ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

৪৭ বছরেও লাভের মুখ দেখেনি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৫:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৯
  • / ৩৩২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
স্বাধীনতার পর থেকে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত অর্থাৎ বিগত ৪৭ বছরে কখনো লাভের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। শুধু লোকসান গুনেছে। ১৯৭২ সালে কোটি টাকা লোকসান দিয়ে শুরু হলেও চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেই লোকসান এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত রেলের নিট লোকসানের পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিগত ১১ বছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে শতাধিক প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। যার অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। তবে বাড়েনি রেলের সেবার মান। বাড়েনি আয়ও। যদিও স্বাধীনতার পর থেকে বছরে বছরে বেড়েছে ট্রেনের সংখ্যা। অর্ধশত ট্রেন থেকে বর্তমানে ৩৪৭টি ট্রেন চলছে।
এদিকে, ২০১২ সালের অক্টোবরে রেলের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ করা হয়, তারপর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবারো ৫৫ থেকে ৯০ শতাংশ ভাড়া বাড়ায় রেলওয়ে। এরপরও লোকসানের চক্র থেকে বের হতে পারেনি রেলওয়ে। বরং প্রতিবছর সংস্থাটির লোকসানের বোঝা বাড়ছেই। রেলের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়- স্বাধীনতার পর দেশ উত্তরাধিকার সূত্রে পায় ২৯৫৫ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার রেলপথ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৪৮ কিলোমিটার। স্বাধীনতার পরে ৩২৫ কিলোমিটার রেলপথ বন্ধ হয়েছে। আর নতুন রেললাইন তৈরি হয়েছে ১২৪ কিলোমিটার। রেলপথ নির্মাণাধীন রয়েছে ৪৪৭ কিলোমিটার। বর্তমানে ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৪৭টি। যার মধ্যে ৯০টি আন্তঃনগর, মেল এক্সপ্রেস ও ডেমু ১২০টি বাকি ১৩৭টি লোকাল ট্রেন। বর্তমানে বছরে সাড়ে ৯ কোটি প্যাসেঞ্জার বহন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রেলের আয়-ব্যয়ের নথি গেটে দেখা গেছে- স্বাধীনতার পর ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, আর ব্যয় হয় ১৫৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। নিট লোকসান হয় ৪ কোটি ২ লাখ। সেটি পরের বছর ১৯৮৩-৮৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ কোটি ১৫ লাখ, ১৯৮৪-৮৫ তে লোকসান ছিল ৫৯ কোটি ৩২ লাখ, ১৯৮৫-৮৬ তে তা লাফিয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭ কোটি ১৪ লাখ, ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছর থেকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩২ কোটি ২৪ লাখ, ১৯৮৭-৮৮ তে ১৫৩ কোটি ১১ লাখ, ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ১৩২ কোটি ৭০ লাখ, ১৯৮৯-৯০ তে ১৫০ কোটি ৬৬ লাখ, ১৯৯০-৯১ তে ১৪৭ কোটি ৮৮ লাখ, ১৯৯১-৯২ তে ১০৫ কোটি ৯৮ লাখ, ১৯৯২-৯৩ তে ৯৮ কোটি ৪৪ লাখ, ১৯৯৩-৯৪ তে ১০৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ১৯৯৪-৯৫ তে ১২৯ কোটি ৮৭ লাখ, ১৯৯৫-৯৬ তে ১৫১ কোটি ৭১ লাখ, ১৯৯৬-৯৭ তে ১০৩ কোটি ২৭ লাখ, ১৯৯৭-৯৮ তে ৯৯ কোটি ৩২ লাখ, ১৯৯৮-৯৯ তে ১০২ কোটি ২৯ লাখ, ১৯৯৯-২০০০ এ ১৬৭ কোটি ৫৩ লাখ, ২০০০-০১ এ ১৮০ কোটি ৮৮ লাখ, ২০০১-০২ এ ১৯৭ কোটি ৯১ লাখ, ২০০২-০৩ এ ২০৪ কোটি ৬৪ লাখ, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ২৯১ কোটি ৮১ লাখ, ২০০৪-০৫ এ ৩১৪ কোটি ৯ লাখ, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪৩৮ কোটি ৫৩ লাখ, ২০০৬-০৭ এ ৫৫২ কোটি ২৬ লাখ, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৫৯৭ কোটি ২৩ লাখ, ২০০৮-০৯ এ ৬১৪ কোটি ৫৪ লাখ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৭৫৬ কোটি ৪৭ লাখ, ২০১০-১১ তে ৯৫৭ কোটি ৮১ লাখ, ২০১১-১২ তে ১০৫৯ কোটি ৭৫ লাখ, ২০১২-১৩ তে ৮১২ কোটি ৩৫ লাখ, ২০১৩-১৪ তে ৪৬১ কোটি ৯৫ লাখ, ২০১৪-১৫ তে ৫৫৬ কোটি ৮৫ লাখ, ২০১৫-১৬ তে ১৪৬৮ কোটি ৩ লাখ, ২০১৬-১৭ সালে লোকসান ছিল সর্বোচ্চ ১৭৮৭ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১০৫ কোটি ১৫ লাখ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
রেলওয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রেলের লোকসানের মূল কারণ দুর্নীতি। প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের অধিকাংশ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের পকেটে যায়। অযথা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করে বাড়ানো হয় ব্যয়। তা ছাড়া সঠিক পরিকল্পনার অভাব, দুর্বল মনিটরিং, কারো জবাবদিহিতা না থাকা, স্বজন পোষণ ইত্যাদি কারণে লোকসানের বোঝা বাড়ছে। এ সময় তারা রেলের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে স্বচ্ছতা আনা, প্রকল্প চুক্তি ও বাস্তবায়নে দায়বদ্ধতা আনা, কেনাকাটাসহ নিয়োগ, রেলের আয়-ব্যয় সব কিছুতেই স্বচ্ছতা আনার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন, লুটপাটের কারণে সরকারি সব প্রকল্পেই লোকসান হচ্ছে। সে রকম রেলের সব ক্ষেত্রেই লুটপাট হয়। নিয়োগ, বিভিন্ন প্রকল্প চুক্তি, কেনাকাটা সব দিকেই দুর্নীতি এমনভাবে চেপে বসেছে যে উন্নয়নের অনেকাংশ খেয়ে ফেলছে দুর্নীতি। সুতরাং যত কোটি টাকাই খরচ হোক না কেন, যত যাত্রী বাড়–ক, কাজের যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকে তাহলে উন্নয়ন শতভাগ কাজে আসবে না। তা ছাড়া যারা মনিটরিং করেন বা যারা রেলওয়ে পরিচালনা করেন তাদের জবাবদিহির মধ্যে যত দিন আনা যাবে না, তত দিন রেলওয়ের লোকসান হতেই থাকবে।
এ বিষয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, রেলের উন্নয়নে বহু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও যাত্রীসেবার মান বাড়েনি। রেলের কেনাকাটা, টিকেট বিক্রি, নিয়োগ অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছে। ফলে রেল লাভের মুখ দেখছে না। তা ছাড়া আগের চেয়ে ভাড়া বাড়লেও দুর্ভোগ-ভোগান্তি পিছু ছাড়েনি। গত দুটি ঈদে রেলের ঈদযাত্রার চিত্র দেখলে বোঝা যায় কতটা দুর্ভোগ হয়েছে যাত্রীদের। তবে প্রধানমন্ত্রী রেলের উন্নয়নে বিশেষ আন্তরিক।
রেলের ধারাবাহিক লোকসানের কারণ সম্পর্কে রেলওয়ের এডিজি অপারেশন মিয়া জাহান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কর্মী নিয়োগ বেড়েছে। তা ছাড়া বেতন কাঠামোও অনেক উন্নত হয়েছে। বিগত ১০ বছরে রেলের প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে, যার ফলে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সে তুলনায় ভাড়া তেমন না বাড়ায় রেল লোকসান কাটাতে পারছে না।
আবার রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন মনে করেন, প্রথমত রেল একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এখানে লাভ-লোকসান নিয়ে আমরা ভাবি না। যাত্রীসেবাই বড় কথা। তা ছাড়া ট্রেনের ভাড়া অনেক কম। বাস বা অন্য যানবাহনের তুলনায় ট্রেনের ভাড়া কম। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা রেলের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। নতুন লাইন তৈরি হচ্ছে, বগি-ইঞ্জিন আসছে। লোকবলও প্রতি বছর বাড়ায় তাদের বেতন-ভাতায় খরচ বাড়ছে। সে কারণে লোকসান এড়ান যাচ্ছে না। তবে নিশ্চয় অনতিবিলম্বে রেলওয়ে লাভের মুখ দেখবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

