ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সজিব হত্যার নেপথ্যে সজিবের ইঞ্জিয়ার হওয়ার স্বপ্নই হলো দুঃস্বপ্ন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২২:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • / ৩৬৭ বার পড়া হয়েছে

cwtwfgবিশেষ প্রতিবেদক: সজিবের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নই হলো দুঃস্বপ্ন। তাই বড় ভাইয়ের মত যাকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসন দিয়েছিল, সেই শাকিলই সজিবকে অপহরণ করে এবং ২০ লাখ টাকা মুুুুুক্তিপণ না পেয়ে তাকে হত্যার পর তার লাশ গুম করে। শাকিলের মা সজিবদের বাড়ীতে গৃহকর্মীর কাজ করতো, সেই সুবাদে সজিবদের বাড়ীতে শাকিলের ছিলো অবাধ যাতায়াত। বেশির ভাগ সময় থাকতোও সেখানে। টুকটাক ফাইফরমায়েস খাটতো। এভাবেই সজিবের সাথে শাকিলের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উভয়ের বয়সের পার্থক্য দশ বছরের হলেও শাকিলের সাথে সজিবের দারুন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
শাকিল ও সজিব আপন ভাইয়ের মত চলাফেরা করতো। দুজনে এক থালায় খেয়েছে এবং এক বিছানায় বহুদিন ঘুমিয়েছে। সজিবের মা শাকিলকে নিজের ছেলের মত ভালোবাসতেন। শাকিল বেশ চতুর এবং বুদ্ধিতেও সে বেশ পাকা। সে কারণে-অকারণে মাঝেমধ্যেই কোথায় যেন উধাও হয়ে যেত। বাড়ীতে শোনাতো সে ঢাকায় গার্র্মেন্টেসে কাজ করছে। আবার দামুড়হুদায় থাকাকালীন বেকার ঘুরে বেড়াতো। তবে, যেখানেই যাক ঘুরে ফিরে সজিবদের বাড়ীই ছিল তার ভাতবাড়ী।
বছর দুই আগে শাকিল চুয়াডাঙ্গা সিএন্ডবিপাড়ায় রাকিবুলের লাইট কারখানায় লাইট তৈরীর কাজ করতে আসে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে শাকিল সজিবের সাথে লাইট তৈরীর কলা কৌশল নিয়ে নানা আলোচনা করতো। লাইট তৈরী ও লাইট জ্বালানো এসব বিষয়ে সজিবের আগ্রহ ক্রমশই বাড়তে থাকে, সে চুয়াডাঙ্গায় স্কুল শেষে শাকিলের সাথে চুয়াডাঙ্গার সিএন্ডবি পাড়ায় (যেখানে সজিবের লাশ পাওয়া যায়) রাকিবুলের লাইট তৈরীর কারখানাতেও বেশ কয়েকবার এসেছিল ।
শাকিলের সাথে অতি ঘনিষ্ঠতার এক পর্যায়ে সজিব স্বপ্ন দেখেছিল সে একজন বড় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হবে। শাকিল চুয়াডাঙ্গা থেকে বাড়ী ফিরলেই সজিব লাইট- তার-বাল্ব নিয়ে দুজনে ব্যস্ত সময় পার করতো। আর এই ইঞ্জিয়ার হওয়ার স্বপ্ন জাগায় ঘাতক শাকিল, যাকে সজিব বড় ভায়ের মত শ্রদ্ধা করতো।
সেদিন ছিল ২৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটা। সজিব তার মাকে বলে মা, উপজেলা চত্বরে বৃক্ষ মেলা হচ্ছে দেখতে গেলাম। এই বলে সজিব মেলার মাঠে আসে এবং ঘুরে বেড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে সে যখন নাগরদোলায় ওঠার জন্য অপেক্ষা করছে, সে সময় শাকিল সজিবকে ডাক দেয়। এমন দৃশ্য দেখে সজিবের সমবয়সী বন্ধুরা, এও বলতে শোনে শাকিল ভাই তুমি যেখানে যাচ্ছো যাও, আমি আজ যাবনা, নাগরদোলায় চড়বো। এ কথা শোনার পর শাকিল সজিবের হাত ধরে জোর করে টেনে নিয়ে যায়। তারপরে সজিব ও শাকিল মেলার মাঠে রাত প্রায় পোনে নয়টা পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে।
