ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা নবগঙ্গা নদীর জীবনজোয়ার গৌরব যেন আজ আর নেই : কালের আবর্তনে বিলীন হয়েছে যৌবনের উন্মাদনা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:৪৪:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৭
  • / ৬২৫ বার পড়া হয়েছে

am-picবদরগঞ্জ প্রতিনিধি: স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা নদী বলতে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ তথা মাগুরা অঞ্চলের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটিই হলো নবগঙ্গা। কোথাও দু’টি গ্রামের মধ্যদিয়ে। কোথাও গ্রামের পাশ ঘেষে, আবার কোথাও একে বেকে মাঠের বুক চিরে বয়ে গেছে এই নদীটি। নামের সাথে আজ কোন হালে নদীটি বেঁচে থাকলেও তা নিঃস্প্রাণ বলা যায় নিঃসন্দেহে। কারণ, আমাদের নবগঙ্গা বলতে সেই আদি রুপের গৌরব যেন আজ আর নেই। কালের আর্বতনে বিলীন হয়েছে যৌবনের উন্মাদনা। নবগঙ্গার বুকে নেই পানি, স্রোতের কলতানে ভরেনা দু’কুল। বরং ধু..ধু প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নবগঙ্গাকে দেখলে মনেই হয়না এটি একটি নদী? প্রকৃতির সৌন্দর্য কিছুটা অবশিষ্ট থাকলেও তা ভগ্নাবশেষের দারপ্রান্তে। প্রকৃত নদী যেন আজ মৃত্যুর প্রহর গুনছে ধুকে ধুকে। জরাজীর্ণ নবগঙ্গা আজ শ্রাাবন কিংবা ভাদ্র আশ্বিনের ডাকেও জেঁগে উঠেনা দু’নয়নের পাপড়ি মেলে। এমন বেহাল নবগঙ্গার করুণ দৃশ্য দেখতেই মনটি ছুটে যায় অতিতে। খুব একটা বেশি দিনের কথা নয়। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের কথা। দু’কুল ছাপিয়ে যাওয়া স্রোতের বহমান ডাকে ফুটন্ত ধাপের বন্ধন হারা হাঁসিগুলো যেন ছুটে চলতো সীমাহীন দূরন্তে। তখনকার নব যৌবনা নবগঙ্গার বুকে ব্যবসায়ীদের আসা যাওয়া ছিলো চোখে পড়ার মত। পালতোলা নৌকায় রকমারী বিভিন্ন প্রকার হাঁড়ি পাতিল থাকতো। কেউ বা নববধূকে বরণ করতে গঙ্গার বুক চিরে রঙ্গিন সাঁজে নৌকাটিকে সাজিয়ে ভেঁসে চলতো নতুন ঠিকানার খোঁজে। গাঁয়ের বধূর গোসল আর ছোট ছোট শিশুরা আত্মকোলাহলে ভুলে যেত বাড়ি ফেরার কথা। চৈত্রের উত্তপ্ত সূর্য্যরে নিদারুণ তাপদাহে রাখাল গরু নিয়ে নেমে যেত ভরা নবগঙ্গার বুকে। এখানেই শেষ নয় নবগঙ্গার ফেলে আসা সেকালের কথা। দেশীয় মাছের কথা বলতে গেলে, এমন কোন মাছ ছিলোনা যা নবগঙ্গার বুকে পাওয়া যেতনা। শোল থেকে শুরু করে গজাড়, পপদা, পাকাল, বোয়াল, স্বরপুটি, ছোট পুটি, টেংরা, শিং, মাগুর, কৈ, গরগোচি, তোড়া, বাইম, নয়না, ফোলই, কাকলে, ময়া, চান্দা, খোলসে, বেলে, খোরশোল¬া। এছাড়া রুই, কাতলা, মৃগেল, উক্লো-টাকি-চেং তো