ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

স্বাধীনতা দিবস; গড়ে তুলতে হবে রাজনৈতিক ঐকমত্য

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২১:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ ২০১৮
  • / ৩১২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪৮তম বছরে পদার্পণ করছে, এ বড় আনন্দের বিষয়। একটি জাতির স্বাধীনতা তার ইতিহাসে যেমন গৌরবের, তেমনি বেদনার। অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই সব জানা-অজানা শহীদকে, যারা তাদের বর্তমানকে বিসর্জন দিয়ে গেছেন এ দেশের ভবিষ্যৎকে সুন্দর করার জন্য। আমরা শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযুদ্ধের সব সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাকে। মহাকালের বিচারে ৪৭ বছর খুব বড় সময় নয়। তবে এ সময়ের ব্যবধানে কোনো কোনো জাতির অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার নজিরও আছে। আজ আমাদের বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, স্বাধীনতার চার দশকে আমরা কতটা এগিয়েছি, কী ছিল আমাদের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা, পূরণ হয়েছে কতটা? কোথায় আমাদের ব্যর্থতা, কী এর কারণ? স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য যদি হয় ভৌগোলিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা ভূখ-ের অধিকারী হওয়া, তাহলে তা অর্জিত হয়েছে। তবে শুধু এটুকুই মানুষের প্রত্যাশা ছিল না। পাকিস্তানের শঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে দেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা- এ প্রত্যাশাও ছিল ব্যাপকভাবে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের রায় মেনে না নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যুগপৎ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দাবি প্রবল হয়ে ওঠে বাঙালির মধ্যে। তবে স্বাধীনতার পর দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলেও তা হোঁচট খেয়েছে বারবার। বজায় থাকেনি এর ধারাবাহিকতা। ফলে আজও প্রাতিষ্ঠানিকতা পায়নি গণতন্ত্র। রাজনীতিতে ঐকমত্যের অভাব ও অসহিষ্ণুতাও এর বড় কারণ। অন্তত জাতীয় ইস্যুগুলোয় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ঐক্য থাকা প্রয়োজন হলেও কোনো শাসনামলেই তা দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থই হয়ে উঠেছে মুখ্য। এটা সত্য, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারী উন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিছু হলেও সাফল্য রয়েছে আমাদের। জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিলেও এর উত্থান ঠেকিয়ে রাখা গেছে। এর মূল কৃতিত্বের দাবিদার জনগণ। এ দেশের মানুষ ধর্মের নামে সহিংসতা সমর্থন করে না। তা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে; গড়ে তুলতে হবে রাজনৈতিক ঐকমত্য। সরকারকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে হতে হবে অঙ্গীকারবদ্ধ। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে সব বিভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সেই ঐক্যের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব- এ প্রত্যাশা সবার। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যেসব বিদেশী নাগরিক ও সংগঠন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, ইতিপূর্বে তাদের পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা জানানো হয়েছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ সন্দেহ নেই। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী সম্মাননাপ্রাপ্তের সংখ্যা ক্ষুদ্রংশ। এ তালিকার বাইরেও রয়ে গেছেন মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী অনেকে। আমরা আশা করব, পরবর্তী সময়ে তাদেরও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

স্বাধীনতা দিবস; গড়ে তুলতে হবে রাজনৈতিক ঐকমত্য

আপলোড টাইম : ০৯:২১:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪৮তম বছরে পদার্পণ করছে, এ বড় আনন্দের বিষয়। একটি জাতির স্বাধীনতা তার ইতিহাসে যেমন গৌরবের, তেমনি বেদনার। অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই সব জানা-অজানা শহীদকে, যারা তাদের বর্তমানকে বিসর্জন দিয়ে গেছেন এ দেশের ভবিষ্যৎকে সুন্দর করার জন্য। আমরা শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযুদ্ধের সব সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাকে। মহাকালের বিচারে ৪৭ বছর খুব বড় সময় নয়। তবে এ সময়ের ব্যবধানে কোনো কোনো জাতির অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার নজিরও আছে। আজ আমাদের বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, স্বাধীনতার চার দশকে আমরা কতটা এগিয়েছি, কী ছিল আমাদের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা, পূরণ হয়েছে কতটা? কোথায় আমাদের ব্যর্থতা, কী এর কারণ? স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য যদি হয় ভৌগোলিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা ভূখ-ের অধিকারী হওয়া, তাহলে তা অর্জিত হয়েছে। তবে শুধু এটুকুই মানুষের প্রত্যাশা ছিল না। পাকিস্তানের শঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে দেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা- এ প্রত্যাশাও ছিল ব্যাপকভাবে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের রায় মেনে না নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যুগপৎ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দাবি প্রবল হয়ে ওঠে বাঙালির মধ্যে। তবে স্বাধীনতার পর দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলেও তা হোঁচট খেয়েছে বারবার। বজায় থাকেনি এর ধারাবাহিকতা। ফলে আজও প্রাতিষ্ঠানিকতা পায়নি গণতন্ত্র। রাজনীতিতে ঐকমত্যের অভাব ও অসহিষ্ণুতাও এর বড় কারণ। অন্তত জাতীয় ইস্যুগুলোয় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ঐক্য থাকা প্রয়োজন হলেও কোনো শাসনামলেই তা দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থই হয়ে উঠেছে মুখ্য। এটা সত্য, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারী উন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিছু হলেও সাফল্য রয়েছে আমাদের। জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিলেও এর উত্থান ঠেকিয়ে রাখা গেছে। এর মূল কৃতিত্বের দাবিদার জনগণ। এ দেশের মানুষ ধর্মের নামে সহিংসতা সমর্থন করে না। তা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে; গড়ে তুলতে হবে রাজনৈতিক ঐকমত্য। সরকারকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে হতে হবে অঙ্গীকারবদ্ধ। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে সব বিভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সেই ঐক্যের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব- এ প্রত্যাশা সবার। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যেসব বিদেশী নাগরিক ও সংগঠন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, ইতিপূর্বে তাদের পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা জানানো হয়েছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ সন্দেহ নেই। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী সম্মাননাপ্রাপ্তের সংখ্যা ক্ষুদ্রংশ। এ তালিকার বাইরেও রয়ে গেছেন মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী অনেকে। আমরা আশা করব, পরবর্তী সময়ে তাদেরও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা হবে।