ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

৪৮ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ৮৫ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান ও তাঁদের খাবার সরবরাহ করতেন মকছেদুর রহমান। তাঁর দেওয়া নিখুঁত তথ্য পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে সাফল্য পায়। কিন্তু মকছেদ স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা দেখে যেতে পারেননি। পাক-বাহিনীর বিমান হামলায় স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ তিনি নির্মমভাবে প্রাণ হারান। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হয়েছে। অনেক রাজাকার ও অমুক্তিযোদ্ধাদের গায়ে লেগেছে মুক্তিযোদ্ধার তকমা। কিন্তু স্বীকৃতি মেলেনি একসাথে ৫ জন স্বজন হারানো ঝিনাইদহের মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটির। স্বজন হারানো আর বোমার স্প্রিন্টারের আঘাত আজও মনে করিয়ে দেয় সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা। এখন ভাতা বা সুযোগ সুবিধা নয়, পরিবারটি শুধু চায় সম্মান। সেদিনের ভয়াবহ দিনের কথার বর্ণনা করে বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গিলাবাড়ীয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চায়না খাতুন।
চায়না খাতুন জানান, ‘একাত্তরের ৫ ডিসেম্বর দুপুর বেলা গিলাবাড়ীয়া গ্রামে আমার পিতা মোকছেদুর রহমান ও মা তিন সন্তান নিয়ে বসেছিলেন বাড়ির উঠানে। সে সময় পাকিস্তান বাহিনীর একটি বিমান আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা মারে। এতে ঘটনাস্থলেই ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায় পিতা মোকছেদুর রহমানের দেহ। রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকে বাড়ির উঠোনে। আহত হয়ে মারা যান মা স্ত্রী ছকিনা খাতুন, বোন রানু খাতুন এবং দুই ভাই তোতা মিয়া ও পাতা মিয়া।’ চায়না খাতুন জানান, তিনিও গুরুতর আহত হন। ভাগ্যক্রমে বাড়ির বাইরে থাকায় বেঁচে যান তাঁর ছোট ভাই মিজানুর রহমান।
গ্রামবাসী জানায়, পরিবারের ৫ সদস্যকে হারিয়ে বোন চায়না খাতুন ও মিজানুর রহমান হয়ে পড়েন অসহায়। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের জন্য ২ হাজার টাকা অনুদান দেন। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় চলে তাদের সংসার। মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দেওয়া ও নানাভাবে সহযোগিতা করার অপরাধে পাক-বাহিনী হামলা চালিয়ে একই পরিবারের ৫ সদস্যকে হত্যা করলেও আজো মেলেনি তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি, ভাতা ও নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হলেও বারবার উপেক্ষিত থেকেছে মকছেদের পরিবার।
ঝিনাইদহ সদরের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিদ্দিক আহম্মেদ জানান, পরিবারটি অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে। অবশ্যই তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিৎ। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, পরিবারটিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদান করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

৪৮ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

আপলোড টাইম : ১০:২৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০

ঝিনাইদহ অফিস:
মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান ও তাঁদের খাবার সরবরাহ করতেন মকছেদুর রহমান। তাঁর দেওয়া নিখুঁত তথ্য পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে সাফল্য পায়। কিন্তু মকছেদ স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা দেখে যেতে পারেননি। পাক-বাহিনীর বিমান হামলায় স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ তিনি নির্মমভাবে প্রাণ হারান। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হয়েছে। অনেক রাজাকার ও অমুক্তিযোদ্ধাদের গায়ে লেগেছে মুক্তিযোদ্ধার তকমা। কিন্তু স্বীকৃতি মেলেনি একসাথে ৫ জন স্বজন হারানো ঝিনাইদহের মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটির। স্বজন হারানো আর বোমার স্প্রিন্টারের আঘাত আজও মনে করিয়ে দেয় সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা। এখন ভাতা বা সুযোগ সুবিধা নয়, পরিবারটি শুধু চায় সম্মান। সেদিনের ভয়াবহ দিনের কথার বর্ণনা করে বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গিলাবাড়ীয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চায়না খাতুন।
চায়না খাতুন জানান, ‘একাত্তরের ৫ ডিসেম্বর দুপুর বেলা গিলাবাড়ীয়া গ্রামে আমার পিতা মোকছেদুর রহমান ও মা তিন সন্তান নিয়ে বসেছিলেন বাড়ির উঠানে। সে সময় পাকিস্তান বাহিনীর একটি বিমান আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা মারে। এতে ঘটনাস্থলেই ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায় পিতা মোকছেদুর রহমানের দেহ। রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকে বাড়ির উঠোনে। আহত হয়ে মারা যান মা স্ত্রী ছকিনা খাতুন, বোন রানু খাতুন এবং দুই ভাই তোতা মিয়া ও পাতা মিয়া।’ চায়না খাতুন জানান, তিনিও গুরুতর আহত হন। ভাগ্যক্রমে বাড়ির বাইরে থাকায় বেঁচে যান তাঁর ছোট ভাই মিজানুর রহমান।
গ্রামবাসী জানায়, পরিবারের ৫ সদস্যকে হারিয়ে বোন চায়না খাতুন ও মিজানুর রহমান হয়ে পড়েন অসহায়। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের জন্য ২ হাজার টাকা অনুদান দেন। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় চলে তাদের সংসার। মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দেওয়া ও নানাভাবে সহযোগিতা করার অপরাধে পাক-বাহিনী হামলা চালিয়ে একই পরিবারের ৫ সদস্যকে হত্যা করলেও আজো মেলেনি তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি, ভাতা ও নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হলেও বারবার উপেক্ষিত থেকেছে মকছেদের পরিবার।
ঝিনাইদহ সদরের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিদ্দিক আহম্মেদ জানান, পরিবারটি অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে। অবশ্যই তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিৎ। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, পরিবারটিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদান করা হবে।