ছিলোই। কিন্তু আজ সবই বিলিন হয়েছে স্বমুলে। ক্রম সভ্যতার বিকাশে আজ হারিয়ে গেছে অতিতের অনন্য যত সব প্রত্যাশা প্রাপ্তির স্মৃতি বিজড়িত শুভক্ষন। আমরা নবগঙ্গা নদীকে হারিয়েছি, নাকি নব গঙ্গা আমাদেরকে হারিয়েছে, এমন প্রশ্ন এসে দাড়িয়েছে বর্তমান প্রজন্মের দ্বারে। নদী আমাদেরকে উপকার করছে না, নাকি আমরা নদীকে উপকার করছি না-কোনটা? তবে স্বার্থের বেড়াজালে যখন সাগর মহা-সাগরও বিক্রি হচ্ছে অদেখা ওজনে, তখন সামান্য নবগঙ্গার কথা তুলে ধরা কতটা বাঞ্চনীয় সেটাই বড় কথা। প্রয়োজন শেষ হয়েছে সবার, বিধায় কোথায় কোন খাল, বিল অথবা হাওড়, বাওড় নদী জেগে থাকলো কিনা তা বুঝি ভাবার সময় আর নেই। মনে পড়ে আজ থেকে বছর বিশেক আগে, আমাদের নবগঙ্গা নদীটিকে সাময়ীকি সংস্কার করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো স্থানীয় নেতাদের। ক’দিন পরেই দেখা গেলো নবগঙ্গার বুকে গরু জুড়ে বাশই দেওয়া হচ্ছে। এমনটাই প্রমান করতে যে, নদীটিকে সংস্কার করা হয়েছে। হায়রে কর্মকর্তা! এরপর পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। বর্তমান নবগঙ্গা নদীটি-নামে থাকলেও তার কার্যক্রম কিংবা পূর্বের জৌলুস একবারেই হারিয়ে যাবার পথে। সে সময় আরো দেখেছি, নব গঙ্গার পাশ ঘিরে শত শত গ্রামের শত সহ¯্র কৃষক তাদের আবাদকৃত সোনালী পাটগুলো জাগ দিতো এই নদীতে। অনেক সময় স্রোতের মহাতোড়ে অনেকের জাগ হারিয়ে যেত বাঁকা নদীর কোন না কোন বাঁকে। কিন্তু আজ সে নদীর বুকে স্যালোর পানিতে আবাদ হচ্ছে ধানের। বর্তমান এ নদীর পানি শূন্যতাই মৌসুমে জাগ দেবার মত জায়গা না পাওয়াই কৃষকের আবাদী পাটগুলো শুকিয়ে রূপান্তরীত হয় খড়িতে। আমলাতন্ত্রের জটিলতাই নবগঙ্গার বুকে আজ অগনিত অসংখ্য বাধ নির্মান করে আবাদ করা হচ্ছে মাছের। যে কারণে, সময় মত পানি থাকা না থাকা কোথাও কোথাও একেবারে শুকিয়ে যাওয়া এ সব অন্তরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়াই নবগঙ্গা মৃত্যু নদীতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়ও রয়েছে ভূমি দখল দ্বারিত্বের ক,খ,গ,ঘ,ঙ পাট। নদীর তলাটুকু ছাড়া সবই দখলী সত্বের অর্šÍরভূক্ত মালিকানায় চলে গেছে নবগঙ্গা নদীটির অঙ্গ-প্রতঙ্গ। তবে এসব মালিকানা আইনগত ব্যবস্থায় কতটুকু বৈধ তাও যেন সবারই জানার বাইরে! সবমিলে নদীটি আবারো পূর্নজ্জীবিত হোক, ফিরে আসুক প্রকৃতির জোয়ার-ভাটা বুকে নিয়ে। উপকৃত হোক শত সহ¯্র কৃষক। হিল্লোলে মেতে উঠুক কিশোর-কিশোরী। এমনিভাবে তার বুক চিরে বয়ে চলুক পালতোলা নৌকা। সাঁড়াজাগুক মনে, মনে, বনে, বনে। গাঁয়ের বধূ-র হেটে চলা বাঁকা পথে এমন নদীর আহ্বানে, যেন সে শিশির ভেঁজা রাঙ্গা দু’টি চরণে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা নবগঙ্গা নদীর জীবনজোয়ার গৌরব যেন আজ আর নেই : কালের আবর্তনে বিলীন হয়েছে যৌবনের উন্মাদনা

