ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সোহেল উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩০:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯
  • / ২৪১ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন নেভানো ও আটকেপড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেন ফায়ারম্যান সোহেল রানা। সেদিন অনেকের জীবন বাঁচাতে পারলেও তিনি নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহেল গত রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আগুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা তেজোদ্দীপ্ত এই সৈনিকের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। অন্যের জীবন বাঁচিয়ে নিজের জীবন বিসর্জন করে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। আমরাও কর্তব্যপরায়ণ এই সৈনিকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। গণমাধ্যমের খবরে জেনেছি, সোহেল রানার মৃত্যুতে পরিবারে বইছে মাতম। পনেরো দিনের দীর্ঘ ছুটি নিয়ে মায়ের কোলে ফেরা হলো না তার। চিরতরে জীবন থেকে ছুটি নিয়ে সারাজীবনের জন্য মায়ের কাছে লাশ হয়ে ফিরলেন সোহেল রানা। পরিবারের শোকের মাতম যেন ছড়িয়ে পড়েছে তার পুরো গ্রাম থেকে গোটা দেশে। দেশের সর্বত্রই সোহেল রানার অসম সাহসিকতা আর মহানুভবতার বিষয়টিই আলোচিত হচ্ছে। গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। আগুনে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত। সোহেল রানা কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। আগুন লাগার খবরে দায়িত্ব পালন করতে বনানীর এফ আর টাওয়ারে ছুটে যান। তিনি উঁচু ল্যাডার (মই) দিয়ে আগুন নেভানো ও আটকেপড়াদের উদ্ধারে কাজ করছিলেন। ভবনে আটকেপড়া পাঁচজনকে উদ্ধার করে ল্যাডারে থাকা নির্ধারিত জায়গায় রাখেন। প্রতিটি ল্যাডারের ধারণক্ষমতা থাকে। ওই ল্যাডারটির ধারণক্ষমতা ছিল মানুষভেদে ছয় থেকে সাতজন। ল্যাডারে সোহেল রানার সঙ্গে আরো দুজন ফায়ারম্যান এবং উদ্ধার হওয়া পাঁচজন থাকায় ল্যাডারটি ওভারলোড দেখাচ্ছিল। পরে আটকেপড়া বেশি মানুষের জায়গা দিতে গিয়ে তিনি লেডারের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছিলেন। এ সময় পা আটকে গুরুতর আহত হন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবশেষে মৃত্যুবরণ করেন। নিজের জীবন বিপন্ন করে কর্তব্য পালনের এমন নজির খুব বেশি নেই। সোহেলের সুচিকিৎসার ত্রুটি করেননি সরকার। উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে গিয়েও তাকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না। সোহেলের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্য সরকারের তরফ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এই মর্মান্তিক মৃত্যুতেও সোহেলের পরিবার যাতে আর্থসামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন বলে প্রত্যাশা রাখছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সোহেল উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন

আপলোড টাইম : ১০:৩০:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০১৯

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন নেভানো ও আটকেপড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেন ফায়ারম্যান সোহেল রানা। সেদিন অনেকের জীবন বাঁচাতে পারলেও তিনি নিজেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহেল গত রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আগুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা তেজোদ্দীপ্ত এই সৈনিকের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। অন্যের জীবন বাঁচিয়ে নিজের জীবন বিসর্জন করে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। আমরাও কর্তব্যপরায়ণ এই সৈনিকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। গণমাধ্যমের খবরে জেনেছি, সোহেল রানার মৃত্যুতে পরিবারে বইছে মাতম। পনেরো দিনের দীর্ঘ ছুটি নিয়ে মায়ের কোলে ফেরা হলো না তার। চিরতরে জীবন থেকে ছুটি নিয়ে সারাজীবনের জন্য মায়ের কাছে লাশ হয়ে ফিরলেন সোহেল রানা। পরিবারের শোকের মাতম যেন ছড়িয়ে পড়েছে তার পুরো গ্রাম থেকে গোটা দেশে। দেশের সর্বত্রই সোহেল রানার অসম সাহসিকতা আর মহানুভবতার বিষয়টিই আলোচিত হচ্ছে। গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। আগুনে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত। সোহেল রানা কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। আগুন লাগার খবরে দায়িত্ব পালন করতে বনানীর এফ আর টাওয়ারে ছুটে যান। তিনি উঁচু ল্যাডার (মই) দিয়ে আগুন নেভানো ও আটকেপড়াদের উদ্ধারে কাজ করছিলেন। ভবনে আটকেপড়া পাঁচজনকে উদ্ধার করে ল্যাডারে থাকা নির্ধারিত জায়গায় রাখেন। প্রতিটি ল্যাডারের ধারণক্ষমতা থাকে। ওই ল্যাডারটির ধারণক্ষমতা ছিল মানুষভেদে ছয় থেকে সাতজন। ল্যাডারে সোহেল রানার সঙ্গে আরো দুজন ফায়ারম্যান এবং উদ্ধার হওয়া পাঁচজন থাকায় ল্যাডারটি ওভারলোড দেখাচ্ছিল। পরে আটকেপড়া বেশি মানুষের জায়গা দিতে গিয়ে তিনি লেডারের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছিলেন। এ সময় পা আটকে গুরুতর আহত হন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবশেষে মৃত্যুবরণ করেন। নিজের জীবন বিপন্ন করে কর্তব্য পালনের এমন নজির খুব বেশি নেই। সোহেলের সুচিকিৎসার ত্রুটি করেননি সরকার। উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে গিয়েও তাকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না। সোহেলের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্য সরকারের তরফ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এই মর্মান্তিক মৃত্যুতেও সোহেলের পরিবার যাতে আর্থসামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন বলে প্রত্যাশা রাখছি।