ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যা : পুলিশের খাঁচায় ঘাতক স্বামী বাবলু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মার্চ ২০১৮
  • / ৬৫৫ বার পড়া হয়েছে

আলমডাঙ্গার কুমারীতে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই
নিজস্ব প্রতিবেদক/আলমডাঙ্গা প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারীতে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরধরে প্রতিপক্ষদের ফাসাঁতে কৌশলে স্ত্রীকে হত্যা করেছে পাষন্ড এক স্বামী। গত ২২ মার্চে রাতে এ ঘটনা ঘটলে গতকাল শুক্রবার প্রকৃত ঘটনা ফাঁস হলে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ সন্তানের জননী হাসনাকে হত্যাকারী স্বামী বাবলুকে আটক করেছে। এ ঘটনায় নিহত হাসনার ভাই চাঁদপুর জেলার দক্ষিণ রঘুনাথপুরের ইদ্রিস আলীর ছেলে খোরশেদ আলী বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আজ সংশ্লিষ্ট মামলায় ঘাতক বাবলুকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে বাবুল হোসেনের সাথে তার মামা নজরুল, শাকের ও খালা নুরজাহানের দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মামলা চলছিলো। এখনও পর্যন্ত জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ের ওই মামলায় কোন রায় হয়নি। রায় নিজের পক্ষে নিতে এরআগে বাবলু অনেকবার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে অবশেষে ব্যর্থ হয়ে প্রতিপক্ষ মামা ও খালাদের ফাঁসাতে নিজের স্ত্রীকে হত্যা করে। জানা গেছে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর কুটকৌশল অনুযায়ী বাবুল গত ৫ দিন আগে ঢাকায় যাচ্ছে বলে বাড়ী থেকে বের হয়। সে সময় স্ত্রী হাসনাকে বলে আমি ঢাকায় যাচ্ছি না। মামাদের মামলায় হারাতে আমি একটা পরিকল্পনা করেছি। সবাই জানবে ঢাকায়। কিন্তু তুমি দরজা খুলে রাখবে আমি গোপনে রাতে বাড়ীতে ঢুকে পড়বো। বাড়ীতে এসে আমি আমার পরিকল্পনা তোমাকে জানাবো বলেও স্ত্রী হাসনাকে জানায় স্বামী বাবলু। স্বামীর কথায় সরল বিশ্বাসে রাজী হয়ে যায় হাসনা। কে জানতো স্বামীর হাতে সে নিজেই বলি হতে চলেছে। যা হোক ২১ মার্চ দিনগত প্রায় ভোরে খুব গোপনে বাড়ীতে ঢোকে বাবলু। ওই সারাদিন নিজের ঘরের খাটের নিচে লুকিয়ে থাকার একপর্যায়ে বাবলুর বড় মেয়ে আনিশা (১৪) ও ২ বছরের ছেলে শাহান ঘরের মেঝেতে খেলতে যেয়ে বাবাকে খাটের নিচে আবিস্কার করে। এ সময় ছোট্ট শাহান বাবলুকে বাবা বাবা বলে ডাকলে বাবলু বড় মেয়েকে বলে আমি বাড়ীতে আছি এবং লুকিয়ে আছি কাউকে বলবে না। ওইদিন রাতে খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে বাবলু তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে। রাতে স্ত্রী হাসনার সাথে শারিরীক সম্পর্কেও মিলিত হয় বাবলু। এরপর সুযোগ বুঝে স্ত্রী হাসনাকে নিজ হাকে গলা টিপে হত্যা করে সে। এ সময় বাবলুর বড় মেয়ে গোঙানির আওয়াজে পিতাকে জিজ্ঞাসা করে- কি হয়েছে?। তখন বাবলু বলে- তোমরা ঘুমিয়ে পড়, তোমার মায়ের শরীর খারাপ সে ঘুমাচ্ছে। পরে বাবলু পালিয়ে যাওয়ার সময় তার মেয়েকে বলে যায় আমি চলে যাচ্ছি। বাড়ী পুলিশ আসলে বলবা আমার আব্বু ঢাকায় গেছে; বলে সে পালিয়ে যায়। পরেরদিন গত বৃহস্পতিবার সকালে রহস্যজনক মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে তিন সন্তানের জননী হাসনার লাশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমারী গ্রামে নিয়ে রাত ১০টায় দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। এরমধ্যে স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদ জানাতে বাবলুকে অনেকবার তার মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলেও সে কল রিসিভ করে না। স্বামীর উপস্থিত ছাড়াই ওই দিন হাসনার লাশ দাফন হয়। বাবলু ফোনর রিসিভ না করায় অনেকে বাবলুকে সন্দেহ করে। এদিকে বড় মেয়ে প্রতিবেশীদের নিকট তার মাকে তার পিতা বাবলু হত্যা করেছে বলে জানায় এবং বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলে। আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা বাবলুর সন্ধানে নামে। এরমধ্যে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে বাবলু হঠাৎ বাড়ীতে এসে তার বড় মেয়ের কাছে তার মা কোথায় জানতে চেয়ে অভিনয় শুরু করলে স্থানীয়রা দ্রুত আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে খবর দেয়। সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের এসআই গিয়াস সঙ্গীয় ফোর্সসহ কুমারী গ্রামে উপস্থিত হয়ে তড়িৎ অভিযানে স্ত্রী হত্যার সন্দেহে স্বামী বাবলুকে আটক করলে পুরো ঘটনা বেরিয়ে আসে। থানা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবলু প্রতিপক্ষ মামাদের ফাঁসাতে স্ত্রী হাসনাকে হত্যা করেছে বলে অকপটে দ্বায় স্বীকার করে। তাছাড়া আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘাতক বাবলুর বড় মেয়ে আনিশার কাছে ঘটনার বিস্তারিত শোনে এবং তার স্বাক্ষর নেয়। এঘটনার পরে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে স্থানীয়রা সাধুবাদ জানিয়েছে। জমিজমা সংক্রান্ত মামলায় নিজের পক্ষে রায় নিতে প্রতিপক্ষ মামা ও খালাদের ফাঁসাতে স্ত্রীকে খুন করা ঘাতক স্বামী বাবলুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে ঘাতক বাবলুর বড় মেয়ে মেয়ে আনিশা (১৪) ও মনিশা (১১)সহ এলাকাবাসী। এদিকে মাকে হারিয়ে ছোট্ট শাহান শুধু মা মা করে শুধুই কাঁদছে। তার কান্নায় এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। কোন কিছুতেই এখন তাকে শান্ততা দেয়া যাচ্ছে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যা : পুলিশের খাঁচায় ঘাতক স্বামী বাবলু

আপলোড টাইম : ১০:০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মার্চ ২০১৮

আলমডাঙ্গার কুমারীতে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই
নিজস্ব প্রতিবেদক/আলমডাঙ্গা প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারীতে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরধরে প্রতিপক্ষদের ফাসাঁতে কৌশলে স্ত্রীকে হত্যা করেছে পাষন্ড এক স্বামী। গত ২২ মার্চে রাতে এ ঘটনা ঘটলে গতকাল শুক্রবার প্রকৃত ঘটনা ফাঁস হলে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ সন্তানের জননী হাসনাকে হত্যাকারী স্বামী বাবলুকে আটক করেছে। এ ঘটনায় নিহত হাসনার ভাই চাঁদপুর জেলার দক্ষিণ রঘুনাথপুরের ইদ্রিস আলীর ছেলে খোরশেদ আলী বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আজ সংশ্লিষ্ট মামলায় ঘাতক বাবলুকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে বাবুল হোসেনের সাথে তার মামা নজরুল, শাকের ও খালা নুরজাহানের দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মামলা চলছিলো। এখনও পর্যন্ত জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ের ওই মামলায় কোন রায় হয়নি। রায় নিজের পক্ষে নিতে এরআগে বাবলু অনেকবার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে অবশেষে ব্যর্থ হয়ে প্রতিপক্ষ মামা ও খালাদের ফাঁসাতে নিজের স্ত্রীকে হত্যা করে। জানা গেছে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর কুটকৌশল অনুযায়ী বাবুল গত ৫ দিন আগে ঢাকায় যাচ্ছে বলে বাড়ী থেকে বের হয়। সে সময় স্ত্রী হাসনাকে বলে আমি ঢাকায় যাচ্ছি না। মামাদের মামলায় হারাতে আমি একটা পরিকল্পনা করেছি। সবাই জানবে ঢাকায়। কিন্তু তুমি দরজা