আপলোড টাইম : ০১:৪৪:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৭

am-picবদরগঞ্জ প্রতিনিধি: স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা নদী বলতে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ তথা মাগুরা অঞ্চলের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটিই হলো নবগঙ্গা। কোথাও দু’টি গ্রামের মধ্যদিয়ে। কোথাও গ্রামের পাশ ঘেষে, আবার কোথাও একে বেকে মাঠের বুক চিরে বয়ে গেছে এই নদীটি। নামের সাথে আজ কোন হালে নদীটি বেঁচে থাকলেও তা নিঃস্প্রাণ বলা যায় নিঃসন্দেহে। কারণ, আমাদের নবগঙ্গা বলতে সেই আদি রুপের গৌরব যেন আজ আর নেই। কালের আর্বতনে বিলীন হয়েছে যৌবনের উন্মাদনা। নবগঙ্গার বুকে নেই পানি, স্রোতের কলতানে ভরেনা দু’কুল। বরং ধু..ধু প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নবগঙ্গাকে দেখলে মনেই হয়না এটি একটি নদী? প্রকৃতির সৌন্দর্য কিছুটা অবশিষ্ট থাকলেও তা ভগ্নাবশেষের দারপ্রান্তে। প্রকৃত নদী যেন আজ মৃত্যুর প্রহর গুনছে ধুকে ধুকে। জরাজীর্ণ নবগঙ্গা আজ শ্রাাবন কিংবা ভাদ্র আশ্বিনের ডাকেও জেঁগে উঠেনা দু’নয়নের পাপড়ি মেলে। এমন বেহাল নবগঙ্গার করুণ দৃশ্য দেখতেই মনটি ছুটে যায় অতিতে। খুব একটা বেশি দিনের কথা নয়। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের কথা। দু’কুল ছাপিয়ে যাওয়া স্রোতের বহমান ডাকে ফুটন্ত ধাপের বন্ধন হারা হাঁসিগুলো যেন ছুটে চলতো সীমাহীন দূরন্তে। তখনকার নব যৌবনা নবগঙ্গার বুকে ব্যবসায়ীদের আসা যাওয়া ছিলো চোখে পড়ার মত। পালতোলা নৌকায় রকমারী বিভিন্ন প্রকার হাঁড়ি পাতিল থাকতো। কেউ বা নববধূকে বরণ করতে গঙ্গার বুক চিরে রঙ্গিন সাঁজে নৌকাটিকে সাজিয়ে ভেঁসে চলতো নতুন ঠিকানার খোঁজে। গাঁয়ের বধূর গোসল আর ছোট ছোট শিশুরা আত্মকোলাহলে ভুলে যেত বাড়ি ফেরার কথা। চৈত্রের উত্তপ্ত সূর্য্যরে নিদারুণ তাপদাহে রাখাল গরু নিয়ে নেমে যেত ভরা নবগঙ্গার বুকে। এখানেই শেষ নয় নবগঙ্গার ফেলে আসা সেকালের কথা। দেশীয় মাছের কথা বলতে গেলে, এমন কোন মাছ ছিলোনা যা নবগঙ্গার বুকে পাওয়া যেতনা। শোল থেকে শুরু করে গজাড়, পপদা, পাকাল, বোয়াল, স্বরপুটি, ছোট পুটি, টেংরা, শিং, মাগুর, কৈ, গরগোচি, তোড়া, বাইম, নয়না, ফোলই, কাকলে, ময়া, চান্দা, খোলসে, বেলে, খোরশোল¬া। এছাড়া রুই, কাতলা, মৃগেল, উক্লো-টাকি-চেং তো ছিলোই। কিন্তু আজ সবই বিলিন হয়েছে