ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৮:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০
  • / ১৬১ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভায় এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার
> এলাকা অনুযায়ী গুচ্ছ পদ্ধতিতে লকডাউন
> স্বাস্থ্যবিধি না মানলে শহরের বড় বড় সব মার্কেট বন্ধ করা হবে
> পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে প্রশাসন
> এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় চলাচল বন্ধ
> বয়স্ক মানুষজন বাজারে আসতে পারবেন না
মেহেরাব্বিন সানভী:
চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এলাকা অনুযায়ী গুচ্ছ পদ্ধতিতে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা হবে। লকডাউনকৃত এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট বাদে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রাখা এবং ওই এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাটও বিকেল পাঁচটার পর বন্ধ থাকবে। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে শহরের বড় বড় শপিংমল থেকে শুরু করে সমস্ত মার্কেট বন্ধ করা হতে পারে বলে কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়েছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ সভায় সভাপত্বি করেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় দিন দিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। পৌরসভায় যাতে করোনাভাইরাসের প্রর্দুভাব আর বেশি বৃদ্ধি না হয়, সেজন্য আমি প্রত্যেকটা ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করে দিয়েছি। এই কমিটিকে কাজ করতে সঠিকভাবে। দায়িত্ব নিয়েই প্রত্যেকটা কাজ সম্পাদন করতে হবে।’ তিনি বলেন, যদি কেউ বাড়িতে আইসোলেশনের নিয়ম না মানে, তবে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড অনেক সুন্দর। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন ভবন। থাকার কোনো সমস্যা নেই। সেখানে করোনা আক্রান্তদের বুঝিয়ে আনতে হবে।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, ‘গত এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮৭৫ জনকে মোবাইল কোর্টের আওতায় এনে ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৬০টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এগুলো কিন্তু এমনিতে না, সরকারি নির্দেশনা না মানার কারণেই এই জরিমানা। আমি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে শুক্রবার-শনিবারেও ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে ঘরে থাকতে দিইনি। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রচুর অভাব।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এলাকায় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ছোট ছোট করে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা হবে। উপজেলা থেকে উপজেলা চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে দূরপাল্লার গাড়িগুলো চলাচল করবে। সিএনজি ইজিবাইক এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় চলবে না। কারো সঙ্গে কম্প্রমাইজ করা যাবে না। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন। বয়স্ক মানুষজন বাজারে আসতে পারবে না। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে শহরের বড় বড় শপিংমল থেকে শুরু করে সমস্ত মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। দোকানগুলো সিলগালা করা হবে। একবার সিলগালা করা হলে করোনাভাইরাস যতদিন থাকবে ততদিন আর খুলতে দেব না।’ তিনি আরও বলেন, যাদেরকে লকডাউন করা হয়েছে, ওয়ার্ড কমিটি নিয়মিত তাদের খোঁজ নিবে। যারা অস্বচ্ছল, তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার করে দেওয়া হবে। তবে কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সবাই করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে সচেতন হতে হবে। আশেপাশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। শহরে প্রতিনিয়তই সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। প্রত্যেককে কাজ করতে হবে। আসলে মুখে অনেকেই কথা বলে, কিন্তু কাজ করে না। কাজ না করলে হবে না। বড় বড় বাজারগুলোতে বেশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতেই চাচ্ছে না কেউ। আসলে এটি কিন্তু ঠিক নয়। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এবার আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি প্রশাসনকে শক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জরিমানার সঙ্গে সঙ্গে শক্ত এবং কঠোর শাস্তি দিতে হবে। কোনো সমস্যা হলে আমি সামনে যেয়ে দাঁড়াব। তবে কঠোর হতে হবে। কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া যাবে না।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান জিপু, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শামীম কবির, চুয়াডাঙ্গা জেলা মার্কেটিং অফিসার শহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সদস্য ও রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শাহান, চুয়াডাঙ্গা জেলা দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি আব্দুল কাদের জগলু, সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার, নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন খান, চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য আড়ৎ মালিক সমিতির নেতা ওহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা প্রিন্স প্লাজা দোকান মালিক সমিতির নেতা আহসান খান, বাদশা প্রমুখ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে

আপলোড টাইম : ১০:৫৮:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০

চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভায় এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার
> এলাকা অনুযায়ী গুচ্ছ পদ্ধতিতে লকডাউন
> স্বাস্থ্যবিধি না মানলে শহরের বড় বড় সব মার্কেট বন্ধ করা হবে
> পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে প্রশাসন
> এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় চলাচল বন্ধ
> বয়স্ক মানুষজন বাজারে আসতে পারবেন না
মেহেরাব্বিন সানভী:
চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এলাকা অনুযায়ী গুচ্ছ পদ্ধতিতে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা হবে। লকডাউনকৃত এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট বাদে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রাখা এবং ওই এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাটও বিকেল পাঁচটার পর বন্ধ থাকবে। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে শহরের বড় বড় শপিংমল থেকে শুরু করে সমস্ত মার্কেট বন্ধ করা হতে পারে বলে কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়েছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ সভায় সভাপত্বি করেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় দিন দিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। পৌরসভায় যাতে করোনাভাইরাসের প্রর্দুভাব আর বেশি বৃদ্ধি না হয়, সেজন্য আমি প্রত্যেকটা ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করে দিয়েছি। এই কমিটিকে কাজ করতে সঠিকভাবে। দায়িত্ব নিয়েই প্রত্যেকটা কাজ সম্পাদন করতে হবে।’ তিনি বলেন, যদি কেউ বাড়িতে আইসোলেশনের নিয়ম না মানে, তবে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড অনেক সুন্দর। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন ভবন। থাকার কোনো সমস্যা নেই। সেখানে করোনা আক্রান্তদের বুঝিয়ে আনতে হবে।
জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, ‘গত এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮৭৫ জনকে মোবাইল কোর্টের আওতায় এনে ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৬৬০টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এগুলো কিন্তু এমনিতে না, সরকারি নির্দেশনা না মানার কারণেই এই জরিমানা। আমি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে শুক্রবার-শনিবারেও ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে ঘরে থাকতে দিইনি। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রচুর অভাব।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এলাকায় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ছোট ছোট করে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা হবে। উপজেলা থেকে উপজেলা চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে দূরপাল্লার গাড়িগুলো চলাচল করবে। সিএনজি ইজিবাইক এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় চলবে না। কারো সঙ্গে কম্প্রমাইজ করা যাবে না। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন। বয়স্ক মানুষজন বাজারে আসতে পারবে না। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে শহরের বড় বড় শপিংমল থেকে শুরু করে সমস্ত মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। দোকানগুলো সিলগালা করা হবে। একবার সিলগালা করা হলে করোনাভাইরাস যতদিন থাকবে ততদিন আর খুলতে দেব না।’ তিনি আরও বলেন, যাদেরকে লকডাউন করা হয়েছে, ওয়ার্ড কমিটি নিয়মিত তাদের খোঁজ নিবে। যারা অস্বচ্ছল, তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার করে দেওয়া হবে। তবে কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সবাই করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে সচেতন হতে হবে। আশেপাশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। শহরে প্রতিনিয়তই সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে। প্রত্যেককে কাজ করতে হবে। আসলে মুখে অনেকেই কথা বলে, কিন্তু কাজ করে না। কাজ না করলে হবে না। বড় বড় বাজারগুলোতে বেশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতেই চাচ্ছে না কেউ। আসলে এটি কিন্তু ঠিক নয়। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এবার আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি প্রশাসনকে শক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জরিমানার সঙ্গে সঙ্গে শক্ত এবং কঠোর শাস্তি দিতে হবে। কোনো সমস্যা হলে আমি সামনে যেয়ে দাঁড়াব। তবে কঠোর হতে হবে। কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া যাবে না।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান জিপু, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শামীম কবির, চুয়াডাঙ্গা জেলা মার্কেটিং অফিসার শহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সদস্য ও রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শাহান, চুয়াডাঙ্গা জেলা দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি আব্দুল কাদের জগলু, সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার, নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন খান, চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য আড়ৎ মালিক সমিতির নেতা ওহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা প্রিন্স প্লাজা দোকান মালিক সমিতির নেতা আহসান খান, বাদশা প্রমুখ।