ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

১৬৯ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন নেই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৪:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০
  • / ২৪৮ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চার প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
ঝিনাইদহ অফিস:
দুই বছর ধরে ঝিনাইদহের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়ন নেই। আবার ঝিনাইদহ শহরে অনেক ক্লিনিক লাইসেন্স ছাড়াই মাসের পর মাস ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবেই চলছে জেলার ক্লিনিক ও প্যাথলজি ব্যবসা। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা পর্যায়ের ক্লিনিকগুলোতে অহরহ অপচিকিৎসা চলছে। ডাক্তারের অবহেলায় প্রসুতির মৃত্যু ঘটছে। ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসার উন্নত পরিবেশ নেই। নেই সর্বক্ষণ চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত নার্স। ১০ শয্যার পরিবর্তে শয্যা বাড়িয়ে ৫০-৬০ জন করে রোগী ভর্তি করা হয়। নীতিমালা ভঙ্গ করার পরও এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নতুন লাইসেন্স পাচ্ছে। পুরানো লাইসেন্স নবায়ন করছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে হরিণাকুণ্ডু ও মহেশপুরে চার ক্লিনিকে চারজন প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তার ফলাফল এখনো দৃশ্যমান হয়নি। তবে ডাক্তারের বিরুদ্ধে ডাক্তার নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি কতটুকু শাস্তি নিশ্চিত করবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস থেকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় মোট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৭০টি। এর মধ্যে ক্লিনিক রয়েছে ৮১টি। সূত্র মতে, কোটচাঁদপুরের একটি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন আছে। বাকি ১৬৯টি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন নেই। এছাড়া ৮৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনোটার লাইসেন্স ২০১৮ সাল থেকে নবায়ন করা হয়নি। সবগুলোর লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়াধীন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের নওশের আলী, নজরুল ইসলাম, ইসরাইল হোসেন ও নজরুল ইসলাম (২) ক্লিনিকের এই ফাইলগুলো দেখভাল করেন। অভিযোগ উঠেছে অর্থের বিনিময়ে তাঁরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে চিকিৎসার জন্য অনুপোযুক্ত এসব ক্লিনিকের কাগজপত্র ঠিক করে বহাল রাখার পক্ষে রিপোর্ট দেন। ক্লিনিকের ফাইল করলে ভালো উপার্জন হয় বলেও সিভিল সার্জন অফিসে কথিত আছে।
সরেজমিন সদর উপজেলার ডাকবাংলা, বৈডাঙ্গা, সাধুহাটী, বারোবাজার, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডু, মহেশপুরের নেপার মোড় ও খালিশপুরের ক্লিনিকগুলোতে সর্বক্ষণ ডাক্তার থাকে না। ক্লিনিক মালিক, ছেলে, স্ত্রী ও মেয়োরাই কোনো কোনো ক্লিনিকের স্টাফ সেজে কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অপারেশন থিয়েটার ও রোগীর শয্যা রুমে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করে। নেই দক্ষ নার্স। ফলে রোগীরা বিপদে পড়লে তেমন কোনো সহায়তা পান না। ফলে প্রায়ই এসব ক্লিনিকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে কয়েকটি ক্লিনিকের ফাইল ঘেটে দেখা গেছে, শর্ত পূরণ করে তাদের কাগজপত্র খুবই মজবুতভাবে তৈরি করা হয়েছে। অথচ তাদের ক্লিনিকের পরিবেশ সম্পূণ ভিন্ন। পেপারবুকের সঙ্গে ক্লিনিকের বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম এ ব্যাপারে জানান, ‘জেলার কোনো ক্লিনিকের এখন লাইসেন্স নেই। সবগুলো নবায়নের জন্য অপেক্ষমান। তিনি বলেন, এখন অনলাইনে সরাসরি আবেদন নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে যেসব ক্লিনিকের রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে, আমরা সেগুলো প্রেরণ করছি।’ তিনি বলেন, ২৩ আগস্টের মধ্যে সবার নবায়ন না হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