রাত বেশী হওয়ায় সজিবের মা সজিবের ফোনে ফোন করেন। ফোন বাজলেও সজিব ফোন ধরে না। এরপর আবার ফোন দিলে সজিবের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় রাত নয়টার দিকে সজিবের মামা আব্দুল হালিম সজিবকে খোঁজার জন্য মেলার মাঠে আসেন। মেলার মাঠে এসে শুনতে পান সজিব যখন নাগরদোলায় ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিল, তখন শাকিল তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। সে রাতে আর সজিবকে না পেয়ে সজিবের পরিবারে দুঃচিন্তা বেড়ে যায়। সজিব ফিরে না আসায় রাতেই দামুড়হুদা থানায় মেলার মাঠের বর্ণনা দিয়ে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন সজিবের মামা আব্দুল হালিম।
দামুড়হুদা থানা পুলিশ ঐ রাতেই শাকিলকে আটক করে, কিন্তু শাকিল কোনোরকম স্বীকারোক্তি দেয় না সজিব কোথায় আছে। থানা পুলিশ শাকিলকে দুদিন থানা হাজতে রেখে ছেড়ে দেয়। শাকিল ছাড়া পাওয়ার পর সজিব উদ্ধারের বিষয়টি ক্ষিণ হয়ে যায়। ভেঙে পড়ে সজিবের মা। তবে, সন্দেহের তীর রাখে শাকিলের দিকে।
সে অনুসারে হালিম দামুড়হুদা থানায় সজিব উদ্ধারের জিডির কপি ঝিনাইদহ র‌্যাব-৬ এর মেজর মনিরের কাছে দিয়ে বলেন, তার ভাগ্নে সজিব অপহরণের শিকার হয়েছে। তাকে উদ্ধারের আবেদন জানান। শুরু হয় র‌্যাবের তৎপরতা। চলবে….

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সজিব হত্যার নেপথ্যে সজিবের ইঞ্জিয়ার হওয়ার স্বপ্নই হলো দুঃস্বপ্ন

আপলোড টাইম : ১০:২২:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

cwtwfgবিশেষ প্রতিবেদক: সজিবের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নই হলো দুঃস্বপ্ন। তাই বড় ভাইয়ের মত যাকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসন দিয়েছিল, সেই শাকিলই সজিবকে অপহরণ করে এবং ২০ লাখ টাকা মুুুুুক্তিপণ না পেয়ে তাকে হত্যার পর তার লাশ গুম করে। শাকিলের মা সজিবদের বাড়ীতে গৃহকর্মীর কাজ করতো, সেই সুবাদে সজিবদের বাড়ীতে শাকিলের ছিলো অবাধ যাতায়াত। বেশির ভাগ সময় থাকতোও সেখানে। টুকটাক ফাইফরমায়েস খাটতো। এভাবেই সজিবের সাথে শাকিলের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উভয়ের বয়সের পার্থক্য দশ বছরের হলেও শাকিলের সাথে সজিবের দারুন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
শাকিল ও সজিব আপন ভাইয়ের মত চলাফেরা করতো। দুজনে এক থালায় খেয়েছে এবং এক বিছানায় বহুদিন ঘুমিয়েছে। সজিবের মা শাকিলকে নিজের ছেলের মত ভালোবাসতেন। শাকিল বেশ চতুর এবং বুদ্ধিতেও সে বেশ পাকা। সে কারণে-অকারণে মাঝেমধ্যেই কোথায় যেন উধাও হয়ে যেত। বাড়ীতে শোনাতো সে ঢাকায় গার্র্মেন্টেসে কাজ করছে। আবার দামুড়হুদায় থাকাকালীন বেকার ঘুরে বেড়াতো। তবে, যেখানেই যাক ঘুরে ফিরে সজিবদের বাড়ীই ছিল তার ভাতবাড়ী।
