ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সর্দি-জ্বর নিয়ে নৌ সেনার মৃত্যু, মেহেরপুরে করোনা আতঙ্ক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৪৩:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ এপ্রিল ২০২০
  • / ২৯৩ বার পড়া হয়েছে

আলমডাঙ্গা ও মেহেরপুর অফিস:
মেহেরপুরে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নাজমুল হক (৩৫) নামের এক নৌবাহিনীর সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় করোনা সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ওই নৌবাহিনীর সদস্যের বাড়িসহ আশাপাশের আরও কয়েকটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে লাল পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছে মেহেরপুর সদর থানার পুলিশ। নাজমুল হক চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য।
জানা যায়, করোনাভাইরাসের উপসর্গ সর্দি-জ্বর-গলাব্যথায় আক্রান্ত হয়ে নাজমুল হক মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের কোলা গ্রামের বাবুপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে কুষ্টিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর খবরে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ওই বাড়িটি লকডাউন ঘোষণা করে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয় মেহেরপুর সদর থানার পুলিশ। এরপর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে, নাজমুলের লাশ তাঁর শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজ গ্রাম আলমডাঙ্গার ফরিদপুরে পৌঁছালে সেখানেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ দারা খান জানান, বাবুপাড়ার খোকনের জামাতা নাজমুল হকের মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হওয়ায় ওই বাড়িটি লকডাউন ও আশপাশের কয়েকটি বাড়ির লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে।
প্রতিবেশীরা জানান, নাজমুল হক সর্দি-জ্বর-গলাব্যথায় আক্রান্ত ছিলেন বলে এলাকার অনেকেই জানেন। তাঁদের ধারণা, তাঁর মৃত্যু করোনাভাইরাস সংক্রমণে হয়ে থাকতে পারে।
নাজমুলের শাশুড়ি জানান, ১০ দিন ধরে নাজমুল হক তাঁদের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। লিভারের সমস্যার কারণে চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় কুষ্টিয়ায় নেওয়া হয় তাঁকে। সেখানে একটি হাসপাতালে ২ এপ্রিল রাত ৮টায় তাঁর মৃত্যু হয়।
আলমডাঙ্গার ফরিদপুর গ্রামবাসী ও মৃতের পরিবার জানিয়েছেন, নাজমুল দীর্ঘদিন ধরে লিভারের রোগে ভুগছিলেন। আড়াই বছর আগে তিনি জাতিসংঘের মিশনে বিদেশ গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে লিভারজনিত রোগ প্রকট হলে ৩ বছরের স্থলে ১ বছরের পর তাঁকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দেশে ফিরে গত দেড় বছর চিকিৎসাধীন ছিলেন বিভিন্ন সময়।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হাদী জিয়াউদ্দীন আহম্মেদ সাঈদ জানান, অসুস্থতার পর তিনি মেহেরপুর শ্বশুরবাড়ি উঠেছিলেন। বেশি অসুস্থ হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে আলসারের চিকিৎসা দিয়েছিলেন। এই মৃত্যুর সঙ্গে করোনাভাইরাসের কোনো সম্পর্ক নেই।
ফরিদপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষের ধারণা, লিভারের অসুখে নাজমুল হকের মৃত্য ঘটেছে। তারপরও মৃতের বাড়ির ভেতর কেউ যাচ্ছেন না। তাঁদের মনে রয়েছে করোনার শঙ্কা, করোনা হওয়া না হওয়ার দোলাচল। মিশর বিশ্বাস নামের এক গ্রামবাসী জানান, গ্রামের সকলেই জানে নাজমুলের লিভারের অসুখের কথা। কিন্তু টিভি চ্যানেলে নিউজ দেখে সকলের মধ্যে করোনা ভীতি ছড়িয়েছে।
এদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুরে গতকাল শুক্রবার আসরের নামাজের পর নাজমুল হকের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি টিম তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় লাশ দাফন করেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সর্দি-জ্বর নিয়ে নৌ সেনার মৃত্যু, মেহেরপুরে করোনা আতঙ্ক