১৬৯ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন নেই

আপলোড টাইম : ১০:২৪:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০

ঝিনাইদহে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চার প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
ঝিনাইদহ অফিস:
দুই বছর ধরে ঝিনাইদহের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়ন নেই। আবার ঝিনাইদহ শহরে অনেক ক্লিনিক লাইসেন্স ছাড়াই মাসের পর মাস ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবেই চলছে জেলার ক্লিনিক ও প্যাথলজি ব্যবসা। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা পর্যায়ের ক্লিনিকগুলোতে অহরহ অপচিকিৎসা চলছে। ডাক্তারের অবহেলায় প্রসুতির মৃত্যু ঘটছে। ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসার উন্নত পরিবেশ নেই। নেই সর্বক্ষণ চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত নার্স। ১০ শয্যার পরিবর্তে শয্যা বাড়িয়ে ৫০-৬০ জন করে রোগী ভর্তি করা হয়। নীতিমালা ভঙ্গ করার পরও এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নতুন লাইসেন্স পাচ্ছে। পুরানো লাইসেন্স নবায়ন করছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে হরিণাকুণ্ডু ও মহেশপুরে চার ক্লিনিকে চারজন প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তার ফলাফল এখনো দৃশ্যমান হয়নি। তবে ডাক্তারের বিরুদ্ধে ডাক্তার নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি কতটুকু শাস্তি নিশ্চিত করবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস থেকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় মোট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৭০টি। এর মধ্যে ক্লিনিক রয়েছে ৮১টি। সূত্র মতে, কোটচাঁদপুরের একটি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন আছে। বাকি ১৬৯টি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন নেই। এছাড়া ৮৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনোটার লাইসেন্স ২০১৮ সাল থেকে নবায়ন করা হয়নি। সবগুলোর লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়াধীন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের নওশের আলী, নজরুল ইসলাম, ইসরাইল হোসেন ও নজরুল ইসলাম (২) ক্লিনিকের এই ফাইলগুলো দেখভাল করেন। অভিযোগ উঠেছে অর্থের বিনিময়ে তাঁরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে চিকিৎসার জন্য অনুপোযুক্ত এসব ক্লিনিকের কাগজপত্র ঠিক করে বহাল রাখার পক্ষে রিপোর্ট দেন। ক্লিনিকের ফাইল করলে ভালো উপার্জন হয় বলেও সিভিল সার্জন অফিসে কথিত আছে।
সরেজমিন সদর উপজেলার ডাকবাংলা, বৈডাঙ্গা, সাধুহাটী, বারোবাজার, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডু, মহেশপুরের নেপার মোড় ও খালিশপুরের ক্লিনিকগুলোতে সর্বক্ষণ ডাক্তার থাকে না। ক্লিনিক মালিক, ছেলে, স্ত্রী ও মেয়োরাই কোনো কোনো ক্লিনিকের স্টাফ সেজে কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অপারেশন থিয়েটার ও রোগীর শয্যা রুমে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করে। নেই দক্ষ নার্স। ফলে রোগীরা বিপদে পড়লে তেমন কোনো সহায়তা পান না। ফলে প্রায়ই এসব ক্লিনিকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে কয়েকটি ক্লিনিকের ফাইল ঘেটে দেখা গেছে, শর্ত পূরণ করে তাদের কাগজপত্র খুবই মজবুতভাবে তৈরি করা হয়েছে। অথচ তাদের ক্লিনিকের পরিবেশ সম্পূণ ভিন্ন। পেপারবুকের সঙ্গে ক্লিনিকের বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম এ ব্যাপারে জানান, ‘জেলার কোনো ক্লিনিকের এখন লাইসেন্স নেই। সবগুলো নবায়নের জন্য অপেক্ষমান। তিনি বলেন, এখন অনলাইনে সরাসরি আবেদন নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে যেসব ক্লিনিকের রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে, আমরা সেগুলো প্রেরণ করছি।’ তিনি বলেন, ২৩ আগস্টের মধ্যে সবার নবায়ন না হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’