিলেন। সরকারের ভুল নীতির কারণে এতো বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করলেন। এমনকি বাংলাদেশেও চিকিৎসক মৃত্যুর হার বিশে^র সবচেয়ে বেশি।