আপলোড টাইম : ০২:৪৩:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ এপ্রিল ২০২০

আলমডাঙ্গা ও মেহেরপুর অফিস:
মেহেরপুরে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নাজমুল হক (৩৫) নামের এক নৌবাহিনীর সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় করোনা সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ওই নৌবাহিনীর সদস্যের বাড়িসহ আশাপাশের আরও কয়েকটি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে লাল পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছে মেহেরপুর সদর থানার পুলিশ। নাজমুল হক চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য।
জানা যায়, করোনাভাইরাসের উপসর্গ সর্দি-জ্বর-গলাব্যথায় আক্রান্ত হয়ে নাজমুল হক মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের কোলা গ্রামের বাবুপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে কুষ্টিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর খবরে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ওই বাড়িটি লকডাউন ঘোষণা করে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয় মেহেরপুর সদর থানার পুলিশ। এরপর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে, নাজমুলের লাশ তাঁর শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজ গ্রাম আলমডাঙ্গার ফরিদপুরে পৌঁছালে সেখানেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ দারা খান জানান, বাবুপাড়ার খোকনের জামাতা নাজমুল হকের মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হওয়ায় ওই বাড়িটি লকডাউন ও আশপাশের কয়েকটি বাড়ির লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে।
প্রতিবেশীরা জানান, নাজমুল হক সর্দি-জ্বর-গলাব্যথায় আক্রান্ত ছিলেন বলে এলাকার অনেকেই জানেন। তাঁদের ধারণা, তাঁর মৃত্যু করোনাভাইরাস সংক্রমণে হয়ে থাকতে পারে।
নাজমুলের শাশুড়ি জানান, ১০ দিন ধরে নাজমুল হক তাঁদের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। লিভারের সমস্যার কারণে চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় কুষ্টিয়ায় নেওয়া হয় তাঁকে। সেখানে একটি হাসপাতালে ২ এপ্রিল রাত ৮টায় তাঁর মৃত্যু হয়।
আলমডাঙ্গার ফরিদপুর গ্রামবাসী ও মৃতের পরিবার জানিয়েছেন, নাজমুল দীর্ঘদিন ধরে লিভারের রোগে ভুগছিলেন। আড়াই বছর আগে তিনি জাতিসংঘের মিশনে বিদেশ গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে লিভারজনিত রোগ প্রকট হলে ৩ বছরের স্থলে ১ বছরের পর তাঁকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দেশে ফিরে গত দেড় বছর চিকিৎসাধীন ছিলেন বিভিন্ন সময়।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হাদী জিয়াউদ্দীন আহম্মেদ সাঈদ জানান, অসুস্থতার পর তিনি মেহেরপুর শ্বশুরবাড়ি উঠেছিলেন। বেশি অসুস্থ হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে আলসারের চিকিৎসা দিয়েছিলেন। এই মৃত্যুর সঙ্গে করোনাভাইরাসের কোনো সম্পর্ক নেই।
ফরিদপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষের ধারণা, লিভারের অসুখে নাজমুল হকের মৃত্য ঘটেছে। তারপরও মৃতের বাড়ির ভেতর কেউ যাচ্ছেন না। তাঁদের মনে রয়েছে করোনার শঙ্কা, করোনা হওয়া না হওয়ার দোলাচল। মিশর বিশ্বাস নামের এক গ্রামবাসী জানান, গ্রামের সকলেই জানে নাজমুলের লিভারের অসুখের কথা। কিন্তু টিভি চ্যানেলে নিউজ দেখে সকলের মধ্যে করোনা ভীতি ছড়িয়েছে।
এদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুরে গতকাল শুক্রবার আসরের নামাজের পর নাজমুল হকের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি টিম তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় লাশ দাফন করেছে।