বছর দুই আগে শাকিল চুয়াডাঙ্গা সিএন্ডবিপাড়ায় রাকিবুলের লাইট কারখানায় লাইট তৈরীর কাজ করতে আসে। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে শাকিল সজিবের সাথে লাইট তৈরীর কলা কৌশল নিয়ে নানা আলোচনা করতো। লাইট তৈরী ও লাইট জ্বালানো এসব বিষয়ে সজিবের আগ্রহ ক্রমশই বাড়তে থাকে, সে চুয়াডাঙ্গায় স্কুল শেষে শাকিলের সাথে চুয়াডাঙ্গার সিএন্ডবি পাড়ায় (যেখানে সজিবের লাশ পাওয়া যায়) রাকিবুলের লাইট তৈরীর কারখানাতেও বেশ কয়েকবার এসেছিল ।
শাকিলের সাথে অতি ঘনিষ্ঠতার এক পর্যায়ে সজিব স্বপ্ন দেখেছিল সে একজন বড় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হবে। শাকিল চুয়াডাঙ্গা থেকে বাড়ী ফিরলেই সজিব লাইট- তার-বাল্ব নিয়ে দুজনে ব্যস্ত সময় পার করতো। আর এই ইঞ্জিয়ার হওয়ার স্বপ্ন জাগায় ঘাতক শাকিল, যাকে সজিব বড় ভায়ের মত শ্রদ্ধা করতো।
সেদিন ছিল ২৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটা। সজিব তার মাকে বলে মা, উপজেলা চত্বরে বৃক্ষ মেলা হচ্ছে দেখতে গেলাম। এই বলে সজিব মেলার মাঠে আসে এবং ঘুরে বেড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে সে যখন নাগরদোলায় ওঠার জন্য অপেক্ষা করছে, সে সময় শাকিল সজিবকে ডাক দেয়। এমন দৃশ্য দেখে সজিবের সমবয়সী বন্ধুরা, এও বলতে শোনে শাকিল ভাই তুমি যেখানে যাচ্ছো যাও, আমি আজ যাবনা, নাগরদোলায় চড়বো। এ কথা শোনার পর শাকিল সজিবের হাত ধরে জোর করে টেনে নিয়ে যায়। তারপরে সজিব ও শাকিল মেলার মাঠে রাত প্রায় পোনে নয়টা পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে।
রাত বেশী হওয়ায় সজিবের মা সজিবের ফোনে ফোন করেন। ফোন বাজলেও সজিব ফোন ধরে না। এরপর আবার ফোন দিলে সজিবের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় রাত নয়টার দিকে সজিবের মামা আব্দুল হালিম সজিবকে খোঁজার জন্য মেলার মাঠে আসেন। মেলার মাঠে এসে শুনতে পান সজিব যখন নাগরদোলায় ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিল, তখন শাকিল তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। সে রাতে আর সজিবকে না পেয়ে সজিবের পরিবারে দুঃচিন্তা বেড়ে যায়। সজিব ফিরে না আসায় রাতেই দামুড়হুদা থানায় মেলার মাঠের বর্ণনা দিয়ে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন সজিবের মামা আব্দুল হালিম।
দামুড়হুদা থানা পুলিশ ঐ রাতেই শাকিলকে আটক করে, কিন্তু শাকিল কোনোরকম স্বীকারোক্তি দেয় না সজিব কোথায় আছে। থানা পুলিশ শাকিলকে দুদিন থানা হাজতে রেখে ছেড়ে দেয়। শাকিল ছাড়া পাওয়ার পর সজিব উদ্ধারের বিষয়টি ক্ষিণ হয়ে যায়। ভেঙে পড়ে সজিবের মা। তবে, সন্দেহের তীর রাখে শাকিলের দিকে।
সে অনুসারে হালিম দামুড়হুদা থানায় সজিব উদ্ধারের জিডির কপি ঝিনাইদহ র‌্যাব-৬ এর মেজর মনিরের কাছে দিয়ে বলেন, তার ভাগ্নে সজিব অপহরণের শিকার হয়েছে। তাকে উদ্ধারের আবেদন জানান। শুরু হয় র‌্যাবের তৎপরতা। চলবে….