ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সংসদে উত্তাপ ছড়ালেন বিএনপির এমপিরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০১৯
  • / ২৪৮ বার পড়া হয়েছে

চাঁদ দেখা, সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ হট্টগোল
সমীকরণ প্রতিবেদন:
একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনেই উত্তাপ ছড়িয়েছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। চলতি সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে তাঁরা মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে ঈদের আগে চাঁদ দেখা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। এসব বক্তব্যে সংসদ অধিবেশনে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি দলের সদস্যরা হট্টগোল শুরু করেন। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে বিএনপি এমপিদের মাইক বন্ধ করে দেন স্পিকার। গতকাল মঙ্গলবার রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলা অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সুযোগ নিয়ে উত্তাপ ছড়ান বিএনপির সদস্যরা। ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রাট ও সমালোচনার একপর্যায়ে বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। চাঁদ দেখা ইস্যুতে বিএনপি সদস্যদের বক্তব্য সমর্থন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা। এরপর বিএনপির অন্য সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে সরকারি দলের সদস্যরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং হট্টগোল শুরু করেন।
সর্বশেষ আলোচনার সুযোগ নিয়ে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, বিএনপির একজন সংসদ সদস্য নিজে শপথ নিয়ে বর্তমান সংসদ যে বৈধ, তাঁর প্রমাণ দিয়েছেন। আবার অধিবেশনে সংসদকে অবৈধ বলে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে অপমাণিত করেছেন, ভোটারদের অবমাননা করেছেন। তিনি বিএনপির রুমিন ফারহানার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান। ওই সময় স্পিকার কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সংসদকে অবৈধ বলা অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করে দেন। এর আগে বিএনপির হারুন অর রশিদ ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রাটের সমালোচনা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে ইসলাম। ঈদের চাঁদ দেখা কমিটি রয়েছে। চাঁদ দেখা যায় সন্ধ্যার সময়। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী প্রথমে ঘোষণা দিলেন, কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ হবে না। আবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ করেই বলা হলো, চাঁদ দেখা গেছে, কাল ঈদ। এ নিয়ে জনমনে মারাত্মক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। আর ধর্ম যার যার, উৎসব সবার এ কথা যাঁরা বলেন তাঁদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে।’ তিনি চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রাটের জন্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।
সর্বশেষ ফ্লোর নিয়ে সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপির একমাত্র সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বর্তমান সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। টিআইবিসহ সবাই বলেছে এ সংসদ জনগণের ভোটে হয়নি। তাই খুশি হব এই সংসদের মেয়াদ যেন এক দিনও না বাড়ে।’ তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। তাঁকে রাজনৈতিক কারণে জামিন দেওয়া হচ্ছে না।’ বর্তমান সংসদকে অবৈধ বলায় তিনি সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েন। এর আগে জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ৯০ শতাংশেরও বেশি ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ, তবুও বিক্রি হচ্ছে। আর চাঁদ দেখা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের তড়িঘড়ি করা উচিত হয়নি। জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে দেশে মদ-জুয়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই-শায়খ আবদুর রহমানদের তৎপরতা বিএনপি আমলে দেশবাসী দেখেছে। কিন্তু ঈদে চাঁদ দেখানো নিয়ে জনগণকে ভোগান্তি দেওয়া হয়েছে। আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বালিশের দাম নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় চলছে।
সরকারি দলের পংকজ দেবনাথ বলেন, জনমতের চাপে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন-লুটপাটের কারণেই এই ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছিল। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এ সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ছিল দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র। এখন দেখতে পাচ্ছি কিছুই হচ্ছে না। ব্যাংক থেকে অনেক টাকা গায়েব হয়ে গেছে। এত টাকা গেল কোথায়?’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সংসদে উত্তাপ ছড়ালেন বিএনপির এমপিরা

আপলোড টাইম : ০৯:৩৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০১৯

চাঁদ দেখা, সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ হট্টগোল
সমীকরণ প্রতিবেদন:
একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনেই উত্তাপ ছড়িয়েছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। চলতি সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে তাঁরা মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে ঈদের আগে চাঁদ দেখা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। এসব বক্তব্যে সংসদ অধিবেশনে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি দলের সদস্যরা হট্টগোল শুরু করেন। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে বিএনপি এমপিদের মাইক বন্ধ করে দেন স্পিকার। গতকাল মঙ্গলবার রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলা অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সুযোগ নিয়ে উত্তাপ ছড়ান বিএনপির সদস্যরা। ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রাট ও সমালোচনার একপর্যায়ে বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। চাঁদ দেখা ইস্যুতে বিএনপি সদস্যদের বক্তব্য সমর্থন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা। এরপর বিএনপির অন্য সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে সরকারি দলের সদস্যরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং হট্টগোল শুরু করেন।
সর্বশেষ আলোচনার সুযোগ নিয়ে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, বিএনপির একজন সংসদ সদস্য নিজে শপথ নিয়ে বর্তমান সংসদ যে বৈধ, তাঁর প্রমাণ দিয়েছেন। আবার অধিবেশনে সংসদকে অবৈধ বলে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে অপমাণিত করেছেন, ভোটারদের অবমাননা করেছেন। তিনি বিএনপির রুমিন ফারহানার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান। ওই সময় স্পিকার কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সংসদকে অবৈধ বলা অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করে দেন। এর আগে বিএনপির হারুন অর রশিদ ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রাটের সমালোচনা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে ইসলাম। ঈদের চাঁদ দেখা কমিটি রয়েছে। চাঁদ দেখা যায় সন্ধ্যার সময়। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী প্রথমে ঘোষণা দিলেন, কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ হবে না। আবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ করেই বলা হলো, চাঁদ দেখা গেছে, কাল ঈদ। এ নিয়ে জনমনে মারাত্মক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। আর ধর্ম যার যার, উৎসব সবার এ কথা যাঁরা বলেন তাঁদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে।’ তিনি চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রাটের জন্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন।
সর্বশেষ ফ্লোর নিয়ে সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপির একমাত্র সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বর্তমান সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। টিআইবিসহ সবাই বলেছে এ সংসদ জনগণের ভোটে হয়নি। তাই খুশি হব এই সংসদের মেয়াদ যেন এক দিনও না বাড়ে।’ তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। তাঁকে রাজনৈতিক কারণে জামিন দেওয়া হচ্ছে না।’ বর্তমান সংসদকে অবৈধ বলায় তিনি সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েন। এর আগে জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ৯০ শতাংশেরও বেশি ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ, তবুও বিক্রি হচ্ছে। আর চাঁদ দেখা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের তড়িঘড়ি করা উচিত হয়নি। জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে দেশে মদ-জুয়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই-শায়খ আবদুর রহমানদের তৎপরতা বিএনপি আমলে দেশবাসী দেখেছে। কিন্তু ঈদে চাঁদ দেখানো নিয়ে জনগণকে ভোগান্তি দেওয়া হয়েছে। আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বালিশের দাম নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় চলছে।
সরকারি দলের পংকজ দেবনাথ বলেন, জনমতের চাপে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন-লুটপাটের কারণেই এই ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি হয়েছিল। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এ সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ছিল দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র। এখন দেখতে পাচ্ছি কিছুই হচ্ছে না। ব্যাংক থেকে অনেক টাকা গায়েব হয়ে গেছে। এত টাকা গেল কোথায়?’