ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০২:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ জুন ২০১৮
  • / ৪২১ বার পড়া হয়েছে

যেন এক অঘোষিত যুদ্ধ চলছে সড়কপথে। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। আর এ মিছিল যেন অপ্রতিরোধ্য। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে কিংবা আহত হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে বিশ্বের দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন প্রাণ হারায়। কিন্তু এ মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন। একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারকে পথে বসিয়ে দেয়। সারা জীবন বইতে হয় স্বজন হারানোর বেদনা, কোনো কিছুতে যা পূরণ হবার নয়। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ওঠে, এই সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু, আহতদের কষ্টকর জীবন বা পঙ্গুত্বের জন্য দায়ী কে বা কারা? প্রায়ই দেখা গেছে দুর্ঘটনার কারণ বেপরোয়া গাড়ি চালানো। সে সঙ্গে অদক্ষ চালক এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। দেখা গেছে চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। আবার প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না দিয়ে চালকদের ঘন ঘন গাড়ি চালাতে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অত্যধিক ক্লান্তি ও গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালানোর সময় চালক মোবাইল ফোনে কথা বলার কারণে দুর্ঘটনায় পড়ছে যানবাহন।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত ৩১ লাখ যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনিবন্ধিত, ভুয়া নম্বরধারী ও অযান্ত্রিক যান মিলে প্রায় ৫০ লাখ যানবাহন চলছে সড়কে যার ৭২ শতাংশের ফিটনেস নেই। এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এছাড়া সারা দেশে ৭০ লাখ চালকের মধ্যে বিআরটিএ-এর লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখ চালকের। আবার দেখা গেছে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হচ্ছে। অনেক চালক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামছে। যার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
কিন্তু এসব দেখার দায়িত্ব যাদের তারা কি যথাযথভাবে সে দায়িত্ব পালন করছেন? এক্ষেত্রে বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ট্রাফিক পুলিশ এ দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। চালকদের বড় অংশ যে অদক্ষ, অপ্রশিক্ষিত, লাইসেন্সবিহীন এবং অনেক চালকই যে ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা করেন না একাধিক সমীক্ষা ও গবেষণায় তা উঠে এসেছে। কিন্তু তারপরও এদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আবার দেখা গেছে কোনো সড়ক দুর্ঘটনার পর তার তদন্ত ঠিকমত হয় না। অনেক চালক আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচার হলেও সাজা হয় লঘু। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন।
আমরা প্রতিদিন সড়কে এমন অপমৃত্যু দেখতে চাইনা। যেকোনো মূল্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে, থামাতে হবে বেপরোয়া চালকদের। দক্ষ ও যোগ্য চালক ছাড়া কারো হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়া যাবে না। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস নয়। সড়কে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে যেসব নিয়মকানুন রয়েছে চালকরা তা যেন সঠিকভাবে মেনে চলেন সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বেপরোয়া চালকদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশকে আরো তৎপর হতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত ও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

আপলোড টাইম : ১১:০২:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ জুন ২০১৮

যেন এক অঘোষিত যুদ্ধ চলছে সড়কপথে। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। আর এ মিছিল যেন অপ্রতিরোধ্য। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে কিংবা আহত হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে বিশ্বের দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন প্রাণ হারায়। কিন্তু এ মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন। একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারকে পথে বসিয়ে দেয়। সারা জীবন বইতে হয় স্বজন হারানোর বেদনা, কোনো কিছুতে যা পূরণ হবার নয়। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ওঠে, এই সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু, আহতদের কষ্টকর জীবন বা পঙ্গুত্বের জন্য দায়ী কে বা কারা? প্রায়ই দেখা গেছে দুর্ঘটনার কারণ বেপরোয়া গাড়ি চালানো। সে সঙ্গে অদক্ষ চালক এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। দেখা গেছে চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। আবার প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না দিয়ে চালকদের ঘন ঘন গাড়ি চালাতে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অত্যধিক ক্লান্তি ও গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালানোর সময় চালক মোবাইল ফোনে কথা বলার কারণে দুর্ঘটনায় পড়ছে যানবাহন।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত ৩১ লাখ যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনিবন্ধিত, ভুয়া নম্বরধারী ও অযান্ত্রিক যান মিলে প্রায় ৫০ লাখ যানবাহন চলছে সড়কে যার ৭২ শতাংশের ফিটনেস নেই। এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এছাড়া সারা দেশে ৭০ লাখ চালকের মধ্যে বিআরটিএ-এর লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখ চালকের। আবার দেখা গেছে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হচ্ছে। অনেক চালক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামছে। যার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
কিন্তু এসব দেখার দায়িত্ব যাদের তারা কি যথাযথভাবে সে দায়িত্ব পালন করছেন? এক্ষেত্রে বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ট্রাফিক পুলিশ এ দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। চালকদের বড় অংশ যে অদক্ষ, অপ্রশিক্ষিত, লাইসেন্সবিহীন এবং অনেক চালকই যে ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা করেন না একাধিক সমীক্ষা ও গবেষণায় তা উঠে এসেছে। কিন্তু তারপরও এদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আবার দেখা গেছে কোনো সড়ক দুর্ঘটনার পর তার তদন্ত ঠিকমত হয় না। অনেক চালক আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিচার হলেও সাজা হয় লঘু। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন।
আমরা প্রতিদিন সড়কে এমন অপমৃত্যু দেখতে চাইনা। যেকোনো মূল্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে, থামাতে হবে বেপরোয়া চালকদের। দক্ষ ও যোগ্য চালক ছাড়া কারো হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়া যাবে না। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস নয়। সড়কে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে যেসব নিয়মকানুন রয়েছে চালকরা তা যেন সঠিকভাবে মেনে চলেন সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বেপরোয়া চালকদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশকে আরো তৎপর হতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত ও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।