ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

২৫ জন বাংলাদেশি ও ১৩ নেপালী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন নিহত : দেশজুড়ে শোক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪০:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মার্চ ২০১৮
  • / ৪৪০ বার পড়া হয়েছে

নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
নেপালের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনা : অভিযোগ অস্বীকার ত্রিভুবন বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপকের
ডেস্ক রিপোর্ট: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (টিআইএ) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় ২৫ জন বাংলাদেশি ও ১৩ নেপালী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা থেকে যাত্রা করা উড়োজাহাজটি ওই বিমানবন্দরে নামার সময় পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারালে তা রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। নেপাল পুলিশের মুখপাত্র মনোজ নিউপেন এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনাস্থলেই ৪০জন নিহত হন। পৃথক দুই হাসপতালে ১০ জন মারা যান। ২২জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে; তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এর আগে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র গকুল ভান্দুরী বলেছিলেন, ৫০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু নিয়ে উড়োজাহাজটি ছেড়ে যায়। নেপালের স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২০ মিনিটে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে নেপালের বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, নেপালের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক রাজ কুমার ছেত্রি। তার দাবি, পাইলটের ভুলের কারণেই এই দুর্ঘটনা।
দ্য হিমালয়ান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়ে উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। বিমানবন্দর এলাকায় ধোঁয়া দেখা গেছে। দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার অভিযান শুরু করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে তাতে যোগ দেয় নেপাল সেনাবাহিনী। এদিকে কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়ার পর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটির যাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশের ৩২ জন, নেপালের ৩৩ জন, চীনের একজন ও মালদ্বীপের একজন যাত্রী ছিলেন বলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নেপালে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিধ্বস্তের ঘটনায় ২৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। ওই ফ্লাইটে থাকা মোট ৩৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে ১০ জন আহত অবস্থায় নেপালের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একজনের এখনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুকে নিহত ও আহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন। আহতরা কে কোন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তা-ও মন্ত্রীর ওই ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ওই ফ্লাইটে মোট ৩৬ ছিলেন বাংলাদেশি। এর মধ্যে চার জন্য ইউএস বাংলার পাইলট ও ক্রু। বাকি ৩২ জন ছিলেন যাত্রী। এই মোট ৩৬ জনের মধ্যে ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জীবিত ১০ জনের মধ্যে ৯ জন কে, কোন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তা জানিয়েছেন মন্ত্রী। এ ঘটনায় দেশজুড়ে চলছে শোকের মাতম।
নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে দুর্ঘটনাকবলিত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানে যাত্রীদের মধ্যে ১৩ নেপালী শিক্ষার্থী রয়েছেন। এরা সবাই সিলেটের জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ফলাফলের অপেক্ষায় থাকা ওইসব শিক্ষার্থী নিজ দেশে যাচ্ছিলেন। কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবেদ হোসেন জানান, ‘কলেজের ১৯তম ব্যাচের ১৩ শিক্ষার্থী পরীক্ষা শেষে নিজ দেশে ফিরছিলেন। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন শিক্ষার্থীদের অনেকেই হতাহত হয়েছেন। দু’মাসের মধ্যে ওইসব শিক্ষার্থীর ফলাফল প্রকাশের কথা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ দূতাবাস, সিলেটে অবস্থানরত নেপালী শিক্ষার্থী ও কলেজ থেকে পাশ করে যাওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, খোঁজ নিচ্ছি। তবে, হতাহতের সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের বিদেশী শিক্ষার্থীর ৯৫ ভাগই নেপালী। ইতোমধ্যে প্রায় ৩শ’ শিক্ষার্থী এখান থেকে মেডিকেল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে আরো প্রায় আড়াইশ’ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন।
বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস হটলাইন চালু করেছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দুর্ঘটনার পরপরই এ কথা জানান। তিনি বলেন ‘আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তারা হাসপাতাল এবং বিমানবন্দরে আছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের নেপাল দূতাবাস হটলাইন আল আলামুল ইমাম, কনস্যুলার +৯৭৭৯৮১০১০০৪০১, অসিত বরণ সরকার +৯৭৭৯৮৬১৪৬৭৪২২। কারও পরিচিত কোনো যাত্রী থাকলে সে তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
নেপালের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের গাফিলতির জন্যই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারায় এয়ারলাইন্সটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি। ইমরান আসিফ বলেন, আমরা সন্দেহ করছি কাঠমান্ডুর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ভুল বার্তা দেওয়ার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে একেক সময় একেক রানওয়েতে অবতরণের বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে পাইলটরা বিভ্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, উড়োজাহাজটির ক্যাপেন্ট আবিদ সুলতান খুবই দক্ষ। তার ১৭শ’ ঘণ্টা একটানা উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞা রয়েছে। এর আগে দুপুরে নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ। এতে ৫০জনের নিহতের খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ঢাকা থেকে নেপালের কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার পৃথক শোকবার্তায় তারা এ শোক জানান। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি হতাহতদের প্রতি গভীর শোক ও তাদের পরিবারের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেছেন। তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

২৫ জন বাংলাদেশি ও ১৩ নেপালী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন নিহত : দেশজুড়ে শোক

আপলোড টাইম : ০৮:৪০:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মার্চ ২০১৮

নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
নেপালের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনা : অভিযোগ অস্বীকার ত্রিভুবন বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপকের
ডেস্ক রিপোর্ট: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (টিআইএ) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় ২৫ জন বাংলাদেশি ও ১৩ নেপালী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা থেকে যাত্রা করা উড়োজাহাজটি ওই বিমানবন্দরে নামার সময় পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারালে তা রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। নেপাল পুলিশের মুখপাত্র মনোজ নিউপেন এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনাস্থলেই ৪০জন নিহত হন। পৃথক দুই হাসপতালে ১০ জন মারা যান। ২২জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে; তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এর আগে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র গকুল ভান্দুরী বলেছিলেন, ৫০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু নিয়ে উড়োজাহাজটি ছেড়ে যায়। নেপালের স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২০ মিনিটে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে নেপালের বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, নেপালের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক রাজ কুমার ছেত্রি। তার দাবি, পাইলটের ভুলের কারণেই এই দুর্ঘটনা।
দ্য হিমালয়ান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়ে উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। বিমানবন্দর এলাকায় ধোঁয়া দেখা গেছে। দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার অভিযান শুরু করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে তাতে যোগ দেয় নেপাল সেনাবাহিনী। এদিকে কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়ার পর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটির যাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশের ৩২ জন, নেপালের ৩৩ জন, চীনের একজন ও মালদ্বীপের একজন যাত্রী ছিলেন বলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নেপালে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিধ্বস্তের ঘটনায় ২৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। ওই ফ্লাইটে থাকা মোট ৩৬ জন বাংলাদেশির মধ্যে ১০ জন আহত অবস্থায় নেপালের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একজনের এখনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুকে নিহত ও আহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন। আহতরা কে কোন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তা-ও মন্ত্রীর ওই ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ওই ফ্লাইটে মোট ৩৬ ছিলেন বাংলাদেশি। এর মধ্যে চার জন্য ইউএস বাংলার পাইলট ও ক্রু। বাকি ৩২ জন ছিলেন যাত্রী। এই মোট ৩৬ জনের মধ্যে ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জীবিত ১০ জনের মধ্যে ৯ জন কে, কোন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তা জানিয়েছেন মন্ত্রী। এ ঘটনায় দেশজুড়ে চলছে শোকের মাতম।
নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে দুর্ঘটনাকবলিত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানে যাত্রীদের মধ্যে ১৩ নেপালী শিক্ষার্থী রয়েছেন। এরা সবাই সিলেটের জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ফলাফলের অপেক্ষায় থাকা ওইসব শিক্ষার্থী নিজ দেশে যাচ্ছিলেন। কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবেদ হোসেন জানান, ‘কলেজের ১৯তম ব্যাচের ১৩ শিক্ষার্থী পরীক্ষা শেষে নিজ দেশে ফিরছিলেন। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন শিক্ষার্থীদের অনেকেই হতাহত হয়েছেন। দু’মাসের মধ্যে ওইসব শিক্ষার্থীর ফলাফল প্রকাশের কথা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ দূতাবাস, সিলেটে অবস্থানরত নেপালী শিক্ষার্থী ও কলেজ থেকে পাশ করে যাওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, খোঁজ নিচ্ছি। তবে, হতাহতের সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের বিদেশী শিক্ষার্থীর ৯৫ ভাগই নেপালী। ইতোমধ্যে প্রায় ৩শ’ শিক্ষার্থী এখান থেকে মেডিকেল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে আরো প্রায় আড়াইশ’ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন।
বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস হটলাইন চালু করেছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দুর্ঘটনার পরপরই এ কথা জানান। তিনি বলেন ‘আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তারা হাসপাতাল এবং বিমানবন্দরে আছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের নেপাল দূতাবাস হটলাইন আল আলামুল ইমাম, কনস্যুলার +৯৭৭৯৮১০১০০৪০১, অসিত বরণ সরকার +৯৭৭৯৮৬১৪৬৭৪২২। কারও পরিচিত কোনো যাত্রী থাকলে সে তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
নেপালের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের গাফিলতির জন্যই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারায় এয়ারলাইন্সটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি। ইমরান আসিফ বলেন, আমরা সন্দেহ করছি কাঠমান্ডুর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ভুল বার্তা দেওয়ার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে একেক সময় একেক রানওয়েতে অবতরণের বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে পাইলটরা বিভ্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, উড়োজাহাজটির ক্যাপেন্ট আবিদ সুলতান খুবই দক্ষ। তার ১৭শ’ ঘণ্টা একটানা উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞা রয়েছে। এর আগে দুপুরে নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ। এতে ৫০জনের নিহতের খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ঢাকা থেকে নেপালের কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার পৃথক শোকবার্তায় তারা এ শোক জানান। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি হতাহতদের প্রতি গভীর শোক ও তাদের পরিবারের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেছেন। তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।