ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

স্মার্টফোনে অতিরিক্ত আসক্তি, বিপদ শিশুদের

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২০:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ১২৪ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতি ৩ জনে ১ জন শিশু
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনা আবহে মানুষের জীবনের চেনা ছন্দটা আজ অনেকটাই বদলে গেছে। কাজের লোকের আসা বন্ধ হয়েছে। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এ অফিসের কাজের চাপ সামলে ঘরের এমন অনেক কাজ করতে হচ্ছে যেগুলো সম্পর্কে লকডাউনের আগ পর্যন্ত তেমন কোনো ধারণা ছিল না। ফলে অফিসে আর বাড়ির কাজ সামলে বেশির ভাগ বাবা-মায়েরই তাদের সন্তানকে দেয়ার মতো সময় অনেকটাই কমে গিয়েছে। একান্নবর্তী পরিবারের সংখ্যাও এখন ‘হাতেগোনা’। ফলে শিশুকে সময় দেয়ার মতো কেউ নেই। মানতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব, তাই বাইরে বেরিয়ে শিশুর খেলাধুলোরও সুযোগ নেই বললেই চলে। ফলে বদ্ধ ঘরেই স্মার্টফোন, টিভি, কম্পিউটারের সঙ্গে কাটছে বেশির ভাগ শিশুর শৈশব। তবে শুধু নিউ নরমাল লাইফেই নয়, বছরের বেশির ভাগ সময়েই বাবা-মায়ের ব্যস্ততায় স্মার্টফোন, টিভি আর কম্পিউটারের সঙ্গে সময় কাটাতেই বাচ্চারা বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক!
ইউনিসেফের একটি সমীক্ষা বলছে, বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন শিশু। প্রতিদিন সংখ্যাটা প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার, যার অর্থ প্রতি হাফ সেকেন্ডে একজন শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। শুধু তাই নয়, সমীক্ষা বলছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশেরই বয়স ১০-এর নিচে। স্মার্টফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশন মস্তিষ্ক, কান-সহ নানা অঙ্গের ক্ষতি করে। একটি বাচ্চার স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠার সময়ে তা আরো ক্ষতিকর। মস্তিষ্ক ও কানে নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার ভয়ও উড়িয়ে দেয়া যায় না। যত বেশি সময় শিশু টিভি, স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের সঙ্গে কাটাবে, ততই তার মানসিক, শারীরিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য খেলার মাঠই উপযুক্ত। ২ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের যতো বেশি করে শারীরিক ক্রিয়াকলাপে, দোড়ঝাঁপ, খেলাধুলোয় নিযুক্ত করা যায়, ততই ভালো। যে বয়স শিশুকে মানসিক ভাবে সুস্থ, সুন্দর ও বড় করে তুলতে সাহায্য করে, সেই সময়েই থাবা বসায় স্মার্টফোন। সারাক্ষণ ফোনে ডুবে থাকার ফলে অপেক্ষা করার অভ্যেস হ্রাস পায়। ফোনের প্রতি আসক্ত বাচ্চাটিকে ফোন না দিলে তার বিরক্তির ভাব দেখা দেয়। কথোপকথনেও অল্পেই ধৈর্য হারিয়ে বিরক্ত হয়ে পড়ে তারা। খারাপ ব্যবহারও অস্বাভাবিক নয়। এমনকী সারাদিন অতিরিক্ত ফোন, ট্যাবের ব্যবহার বাচ্চার স্বাভাবিক ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। ফোনে আটকে থাকা শিশুর সৌজন্যবোধ হারিয়ে যেতে পারে। আবার যারা সেলফি তোলায় মগ্ন, তাদের অনেকের মধ্যেই আত্মকেন্দ্রিকতার লক্ষণ প্রবল হয়ে ওঠে বলে জানাচ্ছেন, মনস্তত্ত্ববিদরা।
পড়াশুনার বাইরে অবসর সময় কাটানোর জন্য সন্তানের হাতে মোবাইলফোনের পরিবর্তে গল্পের বই, ধাঁধার সামগ্রী তুলে দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি সন্তানের সঙ্গে খেলায় সঙ্গ দেয়ার জন্য বাড়ির বড়দেরও এগিয়ে আসতে হবে। তার ফলে বাড়ির খুদেটির শরীর চর্চা হবে খেলার ছলে সন্তানকে যোগাভ্যাস করার পরামর্শও দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হু-এর এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটারের সঙ্গে যতটা কম সময় কাটাবে, ততই ভালো। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা দিনে বড়জোড় ১ ঘণ্টা টিভি বা কম্পিউটারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। এর বেশি হলেই বাড়বে বিপদ! সুতরাং, সন্তানের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নির্দেশিকা মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

