ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০০:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০১৯
  • / ২২৪ বার পড়া হয়েছে

বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে
গতকাল শুক্রবার থেকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ চালং হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, মামলা ও জরিমানা কার্যকরে কিছুটা সময় লাগবে। নতুন আইন কার্যকরের মাধ্যমে বাতিল হচ্ছে ৭৯ বছরের পুরনো মোটরযান অধ্যাদেশ। নতুন আইন কতটুকু বাস্তবায়ন হবে সেটা দেখার বিষয়। কারণ আইন বাস্তবায়নের সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দায় রয়েছে। দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থার সঙ্গে এ সংস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী, গাড়ির লাইসেন্স না থাকলে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। ভুয়া লাইসেন্সের জন্য শাস্তি আরো বেশি। সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদ- ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন ধারায় ট্রাফিক আইন অমান্যের জন্য বাড়ানো হয়েছে শাস্তি ও জরিমানা। দুর্ঘটনার জন্য শাস্তি দেয়া হবে দ-বিধি অনুযায়ী। হত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদ-। হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদ- হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদ- হবে। অবশ্য নতুন আইনের আলোকে জরিমানা ও শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। কারণ বিআরটিএ ও পুলিশ আইন প্রয়োগ শুরু করছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিআরটিএ সূত্র বলছে, প্রয়োগের দিকে যেতে আরো কিছুদিন সময় লেগে যেতে পারে। কারণ সড়ক পরিবহন খাতের দীর্ঘদিনের চলা রীতিনীতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমরা মনে করি, এই আইন বাস্তবায়ন করতে হলে মূলে হাত দিতে হবে। বিআরটিএ স্বচ্ছ হলে সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য প্রায় কমে আসবে। বিআরটিএর সেবার মান নিয়ে সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্টি বহুদিনের। আছে নানা অভিযোগ। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা বদলসহ বিভিন্ন কাজে বিআরটিএর শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু হয়রানি, অনিয়ম ও নানামাত্রিক দুর্নীতির কারণে অনেকে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হন। সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং অদক্ষ ও অবৈধ চালক। বিআরটিএ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখনো এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। এখানে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, হয়রানি, ভোগান্তি আর দালালদের তৎপরতা চললেও তা দেখার এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কেউ যেন থেকেও নেই। বিআরটিএতে লাইসেন্স ও ফিটনেসসহ বিভিন্ন সেবায় যে ঘুষ দিতে হয় তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তদারকি বাড়াতে হবে, দালাল তাড়াতে হবে, কাউন্টার বাড়াতে হবে, চোখের দেখায় ফিটনেস দেয়া বন্ধ করতে হবে। আধুনিক, মানসম্পন্ন ও নিরাপদ সড়ক পরিবহন যে কোনো দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকেও গতিশীল করে। পরিবহন খাত এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক যোগাযোগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় এখন পরিবহনে যুক্ত। তাই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এজন্য সময়ের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন আইনে যে বিষয়গুলো সংযোজিত হতে যাচ্ছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮

আপলোড টাইম : ১০:০০:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০১৯

বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে
গতকাল শুক্রবার থেকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ চালং হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, মামলা ও জরিমানা কার্যকরে কিছুটা সময় লাগবে। নতুন আইন কার্যকরের মাধ্যমে বাতিল হচ্ছে ৭৯ বছরের পুরনো মোটরযান অধ্যাদেশ। নতুন আইন কতটুকু বাস্তবায়ন হবে সেটা দেখার বিষয়। কারণ আইন বাস্তবায়নের সঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দায় রয়েছে। দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থার সঙ্গে এ সংস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী, গাড়ির লাইসেন্স না থাকলে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। ভুয়া লাইসেন্সের জন্য শাস্তি আরো বেশি। সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদ- ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন ধারায় ট্রাফিক আইন অমান্যের জন্য বাড়ানো হয়েছে শাস্তি ও জরিমানা। দুর্ঘটনার জন্য শাস্তি দেয়া হবে দ-বিধি অনুযায়ী। হত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদ-। হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদ- হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদ- হবে। অবশ্য নতুন আইনের আলোকে জরিমানা ও শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। কারণ বিআরটিএ ও পুলিশ আইন প্রয়োগ শুরু করছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিআরটিএ সূত্র বলছে, প্রয়োগের দিকে যেতে আরো কিছুদিন সময় লেগে যেতে পারে। কারণ সড়ক পরিবহন খাতের দীর্ঘদিনের চলা রীতিনীতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমরা মনে করি, এই আইন বাস্তবায়ন করতে হলে মূলে হাত দিতে হবে। বিআরটিএ স্বচ্ছ হলে সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য প্রায় কমে আসবে। বিআরটিএর সেবার মান নিয়ে সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্টি বহুদিনের। আছে নানা অভিযোগ। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা বদলসহ বিভিন্ন কাজে বিআরটিএর শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু হয়রানি, অনিয়ম ও নানামাত্রিক দুর্নীতির কারণে অনেকে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হন। সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং অদক্ষ ও অবৈধ চালক। বিআরটিএ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখনো এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। এখানে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, হয়রানি, ভোগান্তি আর দালালদের তৎপরতা চললেও তা দেখার এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কেউ যেন থেকেও নেই। বিআরটিএতে লাইসেন্স ও ফিটনেসসহ বিভিন্ন সেবায় যে ঘুষ দিতে হয় তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তদারকি বাড়াতে হবে, দালাল তাড়াতে হবে, কাউন্টার বাড়াতে হবে, চোখের দেখায় ফিটনেস দেয়া বন্ধ করতে হবে। আধুনিক, মানসম্পন্ন ও নিরাপদ সড়ক পরিবহন যে কোনো দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকেও গতিশীল করে। পরিবহন খাত এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক যোগাযোগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় এখন পরিবহনে যুক্ত। তাই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এজন্য সময়ের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন আইনে যে বিষয়গুলো সংযোজিত হতে যাচ্ছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি।