ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হুমকিতে পোশাকশিল্প

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৬:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ১৭৫ বার পড়া হয়েছে

বিপর্যয় ঠেকাতে ব্যবস্থা নিন
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প শুরু থেকেই নানা বাধা পেরিয়ে এসে আজকের ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড ইমেজ সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন সময়ে হুমকির মুখে পড়লেও উৎস গিয়ে নিজেদের অবস্থান ঠিকই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প। বিশেষ করে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা দেশের পোশাকশিল্পকে বড় এক বাধার সম্মুখীন করেছিল। ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের খবরদারি, সংস্কারমূলক নজরদারি ও কমপ্লায়েন্ট ইস্যু ও নানা শর্ত পূরণ করে টিকে যায় দেশের পোশাকশিল্প। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ-পরবর্তী পরিস্থিতি আবার দেশের পোশাকশিল্পকে নতুন বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে আমাদের চীন-নির্ভরতা। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, কাঁচামালের জন্য প্রায় পুরোটাই চীনের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। বিশেষ করে ওভেন পণ্যের কাঁচামাল প্রায় ৯০ শতাংশই আসে চীন থেকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় কাঁচামালের সেই জোগানে এখন মারাত্মক সংকটের আশঙ্কা করছেন পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকরা। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি শুরু না হলে বাংলাদেশের অসংখ্য কারখানা কাঁচামালশূন্য হয়ে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর তেমনটি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের খবরদারি ও নানা শর্তের কারণে ছোট অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানা মালিক ঋণখেলাপি হয়েছেন। কর্মীদের বেতন দিতে না পেরে কোনো কোনো উদ্যোক্তা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চলেছেন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ঘুরে দাঁড়ানো দেশের তৈরি পোশাক খাত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছিল। নানা সংস্কারমূলক পদক্ষেপের ফলে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়ানো খাতটি বৈশ্বিক সংকটও মোকাবেলা করছে। ক্রমেই বৈশ্বিক চাহিদা কমছে। ব্রেক্সিট ইস্যু ও ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা প্রভাব ফেলছে তৈরি পোশাক খাতে। আবার নিজেদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতাও আমাদের বাজার নষ্ট করছে। সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে প্রতিযোগীদের সঙ্গে সক্ষমতায় পিছিয়ে যাওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দিয়ে পোশাকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে যেখানে হাত দেওয়া দরকার সেখানে কিছুই করা হচ্ছে না। পৃথিবীজুড়েই এখন পরিবর্তনের যে ঢেউ লেগেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাক খাতে সংস্কার আনতে হবে। সারা বিশ্বে প্রযুক্তির যে বিকাশ ঘটেছে, তার সবটুকু আমাদের তৈরি পোশাক খাত ব্যবহার করতে পারছে না। এ অবস্থায় দেশের প্রধান এই রপ্তানিমুখী খাতটিকে রক্ষা করতে আধুনিকায়নের পাশাপাশি কাঁচামালের জন্য ভিন্ন জায়গাও খুঁজে বের করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি উদ্যোগী হতে হবে এই শিল্পের উদ্যোক্তাদেরও।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

হুমকিতে পোশাকশিল্প

আপলোড টাইম : ০৯:২৬:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০

বিপর্যয় ঠেকাতে ব্যবস্থা নিন
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প শুরু থেকেই নানা বাধা পেরিয়ে এসে আজকের ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড ইমেজ সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন সময়ে হুমকির মুখে পড়লেও উৎস গিয়ে নিজেদের অবস্থান ঠিকই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প। বিশেষ করে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা দেশের পোশাকশিল্পকে বড় এক বাধার সম্মুখীন করেছিল। ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের খবরদারি, সংস্কারমূলক নজরদারি ও কমপ্লায়েন্ট ইস্যু ও নানা শর্ত পূরণ করে টিকে যায় দেশের পোশাকশিল্প। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ-পরবর্তী পরিস্থিতি আবার দেশের পোশাকশিল্পকে নতুন বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে আমাদের চীন-নির্ভরতা। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, কাঁচামালের জন্য প্রায় পুরোটাই চীনের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। বিশেষ করে ওভেন পণ্যের কাঁচামাল প্রায় ৯০ শতাংশই আসে চীন থেকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় কাঁচামালের সেই জোগানে এখন মারাত্মক সংকটের আশঙ্কা করছেন পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকরা। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি শুরু না হলে বাংলাদেশের অসংখ্য কারখানা কাঁচামালশূন্য হয়ে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর তেমনটি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের খবরদারি ও নানা শর্তের কারণে ছোট অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানা মালিক ঋণখেলাপি হয়েছেন। কর্মীদের বেতন দিতে না পেরে কোনো কোনো উদ্যোক্তা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চলেছেন। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ঘুরে দাঁড়ানো দেশের তৈরি পোশাক খাত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছিল। নানা সংস্কারমূলক পদক্ষেপের ফলে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়ানো খাতটি বৈশ্বিক সংকটও মোকাবেলা করছে। ক্রমেই বৈশ্বিক চাহিদা কমছে। ব্রেক্সিট ইস্যু ও ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা প্রভাব ফেলছে তৈরি পোশাক খাতে। আবার নিজেদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতাও আমাদের বাজার নষ্ট করছে। সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে প্রতিযোগীদের সঙ্গে সক্ষমতায় পিছিয়ে যাওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দিয়ে পোশাকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে যেখানে হাত দেওয়া দরকার সেখানে কিছুই করা হচ্ছে না। পৃথিবীজুড়েই এখন পরিবর্তনের যে ঢেউ লেগেছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাক খাতে সংস্কার আনতে হবে। সারা বিশ্বে প্রযুক্তির যে বিকাশ ঘটেছে, তার সবটুকু আমাদের তৈরি পোশাক খাত ব্যবহার করতে পারছে না। এ অবস্থায় দেশের প্রধান এই রপ্তানিমুখী খাতটিকে রক্ষা করতে আধুনিকায়নের পাশাপাশি কাঁচামালের জন্য ভিন্ন জায়গাও খুঁজে বের করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি উদ্যোগী হতে হবে এই শিল্পের উদ্যোক্তাদেরও।