ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরিতে অনেকেই ক্ষুব্ধ : সরকারের শরিক দলগুলোর অস্বস্তি প্রকাশ:ভোটের রাজনীতিতে হেফাজত ফ্যাক্টর নানা আলোচনা বিএনপিতে উদ্বেগ : আওয়ামী লীগ শিবিরে নানা প্রশ্ন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৩৯:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৭
  • / ৩১৮ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: ভোট কি ঘনিয়ে আসছে? হিসাব মোতাবেক নির্বাচন এখনো বেশ দূর। ২০১৮ সালের শেষ অথবা ১৯ সালের শুরুতেই নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে এর আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। চলতি বছর শেষের দিকে অথবা ২০১৮ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন রাজনীতিতে চাপান উতোর চলছে হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে। চার বছর আগে হঠাৎ করেই শক্তি প্রদর্শন করা হেফাজতের সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠতা রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি করেছে। সরকারের শরিক দলগুলো এ নিয়ে প্রকাশ্যেই তাদের অস্বস্তি প্রকাশ করেছে। বুদ্ধিজীবীদের একাংশও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। হেফাজতের সঙ্গে কোনো ধরনের আপসের কথা নাকচ করলেও হেফাজত আমীর আল্লামা শফীর জঙ্গি বিরোধী অবস্থানকে লাভ হিসেবেই দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতের যোগাযোগ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় থামছে না। আওয়ামী লীগ শিবিরে নানা ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যদিও দলটির নেতারা যেকোনো ধরনের প্রশ্ন নাকচ করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এখানে অস্বস্তি বোধ করার বিষয় নাই। একটা অংশ ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা সরকারি কাঠামোর বাইরে ছিল। সেটাকে শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে আলোচনা বা মতবিনিময়ের মাধ্যমে কাঠামোর ভেতরে আনলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, দেশের বাস্তবতা মানতে হবে এবং সিংহভাগ মানুষের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মতিয়া চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে আরো বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাবিরোধীদের বাদ দিয়ে সকলকে নিয়েই  চলেছে। আমরাই বলবো, ইনক্লুসিভ সোসাইটি। আবার স্বাধীনতাবিরোধী বিষাক্তদের বাদ দিয়ে যখন সকলকে নিয়ে চলার কথা আসে, তখন বলা হয় আওয়ামী লীগ আপস করছে। আমরা কিছু করলেই প্রশ্ন তোলা হয়। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ চলছে। শুধু যে, আওয়ামী লীগ শিবিরেই চলমান রাজনীতি নিয়ে আলোচনা চলছে তা নয়, হেফাজতের মধ্যেও এ নিয়ে তৈরি হয়েছে অস্বস্তি। বিশেষ করে ৫ই মে’র অভিজ্ঞতা ভুলে সরকারের সঙ্গে ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা তৈরির প্রেক্ষাপটে সংগঠনের অনেকেই ক্ষুব্ধ। যদিও তারা প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। কওমি সনদ কমিটির প্রথম সভায় হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী পুরো বিষয়টিরই একটি ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, কওমি মাদরাসার সনদ নিয়ে বেফাক ও অন্যান্য আঞ্চলিক কওমি বোর্ডসমূহের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন থেকেই আমি চেষ্টা করে আসছি। আর সেই চেষ্টার সুফল হিসেবে গত বছরের ১০ই ডিসে¤॥^র দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসায় বেফাকসহ অপরাপর ছয় বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ দীর্ঘ এক বৈঠকে মিলিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করে। তার সুফল হিসেবেই কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে সরকার নিয়ন্ত্রিত কোনো কমিটি, কমিশন, বিদ্যমান কারিকুলাম পরিবর্তন ও মাদরাসা পরিচালনায় কোনোরূপ সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদের মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ ও এবং আরবি)-এর সমমানের দাবি অর্জিত হয়। আল্লামা শফী বলেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে অনেক আগে থেকেই। এসব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা শতভাগ অক্ষুণ্ন রেখে সকলের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান বজায় রাখার বিষয়টিকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছি সবসময়। তিনি বলেন, পরম করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছায় বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাসমূহ শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনাসহ অন্যান্য সকল বিষয়ে পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। আর এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের ফলেই গত ১১ই এপ্রিল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ স্তর থেকেই উলামায়ে কেরাম সম্মানিত হয়েছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদরাসার গৌরবময় ঐতিহ্য ও ইসলামী শিক্ষার গুরুত্বের কথা স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি দেওবন্দের উলূম ও কওমি স্বকীয়তা শতভাগ অক্ষুণ্ন রেখে আমাদের প্রত্যাশা মতে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স-এর সম্মান দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রীক মূর্তি অপসারণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান, স্বাধীনতা সংগ্রামে কওমি উলামায়ে কেরামের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার উল্লেখসহ ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের বক্তব্য অত্যন্ত মূল্যবান ও প্রশংসনীয় ছিল। পুরো বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে নানা আলোচনা। চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার ফেসবুকে যেমনটা লিখেছেন, কওমি আলেমদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক, প্রীতি, কদমবুচি ও কওমি মাদরাসার পর্যালোচনা করতে শিখুন। অর্থাৎ আদৌ আমরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছি কিনা ভাবুন। তবে সমাজ যে এগিয়েছে সেটা বামপন্থী, কমিউনিস্ট, প্রগতিওয়ালা, মুক্তমনা ও শিবসেনাদের আকাশ বিদারি আহাজারি থেকে বুঝতে হবে। ধর্মবিদ্বেষ আপাতত আহাজারির রূপ নিয়েছে। দারুণ একটা কাজ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! তবে যারা ইতিহাস  থেকে শিক্ষা নিয়ে থাকেন তাদের বোঝা উচিত ১৯৯৬ সালে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দোস্তির ঐতিহাসিক পরিণতি ঘটেছে ফাঁসির দড়িতে। কওমি আলেম-ওলেমা ও রাজনৈতিক নেতাদের বলি। গুড, সবকিছু ভালো, কিন্তু ইতিহাসের ওপর নজর তীক্ষœ রাখুন। ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা মোকাবিলা করবার মতো লায়েক ইসলামপন্থিরা এখনো হতে পারেন নি। ক্ষমতাসীনদের ধূর্ততা ও চতুরতা থেকে আল্লাহ আপনাদের রক্ষা করুক। ইতিহাস বড়ই বিনোদিনী!!!
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মূলত আগামী নির্বাচনে ভোটের হিসাবকে কেন্দ্র করে হেফাজতের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের এক ধরনের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। বিএনপিতেও এ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা প্রতিদিনই এ নিয়ে কথা বলছেন। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দল নয় এবং কোনো নির্বাচনেও তারা অংশ নেয়নি। আগামী নির্বাচনেও অংশ নেবে না। এই পটভূমিতে হেফাজত সমর্থিত ভোট সংখ্যা কত তার পরিষ্কার কোনো হিসাব নেই। এক হিসাবে দেখা যায়, দেশে ১৩ হাজার ৯০২ কওমি মাদরাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই অবশ্য অপ্রাপ্ত বয়স্ক। অর্থাৎ তারা এখনো ভোটার হননি। কিন্তু তাদের পরিবারের ওপর কওমি মাদরাসার একধরনের প্রভাব রয়েছে। তাছাড়া, কওমি থেকে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করাও কয়েক লাখ ভোটার রয়েছেন। মূলত এসব ভোটারদের কথা বিবেচনা করেই সরকার ও বিরোধীমহল হেফাজতকে কাছে রাখার চেষ্টা করছে। তবে শেষ পর্যন্ত হেফাজত কোন্ দিকে নিজেদের অবস্থান বহাল রাখে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অন্তত নির্বাচন পর্যন্ত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরিতে অনেকেই ক্ষুব্ধ : সরকারের শরিক দলগুলোর অস্বস্তি প্রকাশ:ভোটের রাজনীতিতে হেফাজত ফ্যাক্টর নানা আলোচনা বিএনপিতে উদ্বেগ : আওয়ামী লীগ শিবিরে নানা প্রশ্ন