স্মার্টফোনে অতিরিক্ত আসক্তি, বিপদ শিশুদের

আপলোড টাইম : ০৯:২০:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতি ৩ জনে ১ জন শিশু
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনা আবহে মানুষের জীবনের চেনা ছন্দটা আজ অনেকটাই বদলে গেছে। কাজের লোকের আসা বন্ধ হয়েছে। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এ অফিসের কাজের চাপ সামলে ঘরের এমন অনেক কাজ করতে হচ্ছে যেগুলো সম্পর্কে লকডাউনের আগ পর্যন্ত তেমন কোনো ধারণা ছিল না। ফলে অফিসে আর বাড়ির কাজ সামলে বেশির ভাগ বাবা-মায়েরই তাদের সন্তানকে দেয়ার মতো সময় অনেকটাই কমে গিয়েছে। একান্নবর্তী পরিবারের সংখ্যাও এখন ‘হাতেগোনা’। ফলে শিশুকে সময় দেয়ার মতো কেউ নেই। মানতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব, তাই বাইরে বেরিয়ে শিশুর খেলাধুলোরও সুযোগ নেই বললেই চলে। ফলে বদ্ধ ঘরেই স্মার্টফোন, টিভি, কম্পিউটারের সঙ্গে কাটছে বেশির ভাগ শিশুর শৈশব। তবে শুধু নিউ নরমাল লাইফেই নয়, বছরের বেশির ভাগ সময়েই বাবা-মায়ের ব্যস্ততায় স্মার্টফোন, টিভি আর কম্পিউটারের সঙ্গে সময় কাটাতেই বাচ্চারা বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক!
ইউনিসেফের একটি সমীক্ষা বলছে, বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন শিশু। প্রতিদিন সংখ্যাটা প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার, যার অর্থ প্রতি হাফ সেকেন্ডে একজন শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। শুধু তাই নয়, সমীক্ষা বলছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশেরই বয়স ১০-এর নিচে। স্মার্টফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশন মস্তিষ্ক, কান-সহ নানা অঙ্গের ক্ষতি করে। একটি বাচ্চার স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠার সময়ে তা আরো ক্ষতিকর। মস্তিষ্ক ও কানে নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার ভয়ও উড়িয়ে দেয়া যায় না। যত বেশি সময় শিশু টিভি, স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের সঙ্গে কাটাবে, ততই তার মানসিক, শারীরিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য খেলার মাঠই উপযুক্ত। ২ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের যতো বেশি করে শারীরিক ক্রিয়াকলাপে, দোড়ঝাঁপ, খেলাধুলোয় নিযুক্ত করা যায়, ততই ভালো। যে বয়স শিশুকে মানসিক ভাবে সুস্থ, সুন্দর ও বড় করে তুলতে সাহায্য করে, সেই সময়েই থাবা বসায় স্মার্টফোন। সারাক্ষণ ফোনে ডুবে থাকার ফলে অপেক্ষা করার অভ্যেস হ্রাস পায়। ফোনের প্রতি আসক্ত বাচ্চাটিকে ফোন না দিলে তার বিরক্তির ভাব দেখা দেয়। কথোপকথনেও অল্পেই ধৈর্য হারিয়ে বিরক্ত হয়ে পড়ে তারা। খারাপ ব্যবহারও অস্বাভাবিক নয়। এমনকী সারাদিন অতিরিক্ত ফোন, ট্যাবের ব্যবহার বাচ্চার স্বাভাবিক ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। ফোনে আটকে থাকা শিশুর সৌজন্যবোধ হারিয়ে যেতে পারে। আবার যারা সেলফি তোলায় মগ্ন, তাদের অনেকের মধ্যেই আত্মকেন্দ্রিকতার লক্ষণ প্রবল হয়ে ওঠে বলে জানাচ্ছেন, মনস্তত্ত্ববিদরা।
পড়াশুনার বাইরে অবসর সময় কাটানোর জন্য সন্তানের হাতে মোবাইলফোনের পরিবর্তে গল্পের বই, ধাঁধার সামগ্রী তুলে দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি সন্তানের সঙ্গে খেলায় সঙ্গ দেয়ার জন্য বাড়ির বড়দেরও এগিয়ে আসতে হবে। তার ফলে বাড়ির খুদেটির শরীর চর্চা হবে খেলার ছলে সন্তানকে যোগাভ্যাস করার পরামর্শও দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হু-এর এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটারের সঙ্গে যতটা কম সময় কাটাবে, ততই ভালো। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা দিনে বড়জোড় ১ ঘণ্টা টিভি বা কম্পিউটারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। এর বেশি হলেই বাড়বে বিপদ! সুতরাং, সন্তানের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নির্দেশিকা মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।