৪৭ বছরেও লাভের মুখ দেখেনি

আপলোড টাইম : ১০:২৫:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
স্বাধীনতার পর থেকে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত অর্থাৎ বিগত ৪৭ বছরে কখনো লাভের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। শুধু লোকসান গুনেছে। ১৯৭২ সালে কোটি টাকা লোকসান দিয়ে শুরু হলেও চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেই লোকসান এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত রেলের নিট লোকসানের পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিগত ১১ বছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে শতাধিক প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। যার অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। তবে বাড়েনি রেলের সেবার মান। বাড়েনি আয়ও। যদিও স্বাধীনতার পর থেকে বছরে বছরে বেড়েছে ট্রেনের সংখ্যা। অর্ধশত ট্রেন থেকে বর্তমানে ৩৪৭টি ট্রেন চলছে।
এদিকে, ২০১২ সালের অক্টোবরে রেলের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ করা হয়, তারপর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবারো ৫৫ থেকে ৯০ শতাংশ ভাড়া বাড়ায় রেলওয়ে। এরপরও লোকসানের চক্র থেকে বের হতে পারেনি রেলওয়ে। বরং প্রতিবছর সংস্থাটির লোকসানের বোঝা বাড়ছেই। রেলের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়- স্বাধীনতার পর দেশ উত্তরাধিকার সূত্রে পায় ২৯৫৫ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার রেলপথ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৪৮ কিলোমিটার। স্বাধীনতার পরে ৩২৫ কিলোমিটার রেলপথ বন্ধ হয়েছে। আর নতুন রেললাইন তৈরি হয়েছে ১২৪ কিলোমিটার। রেলপথ নির্মাণাধীন রয়েছে ৪৪৭ কিলোমিটার। বর্তমানে ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৪৭টি। যার মধ্যে ৯০টি আন্তঃনগর, মেল এক্সপ্রেস ও ডেমু ১২০টি বাকি ১৩৭টি লোকাল ট্রেন। বর্তমানে বছরে সাড়ে ৯ কোটি প্যাসেঞ্জার বহন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রেলের আয়-ব্যয়ের নথি গেটে দেখা গেছে- স্বাধীনতার পর ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, আর ব্যয় হয় ১৫৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। নিট লোকসান হয় ৪ কোটি ২ লাখ। সেটি পরের বছর ১৯৮৩-৮৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ কোটি ১৫ লাখ, ১৯৮৪-৮৫ তে লোকসান ছিল ৫৯ কোটি ৩২ লাখ, ১৯৮৫-৮৬ তে তা লাফিয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭ কোটি ১৪ লাখ, ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছর থেকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩২ কোটি ২৪ লাখ, ১৯৮৭-৮৮ তে ১৫৩ কোটি ১১ লাখ, ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ১৩২ কোটি ৭০ লাখ, ১৯৮৯-৯০ তে ১৫০ কোটি ৬৬ লাখ, ১৯৯০-৯১ তে ১৪৭ কোটি ৮৮ লাখ, ১৯৯১-৯২ তে ১০৫ কোটি ৯৮ লাখ, ১৯৯২-৯৩ তে ৯৮ কোটি ৪৪ লাখ, ১৯৯৩-৯৪ তে ১০৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ১৯৯৪-৯৫ তে ১২৯ কোটি ৮৭ লাখ, ১৯৯৫-৯৬ তে ১৫১ কোটি ৭১ লাখ, ১৯৯৬-৯৭ তে ১০৩ কোটি ২৭ লাখ, ১৯৯৭-৯৮ তে ৯৯ কোটি ৩২ লাখ, ১৯৯৮-৯৯ তে ১০২ কোটি ২৯ লাখ, ১৯৯৯-২০০০ এ ১৬৭ কোটি ৫৩ লাখ, ২০০০-০১ এ ১৮০ কোটি ৮৮ লাখ, ২০০১-০২ এ ১৯৭ কোটি ৯১ লাখ, ২০০২-০৩ এ ২০৪ কোটি ৬৪ লাখ, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ২৯১ কোটি ৮১ লাখ, ২০০৪-০৫ এ ৩১৪ কোটি ৯ লাখ, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪৩৮ কোটি ৫৩ লাখ, ২০০৬-০৭ এ ৫৫২ কোটি ২৬ লাখ, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৫৯৭ কোটি ২৩ লাখ, ২০০৮-০৯ এ ৬১৪ কোটি ৫৪ লাখ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৭৫৬ কোটি ৪৭ লাখ, ২০১০-১১ তে ৯৫৭ কোটি ৮১ লাখ, ২০১১-১২ তে ১০৫৯ কোটি ৭৫ লাখ, ২০১২-১৩ তে ৮১২ কোটি ৩৫ লাখ, ২০১৩-১৪ তে ৪৬১ কোটি ৯৫ লাখ, ২০১৪-১৫ তে ৫৫৬ কোটি ৮৫ লাখ, ২০১৫-১৬ তে ১৪৬৮ কোটি ৩ লাখ, ২০১৬-১৭ সালে লোকসান ছিল সর্বোচ্চ ১৭৮৭ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১০৫ কোটি ১৫ লাখ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
রেলওয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রেলের লোকসানের মূল কারণ দুর্নীতি। প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের অধিকাংশ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের পকেটে যায়। অযথা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব করে বাড়ানো হয় ব্যয়। তা ছাড়া সঠিক পরিকল্পনার অভাব, দুর্বল মনিটরিং, কারো জবাবদিহিতা না থাকা, স্বজন পোষণ ইত্যাদি কারণে লোকসানের বোঝা বাড়ছে। এ সময় তারা রেলের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে স্বচ্ছতা আনা, প্রকল্প চুক্তি ও বাস্তবায়নে দায়বদ্ধতা আনা, কেনাকাটাসহ নিয়োগ, রেলের আয়-ব্যয় সব কিছুতেই স্বচ্ছতা আনার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন, লুটপাটের কারণে সরকারি সব প্রকল্পেই লোকসান হচ্ছে। সে রকম রেলের সব ক্ষেত্রেই লুটপাট হয়। নিয়োগ, বিভিন্ন প্রকল্প চুক্তি, কেনাকাটা সব দিকেই দুর্নীতি এমনভাবে চেপে বসেছে যে উন্নয়নের অনেকাংশ খেয়ে ফেলছে দুর্নীতি। সুতরাং যত কোটি টাকাই খরচ হোক না কেন, যত যাত্রী বাড়–ক, কাজের যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকে তাহলে উন্নয়ন শতভাগ কাজে আসবে না। তা ছাড়া যারা মনিটরিং করেন বা যারা রেলওয়ে পরিচালনা করেন তাদের জবাবদিহির মধ্যে যত দিন আনা যাবে না, তত দিন রেলওয়ের লোকসান হতেই থাকবে।
এ বিষয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, রেলের উন্নয়নে বহু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও যাত্রীসেবার মান বাড়েনি। রেলের কেনাকাটা, টিকেট বিক্রি, নিয়োগ অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছে। ফলে রেল লাভের মুখ দেখছে না। তা ছাড়া আগের চেয়ে ভাড়া বাড়লেও দুর্ভোগ-ভোগান্তি পিছু ছাড়েনি। গত দুটি ঈদে রেলের ঈদযাত্রার চিত্র দেখলে বোঝা যায় কতটা দুর্ভোগ হয়েছে যাত্রীদের। তবে প্রধানমন্ত্রী রেলের উন্নয়নে বিশেষ আন্তরিক।
রেলের ধারাবাহিক লোকসানের কারণ সম্পর্কে রেলওয়ের এডিজি অপারেশন মিয়া জাহান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কর্মী নিয়োগ বেড়েছে। তা ছাড়া বেতন কাঠামোও অনেক উন্নত হয়েছে। বিগত ১০ বছরে রেলের প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে, যার ফলে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সে তুলনায় ভাড়া তেমন না বাড়ায় রেল লোকসান কাটাতে পারছে না।
আবার রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন মনে করেন, প্রথমত রেল একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এখানে লাভ-লোকসান নিয়ে আমরা ভাবি না। যাত্রীসেবাই বড় কথা। তা ছাড়া ট্রেনের ভাড়া অনেক কম। বাস বা অন্য যানবাহনের তুলনায় ট্রেনের ভাড়া কম। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা রেলের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। নতুন লাইন তৈরি হচ্ছে, বগি-ইঞ্জিন আসছে। লোকবলও প্রতি বছর বাড়ায় তাদের বেতন-ভাতায় খরচ বাড়ছে। সে কারণে লোকসান এড়ান যাচ্ছে না। তবে নিশ্চয় অনতিবিলম্বে রেলওয়ে লাভের মুখ দেখবে।