আপলোড টাইম : ০২:৩৯:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

সমীকরণ ডেস্ক: ভোট কি ঘনিয়ে আসছে? হিসাব মোতাবেক নির্বাচন এখনো বেশ দূর। ২০১৮ সালের শেষ অথবা ১৯ সালের শুরুতেই নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে এর আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। চলতি বছর শেষের দিকে অথবা ২০১৮ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন রাজনীতিতে চাপান উতোর চলছে হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে। চার বছর আগে হঠাৎ করেই শক্তি প্রদর্শন করা হেফাজতের সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠতা রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি করেছে। সরকারের শরিক দলগুলো এ নিয়ে প্রকাশ্যেই তাদের অস্বস্তি প্রকাশ করেছে। বুদ্ধিজীবীদের একাংশও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। হেফাজতের সঙ্গে কোনো ধরনের আপসের কথা নাকচ করলেও হেফাজত আমীর আল্লামা শফীর জঙ্গি বিরোধী অবস্থানকে লাভ হিসেবেই দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতের যোগাযোগ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় থামছে না। আওয়ামী লীগ শিবিরে নানা ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যদিও দলটির নেতারা যেকোনো ধরনের প্রশ্ন নাকচ করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এখানে অস্বস্তি বোধ করার বিষয় নাই। একটা অংশ ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা সরকারি কাঠামোর বাইরে ছিল। সেটাকে শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে আলোচনা বা মতবিনিময়ের মাধ্যমে কাঠামোর ভেতরে আনলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, দেশের বাস্তবতা মানতে হবে এবং সিংহভাগ মানুষের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মতিয়া চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে আরো বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাবিরোধীদের বাদ দিয়ে সকলকে নিয়েই  চলেছে। আমরাই বলবো, ইনক্লুসিভ সোসাইটি। আবার স্বাধীনতাবিরোধী বিষাক্তদের বাদ দিয়ে যখন সকলকে নিয়ে চলার কথা আসে, তখন বলা হয় আওয়ামী লীগ আপস করছে। আমরা কিছু করলেই প্রশ্ন তোলা হয়। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ চলছে। শুধু যে, আওয়ামী লীগ শিবিরেই চলমান রাজনীতি নিয়ে আলোচনা চলছে তা নয়, হেফাজতের মধ্যেও এ নিয়ে তৈরি হয়েছে অস্বস্তি। বিশেষ করে ৫ই মে’র অভিজ্ঞতা ভুলে সরকারের সঙ্গে ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা তৈরির প্রেক্ষাপটে সংগঠনের অনেকেই ক্ষুব্ধ। যদিও তারা প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। কওমি সনদ কমিটির প্রথম সভায় হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী পুরো বিষয়টিরই একটি ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, কওমি মাদরাসার সনদ নিয়ে বেফাক ও অন্যান্য আঞ্চলিক কওমি বোর্ডসমূহের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন থেকেই আমি চেষ্টা করে আসছি। আর সেই চেষ্টার সুফল হিসেবে গত বছরের ১০ই ডিসে¤॥^র দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসায় বেফাকসহ অপরাপর ছয় বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ দীর্ঘ এক বৈঠকে মিলিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করে। তার সুফল হিসেবেই কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলূম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে সরকার নিয়ন্ত্রিত কোনো কমিটি, কমিশন, বিদ্যমান কারিকুলাম পরিবর্তন ও মাদরাসা পরিচালনায় কোনোরূপ সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদের মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ ও এবং আরবি)-এর সমমানের দাবি অর্জিত হয়। আল্লামা শফী