স্বমুলে। ক্রম সভ্যতার বিকাশে আজ হারিয়ে গেছে অতিতের অনন্য যত সব প্রত্যাশা প্রাপ্তির স্মৃতি বিজড়িত শুভক্ষন। আমরা নবগঙ্গা নদীকে হারিয়েছি, নাকি নব গঙ্গা আমাদেরকে হারিয়েছে, এমন প্রশ্ন এসে দাড়িয়েছে বর্তমান প্রজন্মের দ্বারে। নদী আমাদেরকে উপকার করছে না, নাকি আমরা নদীকে উপকার করছি না-কোনটা? তবে স্বার্থের বেড়াজালে যখন সাগর মহা-সাগরও বিক্রি হচ্ছে অদেখা ওজনে, তখন সামান্য নবগঙ্গার কথা তুলে ধরা কতটা বাঞ্চনীয় সেটাই বড় কথা। প্রয়োজন শেষ হয়েছে সবার, বিধায় কোথায় কোন খাল, বিল অথবা হাওড়, বাওড় নদী জেগে থাকলো কিনা তা বুঝি ভাবার সময় আর নেই। মনে পড়ে আজ থেকে বছর বিশেক আগে, আমাদের নবগঙ্গা নদীটিকে সাময়ীকি সংস্কার করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো স্থানীয় নেতাদের। ক’দিন পরেই দেখা গেলো নবগঙ্গার বুকে গরু জুড়ে বাশই দেওয়া হচ্ছে। এমনটাই প্রমান করতে যে, নদীটিকে সংস্কার করা হয়েছে। হায়রে কর্মকর্তা! এরপর পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। বর্তমান নবগঙ্গা নদীটি-নামে থাকলেও তার কার্যক্রম কিংবা পূর্বের জৌলুস একবারেই হারিয়ে যাবার পথে। সে সময় আরো দেখেছি, নব গঙ্গার পাশ ঘিরে শত শত গ্রামের শত সহ¯্র কৃষক তাদের আবাদকৃত সোনালী পাটগুলো জাগ দিতো এই নদীতে। অনেক সময় স্রোতের মহাতোড়ে অনেকের জাগ হারিয়ে যেত বাঁকা নদীর কোন না কোন বাঁকে। কিন্তু আজ সে নদীর বুকে স্যালোর পানিতে আবাদ হচ্ছে ধানের। বর্তমান এ নদীর পানি শূন্যতাই মৌসুমে জাগ দেবার মত জায়গা না পাওয়াই কৃষকের আবাদী পাটগুলো শুকিয়ে রূপান্তরীত হয় খড়িতে। আমলাতন্ত্রের জটিলতাই নবগঙ্গার বুকে আজ অগনিত অসংখ্য বাধ নির্মান করে আবাদ করা হচ্ছে মাছের। যে কারণে, সময় মত পানি থাকা না থাকা কোথাও কোথাও একেবারে শুকিয়ে যাওয়া এ সব অন্তরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়াই নবগঙ্গা মৃত্যু নদীতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়ও রয়েছে ভূমি দখল দ্বারিত্বের ক,খ,গ,ঘ,ঙ পাট। নদীর তলাটুকু ছাড়া সবই দখলী সত্বের অর্šÍরভূক্ত মালিকানায় চলে গেছে নবগঙ্গা নদীটির অঙ্গ-প্রতঙ্গ। তবে এসব মালিকানা আইনগত ব্যবস্থায় কতটুকু বৈধ তাও যেন সবারই জানার বাইরে! সবমিলে নদীটি আবারো পূর্নজ্জীবিত হোক, ফিরে আসুক প্রকৃতির জোয়ার-ভাটা বুকে নিয়ে। উপকৃত হোক শত সহ¯্র কৃষক। হিল্লোলে মেতে উঠুক কিশোর-কিশোরী। এমনিভাবে তার বুক চিরে বয়ে চলুক পালতোলা নৌকা। সাঁড়াজাগুক মনে, মনে, বনে, বনে। গাঁয়ের বধূ-র হেটে চলা বাঁকা পথে এমন নদীর আহ্বানে, যেন সে শিশির ভেঁজা রাঙ্গা দু’টি চরণে।