খুলে রাখবে আমি গোপনে রাতে বাড়ীতে ঢুকে পড়বো। বাড়ীতে এসে আমি আমার পরিকল্পনা তোমাকে জানাবো বলেও স্ত্রী হাসনাকে জানায় স্বামী বাবলু। স্বামীর কথায় সরল বিশ্বাসে রাজী হয়ে যায় হাসনা। কে জানতো স্বামীর হাতে সে নিজেই বলি হতে চলেছে। যা হোক ২১ মার্চ দিনগত প্রায় ভোরে খুব গোপনে বাড়ীতে ঢোকে বাবলু। ওই সারাদিন নিজের ঘরের খাটের নিচে লুকিয়ে থাকার একপর্যায়ে বাবলুর বড় মেয়ে আনিশা (১৪) ও ২ বছরের ছেলে শাহান ঘরের মেঝেতে খেলতে যেয়ে বাবাকে খাটের নিচে আবিস্কার করে। এ সময় ছোট্ট শাহান বাবলুকে বাবা বাবা বলে ডাকলে বাবলু বড় মেয়েকে বলে আমি বাড়ীতে আছি এবং লুকিয়ে আছি কাউকে বলবে না। ওইদিন রাতে খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে বাবলু তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে। রাতে স্ত্রী হাসনার সাথে শারিরীক সম্পর্কেও মিলিত হয় বাবলু। এরপর সুযোগ বুঝে স্ত্রী হাসনাকে নিজ হাকে গলা টিপে হত্যা করে সে। এ সময় বাবলুর বড় মেয়ে গোঙানির আওয়াজে পিতাকে জিজ্ঞাসা করে- কি হয়েছে?। তখন বাবলু বলে- তোমরা ঘুমিয়ে পড়, তোমার মায়ের শরীর খারাপ সে ঘুমাচ্ছে। পরে বাবলু পালিয়ে যাওয়ার সময় তার মেয়েকে বলে যায় আমি চলে যাচ্ছি। বাড়ী পুলিশ আসলে বলবা আমার আব্বু ঢাকায় গেছে; বলে সে পালিয়ে যায়। পরেরদিন গত বৃহস্পতিবার সকালে রহস্যজনক মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে তিন সন্তানের জননী হাসনার লাশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমারী গ্রামে নিয়ে রাত ১০টায় দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। এরমধ্যে স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদ জানাতে বাবলুকে অনেকবার তার মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলেও সে কল রিসিভ করে না। স্বামীর উপস্থিত ছাড়াই ওই দিন হাসনার লাশ দাফন হয়। বাবলু ফোনর রিসিভ না করায় অনেকে বাবলুকে সন্দেহ করে। এদিকে বড় মেয়ে প্রতিবেশীদের নিকট তার মাকে তার পিতা বাবলু হত্যা করেছে বলে জানায় এবং বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলে। আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা বাবলুর সন্ধানে নামে। এরমধ্যে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে বাবলু হঠাৎ বাড়ীতে এসে তার বড় মেয়ের কাছে তার মা কোথায় জানতে চেয়ে অভিনয় শুরু করলে স্থানীয়রা দ্রুত আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে খবর দেয়। সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের এসআই গিয়াস সঙ্গীয় ফোর্সসহ কুমারী গ্রামে উপস্থিত হয়ে তড়িৎ অভিযানে স্ত্রী হত্যার সন্দেহে স্বামী বাবলুকে আটক করলে পুরো ঘটনা বেরিয়ে আসে। থানা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবলু প্রতিপক্ষ মামাদের ফাঁসাতে স্ত্রী হাসনাকে হত্যা করেছে বলে অকপটে দ্বায় স্বীকার করে। তাছাড়া আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘাতক বাবলুর বড় মেয়ে আনিশার কাছে ঘটনার বিস্তারিত শোনে এবং তার স্বাক্ষর নেয়। এঘটনার পরে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে স্থানীয়রা সাধুবাদ জানিয়েছে। জমিজমা সংক্রান্ত মামলায় নিজের পক্ষে রায় নিতে প্রতিপক্ষ মামা ও খালাদের ফাঁসাতে স্ত্রীকে খুন করা ঘাতক স্বামী বাবলুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে ঘাতক বাবলুর বড় মেয়ে মেয়ে আনিশা (১৪) ও মনিশা (১১)সহ এলাকাবাসী। এদিকে মাকে হারিয়ে ছোট্ট শাহান শুধু মা মা করে শুধুই কাঁদছে। তার কান্নায় এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। কোন কিছুতেই এখন তাকে শান্ততা দেয়া যাচ্ছে না।