বলেন, কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে অনেক আগে থেকেই। এসব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা শতভাগ অক্ষুণ্ন রেখে সকলের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান বজায় রাখার বিষয়টিকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছি সবসময়। তিনি বলেন, পরম করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছায় বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাসমূহ শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনাসহ অন্যান্য সকল বিষয়ে পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। আর এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের ফলেই গত ১১ই এপ্রিল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ স্তর থেকেই উলামায়ে কেরাম সম্মানিত হয়েছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদরাসার গৌরবময় ঐতিহ্য ও ইসলামী শিক্ষার গুরুত্বের কথা স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি দেওবন্দের উলূম ও কওমি স্বকীয়তা শতভাগ অক্ষুণ্ন রেখে আমাদের প্রত্যাশা মতে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স-এর সম্মান দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রীক মূর্তি অপসারণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান, স্বাধীনতা সংগ্রামে কওমি উলামায়ে কেরামের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার উল্লেখসহ ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের বক্তব্য অত্যন্ত মূল্যবান ও প্রশংসনীয় ছিল। পুরো বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে নানা আলোচনা। চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার ফেসবুকে যেমনটা লিখেছেন, কওমি আলেমদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক, প্রীতি, কদমবুচি ও কওমি মাদরাসার পর্যালোচনা করতে শিখুন। অর্থাৎ আদৌ আমরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছি কিনা ভাবুন। তবে সমাজ যে এগিয়েছে সেটা বামপন্থী, কমিউনিস্ট, প্রগতিওয়ালা, মুক্তমনা ও শিবসেনাদের আকাশ বিদারি আহাজারি থেকে বুঝতে হবে। ধর্মবিদ্বেষ আপাতত আহাজারির রূপ নিয়েছে। দারুণ একটা কাজ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! তবে যারা ইতিহাস  থেকে শিক্ষা নিয়ে থাকেন তাদের বোঝা উচিত ১৯৯৬ সালে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দোস্তির ঐতিহাসিক পরিণতি ঘটেছে ফাঁসির দড়িতে। কওমি আলেম-ওলেমা ও রাজনৈতিক নেতাদের বলি। গুড, সবকিছু ভালো, কিন্তু ইতিহাসের ওপর নজর তীক্ষœ রাখুন। ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা মোকাবিলা করবার মতো লায়েক ইসলামপন্থিরা এখনো হতে পারেন নি। ক্ষমতাসীনদের ধূর্ততা ও চতুরতা থেকে আল্লাহ আপনাদের রক্ষা করুক। ইতিহাস বড়ই বিনোদিনী!!!
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মূলত আগামী নির্বাচনে ভোটের হিসাবকে কেন্দ্র করে হেফাজতের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের এক ধরনের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। বিএনপিতেও এ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা প্রতিদিনই এ নিয়ে কথা বলছেন। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক দল নয় এবং কোনো নির্বাচনেও তারা অংশ নেয়নি। আগামী নির্বাচনেও অংশ নেবে না। এই পটভূমিতে হেফাজত সমর্থিত ভোট সংখ্যা কত তার পরিষ্কার কোনো হিসাব নেই। এক হিসাবে দেখা যায়, দেশে ১৩ হাজার ৯০২ কওমি মাদরাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই অবশ্য অপ্রাপ্ত বয়স্ক। অর্থাৎ তারা এখনো ভোটার হননি। কিন্তু তাদের পরিবারের ওপর কওমি মাদরাসার একধরনের প্রভাব রয়েছে। তাছাড়া, কওমি থেকে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করাও কয়েক লাখ ভোটার রয়েছেন। মূলত এসব ভোটারদের কথা বিবেচনা করেই সরকার ও বিরোধীমহল হেফাজতকে কাছে রাখার চেষ্টা করছে। তবে শেষ পর্যন্ত হেফাজত কোন্ দিকে নিজেদের অবস্থান বহাল রাখে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অন্তত নির্বাচন পর্যন্ত।